দু’রাজ্যেই নিশ্চিত আসন একটি করে। কিন্তু তামিলনাড়ুর জন্য যে সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পারল সিপিএম, বাংলার জন্য তা-ই ঝুলিয়ে রাখতে হল আরও!
তামিলনাড়ু থেকে রাজ্যসভায় ফের সিপিএম প্রার্থী হচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রঙ্গরাজন। এডিএমকে-র উদ্বৃত্ত ভোটের সমর্থন নিয়ে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কিন্তু এ রাজ্যের একমাত্র নিশ্চিত আসনটির জন্য কে প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করার ভার শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিনের উপরেই ছেড়ে দিল সিপিএম পলিটব্যুরো। দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, দলের অন্দরে বড় কোনও সমস্যা দেখা না-দিলে এ বার রাজ্যসভায় বাম সাংসদ হিসাবে সম্ভবত নতুন কাউকে দেখা যাবে। পলিটব্যুরোর এক মাত্র মহিলা সদস্য বৃন্দা কারাটকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জন্য দলের একাংশের প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও বঙ্গ ব্রিগেডের আপত্তিতেই সেই প্রয়াস কার্যকর হচ্ছে না। বর্তমান সাংসদ তথা সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীও সম্ভবত আর সংসদ-মুখো হচ্ছেন না। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যসভা নির্বাচনে নতুন কাউকেই বেছে নিতে চাইছে সিপিএম। তবে সেই প্রার্থী কে, তা ঠিক করতে কলকাতা ফিরে ফের আলোচনায় বসবেন বিমান বসুরা। সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, সম্ভাব্য তালিকায় রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী-সহ একাধিক নাম রয়েছে।
দিল্লিতে বুধবার পলিটব্যুরোর বৈঠকের শেষ দিনে তামিলনাড়ুর প্রার্থীর নামে সিলমোহর পড়ে গেলেও এ রাজ্যের ক্ষেত্রে ফয়সালা হয়নি। তবে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে বাড়তি ১২টি ভোট যে তাঁরা নির্দল, গ্রহণযোগ্য কোনও প্রার্থীকে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে পলিটব্যুরোর সম্মতি আদায় করে নিয়েছেন বিমানবাবুরা। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের উদ্বৃত্ত ভোট ‘নষ্ট’ করা হবে না। গ্রহণযোগ্য নির্দল প্রার্থী কেউ থাকলে, তাঁকেই সমর্থন দেওয়া হবে। সিপিএমের এই সিদ্ধান্তের পরে বল এখন চলে গেল কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কোর্টে। কংগ্রেসের দলীয় কোনও প্রার্থীকে যে রাজ্যসভায় ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। মাত্র ১২টি উদ্বৃত্ত ভোট নিয়ে বামেরা এ রাজ্যের পঞ্চম আসনটির জন্য পৃথক কোনও প্রার্থীও দিতে যাবে না। কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ৩৮টি ভোট। এই অবস্থায় নির্দল প্রার্থী দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তাদেরই। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত খবর, এআইসিসি এখনও এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কংগ্রেস ও বাম, দুই শিবিরের শীর্ষ মহলেই আলোচনা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনটির জন্য তৃণমূল ইতিমধ্যেই আহমেদ হাসান ওরফে ইমরানকে প্রার্থী করেছে। নিজেদের অন্য তিন প্রার্থীকে জিতিয়ে আরও গোটাচারেক ভোট জোগাড় করতে পারলে তৃণমূলের চতুর্থ প্রার্থীও জিতে যাবেন। সাম্প্রতিক কালের দল ভাঙার প্রবণতা মেনে রাজ্যসভার ভোটেও তৃণমূল তাদের ভোটে ভাঙন ধরিয়ে দেয় কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা আছে কংগ্রেস শিবিরের একাংশে! বামেদের বাড়তি ভোট নিয়ে অবশ্য দলীয় পরিচয়ের বাইরের কোনও প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার সুযোগ পাবে কংগ্রেস। এই প্রেক্ষিতে এখনকার নির্দল সাংসদ সৈয়দ আহমেদ মালিহাবাদীর নাম ঘোরাফেরা করছে। নির্দল মালিহাবাদী ৬ বছর আগে কংগ্রেস ও বাম সমর্থনেই জিতেছিলেন। উভয় সঙ্কটের দশা থেকে কংগ্রেসকে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজ্য সিপিএমকেও চূড়ান্ত করতে হবে তাদের শিবিরের প্রার্থীর নাম। আজ, বৃহস্পতিবার বিকালেই বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা রয়েছে। সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “আরও আলোচনা বাকি। বাম শরিকদের সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” দলেরই একাংশে প্রশ্ন উঠেছে, কেরল সিপিএম যদি লোকসভায় পি কে বিজু, এম বি রাজেশ বা রাজ্যসভায় পি রাজীবের মতো নবীন প্রজন্মের নেতাদের পাঠাতে পারে, বঙ্গ ব্রিগেডই বা ইংরেজি ও হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ তরুণ কোনও মুখের কথা ভাববে না কেন? |