উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে ৬ জেলার বিভিন্ন ক্লাব, ছাত্রছাত্রী, বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ২ কোটি টাকা বিলি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উৎসবের উদ্বোধন করে ওই টাকা প্রাপকদের মধ্যে বিলি করেন তিনি। প্রত্যেক ক্ষেত্রে কয়েকজনকে মঞ্চে তুলে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে তাঁদের চেক দেওয়া হয়। বাকিরা এ দিন অনুষ্ঠান মাঠে শিবির থেকে তাদের চেক সংগ্রহ করে নেন।
উত্তরবঙ্গ উৎসব কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত তিন বছর ধরে উৎসব হচ্ছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বছর ৩ কোটি টাকা করে খরচ করা হয়েছে উৎসবের আয়োজন এবং বিভিন্ন ক্লাব, ছাত্রছাত্রী, বাসিন্দাদের আর্থিক সাহায্য করতে। এ বছরও উৎসবে খরচের বাজেট ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৭ জনকে বঙ্গরত্ন সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকে পেয়েছেন ১ লক্ষ টাকা করে। |
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য সরকারে টাকা খরচের এই বহর নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “তাঁরা ভোটে জিনেছেন বলে সরকারি টাকা এ ভাবে খরচ করবেন এটা হয় না।ক্লাবগুলিকে তারা খেলাধুলোর সরঞ্জাম কিনে দিন তা না দিয়ে ক্লাবগুলিকে টাকা দিচ্ছেন কীসের স্বার্থে? তারা ক্লাবগুলিতে নিজেদের দলের লোক তৈরি করতেচাইছেন। তা ছাড়া প্রথম বছর উৎসবে যে খরচ হয়েছে এ বার তার তুলনায় অনেক বেশি খরচ। কেন না রাস্তায়-রাস্তায় হোর্ডিং ব্যানার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। এত ছবি তাঁর লাগাতে হবে কেন। তাঁর কাছে কী এটা দৃষ্টিকটূ মনে হচ্ছে না?” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবু পাল্টা বলেন, “গত ৩৪ বছরে ওঁরা যা করতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছরে তা করে দেখাচ্ছেন। এই উন্নয়ন জোয়ার দেখে বাসিন্দারাই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তাতে ঈর্ষায় জ্বলছেন হাতে গোনা কয়েকজন। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে জানানো হয়েছে, উৎসবের অঙ্গ হিসাবে মেলার আয়োজন করা হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম লাগোয়া মেলার মাঠে সেই আয়োজন হয়। মেলায় স্টলগুলি থেকে সে ক্ষেত্রে আয় হয়। উত্তরবঙ্গ উৎসবের আয়োজনে খরচ সেই টাকা থেকেই মূলত হয়। গত দুই বছর ৪৫ এবং ৪৪ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। এ বছর ৪২ লক্ষ টাকার মতো আয় হওয়ার কথা। |
সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৫৫ টি ক্লাবকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হল। মঞ্চে জলপাইগুড়ির নেতাজি মর্ডান ক্লাব, কোচবিহারের ইয়ং ক্লাবের কর্মকর্তাদের হাতে চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর যে ১০০ টি ক্লাব টাকা পেয়েছিল তাদের এ বছর ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। যারা গত বছর টাকার খরচের হিসাব এখন পর্যন্ত দেখাতে পেরেছেন তাদের এ দিন চেক তুলে দেওয়ায় হয়। বাকিরা খরচের হিসেব দেখিয়ে টাকা পেয়ে যাবেন। ক্লাবগুলিকেই মোট ১ কোটি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
ক্লাবগুলি ছাড়া এ দিন জলপাইগুড়ির বিশ্বজিৎ দে সরকার, কোচবিহারের সোমেন সাহা, দক্ষিণ দিনাজপুরের রমা বর্মনদের মতো ছাত্রছাত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ১০ হাজার টাকার চেক নেন। মোট ১৩৯ জন মেধাবী পড়ুয়া ওই আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে খরচ ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। নিজভূমি নিজগৃহ প্রকল্পে এ দিন ১৯৬ জনকে ওই সুযোগ দেওয়ার কথা জানানো হয়। প্রকল্পে ৪৫ হাজার টাকা করে প্রত্যেকের মেলার কথা। তবে তাঁরা আপাতত সাড়ে ২২ হাজার টাকা করে পেলেন। ওই টাকা খরচের হিসাব দেখালে বাকি টাকা পেয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে ২০০ জনকে কিসান ক্রেডিট কার্ড, ৪ জনকে সেচের বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধা দেওয়ার কথা জানানো হয়। মৎস্য যান পেয়েছেন ১ জন। অনেককে সংখ্যা লঘু ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
|
সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
|
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন উৎসবের খরচ
• ২০১২ প্রায় ৩ কোটি টাকা
ছয় জেলার ১০০ ক্লাবকে ৫০০০০ টাকা করে, ছাত্রছাত্রীদের অনুদান নিয়ে খরচ ২ কোটি ৩০ লক্ষ উৎসবের আয়োজনে প্রায় ৭০ লক্ষ
• ২০১৩ প্রায় ৩ কোটি টাকা
৬ জেলার ১০০টি ক্লাবকে ৫০০০০ টাকা করে। পুরনো ১০০টি ক্লাবকে (যারা আগের বছর টাকা পেয়েছে) ২৫ হাজার টাকা করে। মেধাবী ১০০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে। উচ্চ শিক্ষার ৩৫ জনকে ল্যাপটপএ সব খাতে খরচ ২ কোটি ১৭ লক্ষ। উৎসবের আয়োজনে অন্তত ৭০ লক্ষ। |
২০১৪ |
বঙ্গরত্ন পেলেন ৭ জন
(প্রত্যেকে পেলেন ১ লক্ষ টাকা, শাল ও মানপত্র)
প্রদ্যোত ঘোষ (শিক্ষাবিদ)
সন্দীপ চক্রবর্তী (বিজ্ঞানী)
মহম্মদ জহিরুদ্দীন মিয়াঁ (চারণকবি)
সত্যরঞ্জন দাস (সাহিত্যিক)
কৃষ্ণ সিংহ মোক্তান (প্রাক্তন আইজি, কারা)
ধনেশ্বর রায় (লোকশিল্পী)
প্রণব মুখোপাধ্যায় (সাহিত্যিক)
৬ জেলার ১৫৫টি ক্লাব ৫০ হাজার টাকা করে পুরনো ১০০টি ক্লাব ২৫ হাজার টাকা করে
মেধাবী-ছাত্রছাত্রী ১৩৯ জন ১০ হাজার টাকা করে।
নিজভূমি নিজগৃহ- ১৯৬ জন। ৪৫ হাজার টাকা করে।
কিসান ক্রেডিট কার্ড ২০০ জনকে।
মোট পাট্টা প্রাপক: ৪০১ জন
মাটিগাড়া ব্লক- ৫০ টা।
নকশালবাড়ি- ৪৬ টা।
খড়িবাড়ি ব্লক- ৫০ টা।
ফাঁসিদেওয়া ব্লক- ২৫৫টা।
মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১৩৯ জন (প্রত্যেকে পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা করে)
কোচবিহার- ১৫
জলপাইগুড়ি- ১৫
শিলিগুড়ি- ২৮
দার্জিলিং- ২০
উত্তর দিনাজপুর- ১৬
দক্ষিণ দিনাজপুর- ১৫
মালদহ- ৩০ |
* (সরকারি সূত্রে পাওয়া তথ্য) |
|