ঘরে ফেরা বনাম ঘর ছাড়া!
এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আজ, মঙ্গলবার বিধান ভবনে ফিরছেন তৃণমূলের সদ্যপ্রাক্তন সাংসদ সোমেন মিত্র। আজই তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে ঢুকছেন প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী মৈত্রেয়ী সাহা। প্রত্যাবর্তন-আগমন ঘিরে দুই ভবনের সামনে মঞ্চ বেঁধে সমাবেশের আয়োজন হয়েছে। দুই শিবিরের আয়োজনের লক্ষ্য, পরস্পরকে টেক্কা দেওয়া।
সোমেনবাবুর সঙ্গে তাঁর অনুগামী অমিত ঘোষ ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার প্রাক্তন এক বিধায়ক এবং এক সাংসদের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা। সোমেনবাবুর আগমনকে সামনে রেখে ভাঙন-বিধ্বস্ত কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের অনেকেরই অভিমত, সোমেনবাবুর প্রত্যাবর্তন ঘিরে এমন অনুষ্ঠান তাঁরা করতে চান, যা সারা রাজ্যে দলের কর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে। সেই কারণেই বিধান ভবনের সামনে ১৬ ফুট বাই ৩২ ফুটের বিশাল মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। মৌলালির মোড় থেকে বিধান ভবন পর্যন্ত সিআইটি রোড মুড়ে ফেলা হয়েছে সোমেনবাবুর কাট-আউট ও কংগ্রেসের পতাকায়। আনা হচ্ছে ব্যান্ড পার্টি। থাকছে আতসবাজি। সারা শহর জুড়ে সোমেনবাবুকে কংগ্রেসে স্বাগত জানিয়ে লাগানো হয়েছে প্রচুর ব্যানার, ফ্লেক্সও।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সোমবার জানান, সোমেনবাবুদের প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তিন মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী, অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি থেকে আসার কথা রয়েছে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা সি পি জোশী এবং এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক অম্বিকা সোনিরও।
কংগ্রেসের আজকের কর্মসূচির কথা তৃণমূল ভবনের কর্তাদের কানে পৌঁছতেই তপসিয়ায় ভবনের সামনে রাতারাতি মঞ্চ তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর আগে কংগ্রেস বিধায়ক সৌমিত্র খান ও পাহাড়ের জিএন এলএফের প্রাক্তন নেতা প্রণয় রাইয়ের সদলে তৃণমূলে যোগদানের সময়েও ভবনের সামনে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। কিন্তু সে দিনের তুলনায় আজকের মঞ্চ বহরে বড় হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মৈত্রেয়ী ছাড়াও বিপুল সংখ্যায় আজ কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে দাবি করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “প্রচুর লোক হবে। বড় মঞ্চ না হলে সমস্যা হবে!”
কংগ্রেসের সঙ্গে টক্কর দিতে কেবল মঞ্চ বেঁধেই নয়, শহরের যেখানে যেখানে সোমেনবাবুর ছবি দিয়ে কংগ্রেস ফ্লেক্স বা ব্যানার লাগিয়েছে, সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পাল্টা প্রচার করেছে তৃণমূল। দলের ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে তৃণমূল নেত্রীর ছবি দেওয়া ট্যাবলো কয়েক দিন ধরেই শহর জুড়ে ঘুরছে। তবে সোমেনবাবুর খাস তালুক মধ্য কলকাতা জুড়ে এ দিন সেই ট্যাবলোর ঘোরাঘুরি ছিল চোখে পড়ার মতো। তৃণমূল নেতৃত্বের স্বস্তি, সোমেনবাবুর সঙ্গে শাসক দলের কোনও জনপ্রতিনিধিই দল ছাড়ছেন বলে খবর নেই। এই বিষয়টি নিয়ে চোরা অস্বস্তি রয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেও। তবে প্রকাশ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, “এক অক্ষৌহিণী নারায়ণী সেনার বদলে একা কৃষ্ণকেই পেয়েছিল পাণ্ডবেরা। তার পরে কুরুক্ষেত্রে কী হয়েছিল, সবাই জানেন!”
|