তাঁর প্রত্যাবর্তনে মঙ্গলবার দুপুরে বিধান ভবনকে বর্ণময় করে দিলেন সোমেন মিত্র!
সাম্প্রতিক কালে কংগ্রেস-ত্যাগীদের ভিড়ে তপসিয়ার তৃণমূল ভবন সরগরম হয়ে ওঠাই প্রায় প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। তার ব্যতিক্রম হয়নি এ দিনও। তবু এ দিনের জন্য অন্তত তপসিয়ার চেয়ে লালমোহন ভট্টাচার্য রোডের ছবিটা ছিল বেশি জমকালো। শব্দবাজির ধুমধাড়াক্কা, তাসার তালে নাচ, ঘোড়া নিয়ে মিছিল বিরাট উদ্দীপনার মধ্যে শত শত কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকের ঢল নেমেছিল এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস দফতরের সামনে। সেই ভিড়ে প্রচুর মহিলাও ছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে এমন ছবি দেখে উজ্জীবিত কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সোমেনবাবুর সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ সর্দার আমজাদ আলি, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক ঘোষ, প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১৩ জন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এমনকী, তাঁদের সঙ্গে প্রয়াত তৃণমূল নেতা জয়নাল আবেদিনের পুত্র শায়েস্তা আবেদিনও ছিলেন। সোমেনবাবুকে স্বাগত জানাতে বিধান ভবনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সি। তেমনই এআইসিসি-র তরফে অম্বিকা সোনি, সি পি জোশী এবং পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ খান ওই মঞ্চে হাজির হয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর তরফে সোমেনবাবুকে তাঁর পুরনো দলে স্বাগত জানিয়েছেন। |
প্রত্যুত্তরে সনিয়া-রাহুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোমেনবাবু বলেন, “কংগ্রেস নেতৃত্ব আমাকে যে আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করেছেন, তাতে আমি অভিভূত! এটা আমার আগামী দিনের চলার শক্তি।” জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অবশ্য আসতে পারেননি।
বিধান ভবনে যখন এই ছবি, উল্টো দিকে তখন সোমেনবাবু তৃণমূল সাংসদ থাকাকালীন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব মহম্মদ আসরাফউদ্দিন ওরফে বাবু তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন! তৃণমূল ভবনের সামনেও বিশাল মঞ্চ
বেঁধে সমাবেশে প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী মৈত্রেয়ী সাহার সঙ্গে বাবু শাসক দলে যোগ দেন। কিছু দিন আগে দলে যোগ দিয়েছেন, এমন নেতা-কর্মীদেরও মঞ্চে এনে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে তৃণমূল।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, বিধান ভবনে এ দিন যা দেখা গিয়েছে, সেটা একান্তই সোমেনবাবুকে ঘিরে তাঁর অনুগামীদের উন্মাদনা। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব সোমেনবাবুর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করেই ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় নামছেন। সেই লক্ষ্যেই দিল্লি থেকে আসা এআইসিসি-র প্রতিনিধিদের কাছে এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব লোকসভা ভোটে জোট না করার জন্য এ দিনও ফের আবেদন জানিয়েছেন। এআইসিসি-র প্রতিনিধিদের উদ্দেশে দীপা যেমন এ দিন বলেছেন, “আমরা জোট চাই না! আপনারা দিল্লির নেতৃত্বকে খোলসা করে বলে দেবেন!” |
দীপার সুরেই সমাবেশের অন্তিম পর্বে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, তাঁরা আগামী লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিতে চান। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রমাণ করতে হবে, কংগ্রেসের শক্তি আছে।”
দিল্লি থেকে আগত নেতারা অবশ্য তৃণমূলের সমালোচনা করলেও জোট হওয়া বা না-হওয়া নিয়ে কোনও কথা বলেননি। স্বভাবতই বিষয়টি এখনও কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বিচায। শাকিল, জোশীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস কর্মীদের আন্দোলনের উপরেই বেশি জোর দিয়েছেন এ দিন। তবে কংগ্রেস-জনতা তখন ছিল সোমেন-প্রত্যাবর্তনের আনন্দে মাতোয়ারা! তাদের সংযত করতে কখনও প্রদীপবাবু, কখনও সোমেনবাবুকে মাইক নিয়ে আবেদন করতে হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “এটা রাজনৈতিক দলের সভা। মজা করার জায়গা নয়!” তাঁর অনুগামী কর্মী-সমর্থকদের অতি উৎসাহে বিড়ম্বনায় পড়ে সোমেনবাবুকেও এক সময়ে বলতে শোনা যায়, “রাজ্যের সব জায়গায় কংগ্রেসের মাটি শক্ত করতে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। কিন্তু মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা ছাড়া লড়াইয়ে জেতা যায় না!” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “সোমেন মিত্র আবার কংগ্রেসের মায়ের আঁচলের তলায় ফিরে এসেছেন! সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তৃণমূল সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই পাল্টা অভিযোগ করেছেন, বকলমে সিপিএমকে শক্তিশালী করতেই কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছে! সোমেনবাবুর নামোল্লেখ না-করে মুকুলবাবু বলেন, “কংগ্রেস নেতৃত্ব সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করায় তৃণমূল গড়তে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।”
|