সুব্রতর চাই দেড় হাজার, তবে জয়রামের সাধ্য আশি
চিদম্বরমের দাওয়াইয়ে দিল্লিতেই এখন টানাটানির সংসার। তাই রাজ্যের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দাবি করতে এসে এক প্রকার নিরাশ হয়েই আজ ফিরতে হলে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যের দাবি ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আপাতত মাত্র আশি কোটি টাকা ঠেকিয়ে কার্যত হাত জোড় করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। যদিও জয়রাম এ-ও জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে রাজ্যকে আরও কিছু টাকা দেওয়ার চেষ্টা করবে তাঁর মন্ত্রক।
কিন্তু মাত্র আশি কোটি টাকায় কী হবে? জবাবে দৃশ্যত উৎকণ্ঠার সঙ্গেই সুব্রতবাবু বলেন, “ওই টাকায় পাঁচ দিনের বেশি মজুরি দেওয়া যাবে না। একশো দিনের প্রকল্পে রোজ মজুরি দিতে হয় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা!”
গ্রামোন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যেরও যে নিতান্তই টানাটানি চলছে, তা গত বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। বলেছিলেন, কেন্দ্র ঠিক মতো বরাদ্দ দিচ্ছে না। সূত্রের খবর, তখনই তাঁকে এবং অমিত মিত্রকে সাংবাদিক বৈঠক করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সাংবাদিক বৈঠকে তোলা অভিযো শুনে পর দিনই জয়রাম পাল্টা চিঠি দেন মমতাকে। বলেন, রাজ্যের কাছে একশো দিনের প্রকল্প বাবদ এখনও ৭৩৮ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন টাকা চাইছে রাজ্য?
এ দিন জয়রাম-সুব্রত বৈঠকে সেই প্রসঙ্গই ওঠে। সুব্রতবাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান, এই প্রকল্প বাবদ আদতে ৩৯০ কোটি টাকা রাজ্যের কোষাগারে রয়েছে। তার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা রাজ্যের অংশ। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য তা রেখেছে রাজ্য। ফলে প্রকৃত পক্ষে রাজ্যের হাতে রয়েছে মাত্র ১৯০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে তিনি জানান, গ্রামীণ প্রকল্প রূপায়ণে ‘পারফরম্যান্স’ বাড়ানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। এখন শুধু একশো দিনের প্রকল্পেই দেড় হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। তা ছাড়া গ্রামীণ সড়ক প্রকল্প ও ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের জন্য যথাক্রমে সাড়ে সাতশো ও আড়াইশো কোটি টাকা দরকার রাজ্যের।
সকালের সেই বৈঠকে টাকার কথা চূড়ান্ত করেননি জয়রাম। তিনি সুব্রতবাবুকে বলেন, “আপনি বিকেলে এক বার আসুন।” বিকেলে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীকে জানান, আপাতত মাত্র আশি কোটি টাকা বরাদ্দ করতে পারবে কেন্দ্র। এই অবস্থায় রাজ্য নিজের দাবি কমিয়ে অন্তত তিনশো কোটি টাকা দিতে বলে। কিন্তু তা-ও দাবিও মেটাতে পারেনি কেন্দ্র। বলাবাহুল্য গ্রাম সড়ক বা ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেননি জয়রাম।
সূত্রের খবর, চাওয়া-পাওয়ার ভিতরে বিস্তর ফারাক থাকলেও দুই মন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়েছে সৌজন্যের পরিবেশেই। কিন্তু তাঁদের আড়ালে দুই সরকারের আমলাদের মধ্যে আলোচনায় টানাপোড়েন কম হয়নি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্ট সীমা বহুগুণা রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব সৌরভ দাসকে প্রশ্ন করেন, একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্য এত টাকা খরচ করল কী ভাবে? রাজ্যে কত ভুয়ো ‘জব কার্ড’ রয়েছে? সূত্রের খবর, বহুগুণা এমন প্রশ্নও করেন যে, বর্ধমান এত টাকা খরচ করল কী ভাবে? একই সঙ্গে বলেন, কোনও জেলা এত বেশি খরচ করলে তাঁর ভয় করে। সন্দেহ নেই, স্পষ্ট করে না বললেও, আর্থিক তছরূপের দিকেই ইঙ্গিত করেন তিনি। কিন্তু রাজ্যের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভুয়ো জব কার্ড রাজ্যে নেই। চাইলে কেন্দ্র তদন্ত করে দেখতে পারে।
পরে রাজ্যের দাবি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জয়রাম বলেন, “আসলে ১৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রকের একটু টানাটানি চলছে। একশো দিনের প্রকল্প বাবদ মন্ত্রকের কাছে রয়েছে মাত্র আটশো কোটি টাকা। অথচ দাবিদার দশটি রাজ্য।” তাঁর বক্তব্য, “আগামী সপ্তাহে চেষ্টা করব আরও কিছু দেওয়ার। তা ছাড়া আগামী দু’সপ্তাহ মজুরি দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে।” তবে তাঁর মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, আসলে আর্থিক ঘাটতি কমাতে চিদম্বরম মন্ত্রকওয়াড়ি বাজেট ছাঁটাই করেছেন। তাতেই ভুগতে হচ্ছে রাজ্যগুলিকেও। অন্য দিকে, সুব্রতবাবু বলেন, “কেন্দ্র যদি এ ভাবে অপারগতা জানায়, তার পর রাজ্যের কি আর করার থাকতে পারে! প্রকল্পের জন্য রাজ্য কোনও ভিক্ষা চাইছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.