নরমে-গরমে মোকাবিলা কামতাপুরের
পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবির মোকাবিলা নরমে-গরমেই করবে রাজ্য সরকার। সোমবার জলপাইগুড়ির কামরাঙাগুড়িতে উত্তরবঙ্গের নিজস্ব সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’র উদ্বোধন করতে গিয়ে সে কথাই স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দেন, রাজবংশী সম্প্রদায়ের দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে রাজ্য সরকার সব রকম চেষ্টা করছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি কোচবিহারে মনীষী পঞ্চানন বর্মার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজবংশী অ্যাকাডেমি চালু করা ও রাজবংশী ভাষাকে পৃথক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে তার উল্লেখ করেছেন। সভা-মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণাও করেন, পঞ্চানন বর্মার জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সারা বছর জুড়ে রাজ্য সরকার নানা অনুষ্ঠান করবে।
তবে সেই সঙ্গেই কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “বোমা মেরে, গুলি করে নিরীহ মানুষদের খুন করাটা বরদাস্ত করা হবে না। সব রকম ভাবে গুন্ডামির মোকাবিলা করা হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গুন্ডামির প্রতিরোধ করা হবে।” এর পরেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্মের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, “কাঁধে বন্দুক নিয়ে ভুল পথে চালিত না হয়ে উন্নয়নের কাজে সামিল হন।” তাঁর সংযোজন, “আমরা ভাগাভাগি, হিংসা, বিভেদ, গুন্ডামি চাই না। আমরা চাই, উন্নয়ন। আর যাঁরা তা চান না, তাঁরা চুপ করে বসে থাকুন। ‘এটা চাই-ওটা চাই’ বলে বোমা মেরে লোক খুন করা কোনও ভাবেই মেনে নেব না। যাঁরা তা করবেন, তাঁরা মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।”
জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণে নিহতদের
পরিজনদের সান্ত্বনা মুখ্যমন্ত্রীর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
এ প্রসঙ্গে কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) সভাপতি অতুল রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলে, তা স্বাগত। তবে দেখতে হবে রাজবংশী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা কেন বন্দুক ধরে অন্য পথে যাচ্ছেন? উন্নয়ন তো করতেই হবে। পাশাপাশি, রাজবংশী জাতিসত্তার আবেগকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আর রাজবংশীর সঙ্গে কামতাপুরী ভাষা কথাটিকেও এক বন্ধনীতে রাখতে হবে। সে ভাষা যেন রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের স্বীকৃতি পায়, তা-ও রাজ্যকে দেখতে হবে।”
যে এলাকায় ‘উত্তরকন্যা’ গড়ে উঠেছে, সেই কামরাঙাগুড়ি এলাকাটি মূলত রাজবংশী সম্প্রদায় অধ্যুষিত। জঙ্গলমহলে গেলে তিনি যেমন নাম না করে মাওবাদীদের বিরোধিতায় জনতাকে পাশে চান, এ দিন প্রায় একই কায়দায় কেএলও-র উল্লেখ না করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাড়া চান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বন্দুক-বোমা নিয়ে গুন্ডামি দেখলে আপনারা রুখে দাঁড়াবেন তো?” জনতার জবাব, “দাঁড়াব।” মুখ্যমন্ত্রীর জিজ্ঞাসা, “ভয় পাবেন না তো?” এ বার জবাব, “ভয় পাব না। ধিক্কার জানাব।”
অনুষ্ঠান মঞ্চে এ দিন রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে ব্রাত্য বসু, আবদুল করিম চৌধুরী, শঙ্কর চক্রবর্তী, সাবিত্রী মিত্র, বিনয় বর্মন, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, গৌতম দেব উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন একাধিক পরিষদীয় সচিবও। মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ একাধিক শীর্ষ অফিসারও ছিলেন। মঞ্চ থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর পাহাড়পুরের বজরাপাড়ার কেএলও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ছ’জনের পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা করে চেক এবং পরিবারের এক জনকে পুলিশের হোমগার্ডে চাকরির নিয়োগপত্র দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, আহতদেরও আর্থিক সাহায্য দেন। সরকারি সাহায্য নিতে গিয়ে নিহতদের পরিবারের অনেক সদস্যই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরে মুখ্যমন্ত্রী যান শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা করতে। মঞ্চ থেকে ছ’জেলার ক্লাব, ছাত্রছাত্রী, বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ২ কোটি টাকা বিলি করেন। উৎসব-মঞ্চ থেকে সাত জনকে বঙ্গরত্ন সম্মান দেওয়া হয়েছে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.