ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রির তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন। কিন্তু তারা ওই সম্পত্তি আদৌ বেচতে পারে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ (ইডি) বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা অথবা তা বিক্রি করার কোনও এক্তিয়ারই নেই রাজ্য সরকারের গড়া ওই কমিশনের।
সারদা গোষ্ঠীর বিরাট আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর থেকেই তাদের সম্পত্তি বেচে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর দাবি উঠছিল। অন্য একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থার ক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তার পরে উচ্চ আদালতেও প্রশ্ন ওঠে, সারদা সংস্থার ক্ষেত্রে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?
শেষ পর্যন্ত গত ১৩ জানুয়ারি সেন কমিশন জানায়, আপাতত সারদার ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বা বিডব্লিউডব্লিউ-এর চারটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল বেচে টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত হচ্ছে। নিলামে তারা নিউজ, তারা মিউজিক, তারা পঞ্জাবি ও টিভি সাউথ এশিয়া নামে ওই চার চ্যানেল বিক্রির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেডিং কর্পোরেশন বা এমএসটিসি-র সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান শ্যামলবাবু। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছিল, একই পদ্ধতিতে সারদা গোষ্ঠীর আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও বৈদ্যুতিন সংস্থা বিক্রি করা হবে। তবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে চলতি মাসের ২৪ তারিখের পরে। তার মধ্যেই এ দিন সেন কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে উচ্চ আদালতে প্রশ্ন তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ইডি। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই ওই কমিশনের।
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ইডি-র আইনজীবী সোমনাথ বসু বলেন, মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী একমাত্র কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট বিভাগই এই ধরনের বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ইডি-কে সেই কাজ করতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন এ ভাবে সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করলে তাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে সোমনাথবাবু মন্তব্য করেন। ওই কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বলেন, “সারদার সম্পত্তি তো বিভিন্ন রাজ্যে আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গড়া কমিশন অন্যান্য রাজ্যে থাকা সেই সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করবে কী ভাবে?”
শুধু সারদা কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হয়নি ইডি। বিধাননগর কমিশনারেটের বিরুদ্ধেও আদালতে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছে তারা। ইডি-র কৌঁসুলি সোমনাথবাবুর অভিযোগ, বিধাননগর কমিশনারেট তদন্তের কাজে তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম সহায়তা করছে না। ইডি বহু বার সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করতে চেয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেট ওই দুই অভিযুক্তকে বারবার এক থানা থেকে অন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের জেরা করার জন্য ইডি-কে কোনও সুযোগই দিচ্ছে না। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে ইডি-কে একটি অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করতে বলেন। সারদা মামলার দুই মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত ও দেবযানীকে জেরা করার জন্য সেই হলফনামায় আবেদন জানাতে হবে ইডি-কে।
সেন কমিশনের সঙ্গে সঙ্গে ইডি এ দিন প্রশ্ন তুলেছে বিধাননগর কমিশনারেটের এক্তিয়ার নিয়েও। ইডি-র আইনজীবী আদালতে বলেন, “বিধাননগর কমিশনারেট তাদের তদন্তে কোনও সাহায্য তো করছেই না। উল্টে ইডি কী তদন্ত করেছে এবং ওই তদন্তে কী কী পাওয়া গেল, তা জানতে চাইছে। ইডি কী তদন্ত করছে, তা জানতে চাওয়ার কোনও অধিকারই নেই বিধাননগর কমিশনারেটের।”
|