কংগ্রেসে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর পুরনো দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রাক্তন সাংসদ সোমেন মিত্র। সারদা-কাণ্ডে সন্দেহ নিরসন করতে রাজ্য সরকার কেন সিবিআই তদন্ত করাতে রাজি হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলেছেন সোমেনবাবু। ‘চিট ফান্ড ভুক্তভোগী’দের যে মঞ্চ থেকে বুধবার সোমেনবাবু ওই সওয়াল করেছেন, সেখানে ছিলেন সিপিএম-সহ ফ্রন্টের শরিক দলের নেতারাও। ফলে, লোকসভা ভোটের আগে আবার কংগ্রেস-সিপিএম সখ্যের অভিযোগ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে তৃণমূল।
সারদা-কাণ্ডে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত-সহ ৭ দফা দাবি নিয়ে এ দিন শিয়ালদহের নেতাজি ইনস্টিটিউটে ওই ভুক্তভোগী ফোরামের কনভেনশনে একই সঙ্গে আমন্ত্রিত ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেসের সোমেনবাবু। বুদ্ধবাবু আসেননি। তবে আমানতকারীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তিনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। মঞ্চের উদ্যোক্তা হিসাবে অসীম চট্টোপাধ্যায়, সুনন্দ সান্যাল, সমীর পূততুণ্ড, সুজন চক্রবর্তীরা ছিলেন। তৃণমূলে থাকাকালীনই বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি যে প্রধানমন্ত্রী ও সেবি-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে একাধিক চিঠি দিয়েছিলেন, লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন, সে সব তথ্য উল্লেখ করেই এ দিনের কনভেনশনে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সোমেনবাবু।
সদ্যপ্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে না-পারলে বাংলায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে, এ কথা তিনি আগেই বলেছিলেন। সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে ৫৭ জন আমানতকারী ও এজেন্ট আত্মহত্যা করেছেন। সোমেন বলেন, “যাঁরা মারা গিয়েছেন, দুঃখজনক হলেও তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন! যাঁরা সঞ্চয় খুইয়ে জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছেন, তাঁদের বিচার কে দেবে?” সিবিআই তদন্ত চেয়ে তিনি বলেন, “ভিখারি পাসোয়ান বা ছোট আঙারিয়া এক জনকে নিয়ে বা অনেককে নিয়ে, আগে যে কোনও ঘটনায় সিবিআইয়ে অবিচল আস্থা ছিল! বাংলার মসনদে এখন যিনি আছেন, বাংলার মানুষের কাছে তিনি সততার প্রতীক। সেই প্রতীকের দিকেই মানুষ যখন অভিযোগের আঙুল তুলছে, সন্দেহ নিরসন করতে সিবিআই তদন্ত করাচ্ছেন না কেন? রামায়ণে সীতাকেও তো অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল!”
প্রাক্তন সাংসদের তোপের জবাবে তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া, “বাম আর কংগ্রেস আগে একসঙ্গেই ছিল। সেই জন্য ঐতিহাসিক প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূল কংগ্রেস গড়তে হয়েছিল। এখন আবার একই জিনিস দেখা যাচ্ছে!” পাশাপাশিই, মুকুলবাবুর কটাক্ষ, “বাংলার মানুষ আমাদের পক্ষে। ওঁরা আগে একটা নির্বাচন জিতে আসুন, তার পরে এ সব কথার প্রতিক্রিয়া দেব!” শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁর ৮ বার জয়ের মধ্যে এক বারও যে সিপিএমকে হারাতে হয়নি, সেই তথ্যও সোমেনবাবুকে কটাক্ষ করার জন্য উল্লেখ করছেন তৃণমূল নেতারা! প্রসঙ্গত, শিয়ালদহ কেন্দ্রে লড়ত বাম শরিক সিপিআই।
বস্তুত, গ্রেফতার হওয়ার আগে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন প্রায় সেখান থেকেই শুরু করেছেন সোমেনবাবু! সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন গা-ঢাকা দেওয়ার আগে কলকাতায় কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, সুদীপ্তবাবুর স্ত্রীর হদিশ সেই কেন কুণালের মতোই সব প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসে-ফেরত বর্ষীয়ান নেতা। বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি চোর? কুণাল চোর? সেই কুণালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি তাকে গ্রেফতার করা যায়, তার নাম-করা লোকগুলিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?” কনভেনশনে প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, সারদা-কাণ্ডে গঠিত কমিশন দোষীদের শাস্তি বা টাকা ফেরানোর কোনও ব্যবস্থাই করতে পারবে না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজনবাবু মন্তব্য করেন, “এটা সামাজিক আন্দোলন। ন্যায়-বিচারের দাবিতে শাসক দলের নেতাদেরও এত দিনে উচিত ছিল, এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ানো!”
তবে গোটা অনুষ্ঠানে এ দিন অন্তত মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন সোমেনবাবুই। যিনি বলেছেন, “কমিউনিস্টরা বলতেন, এ লড়াই বাঁচার লড়াই! এ লড়াই জিততে হবে! সেই স্লোগানটিই আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।”
|