প্রতি পরিবারের কাছে যাও। নিজের পরিবারকে সঙ্গে আনো!
সঙ্কটের সময়ে ব্রিগেড ভরাতে এটাই এ বার নতুন বার্তা সিপিএমের! নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশ উপলক্ষে ময়দান যাতে ভরে ওঠে, তার জন্য রাজ্যে দলের সক্রিয় কর্মীদের সপরিবার ব্রিগেডে যেতে বলেছে বিজেপি। সংগঠিত ভাবে লোক আনার ক্ষেত্রে তৃণমূল বা বামেদের চেয়ে রাজ্য বিজেপি অবশ্য পিছিয়ে। বামেদের অবস্থা তা নয়। তবু এ বার কর্মীদের সপরিবার ব্রিগেডে আসার বার্তা পাঠাচ্ছে আলিমুদ্দিন।
সিদ্ধান্ত হয়েছে সাম্প্রতিক রাজ্য কমিটির বৈঠকে। তার পরেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে সিপিএমের জেলা কমিটিগুলির কাছে বার্তা যাচ্ছে, ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ এ বার ভিন্ন তাৎপর্য বয়ে আনবে। ভিড়ে খামতি থাকা চলবে না। কর্মীদের তাই আসতে বলা হচ্ছে পরিবারের সকলকে নিয়েই। নিজেদের এলাকায় ব্রিগেডের প্রচারের জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ তো আছেই।
সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, এ বার ৩০ জানুয়ারি তৃণমূল এবং ৫ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-র ব্রিগেড সমাবেশের পরে বামেদের পালা। কোনও ভাবে সেই সমাবেশে আশানুরূপ ভিড় না-হলে লোকসভা ভোটের আগে বাম সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই যাঁরা দলের সভা-সমাবেশে নিয়মিত যান, তাঁরা ছাড়াও পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে আনতে হবে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “যে পরিস্থিতিতে এ বার লোকসভা ভোট হচ্ছে, অন্য বার তেমন থাকে না। বেশি দিন ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে সকলকে যে আটকে রাখা যাবে না, ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই সেই কথা বুঝিয়ে দিতে হবে! তাই আমরা বলছি, প্রতি পরিবারের কাছে যেতে হবে। নিজেদের পরিবারকে আনতে হবে।”
লোক আনার জন্য এই ফরমান প্রযোজ্য গোটা রাজ্যের জন্যই। তবে উত্তরবঙ্গ বা দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে সপরিবার কর্মীরা আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে সিপিএমের অন্দরেই। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “কলকাতার লাগোয়া জেলাগুলি থেকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত কর্মীদের পরিবার নিয়ে আসতে বেশি দেখা যাবে। শুধু দক্ষিণবঙ্গের লাগোয়া জেলা থেকে হলেও তাতে মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে আশা করছি।” ব্রিগেড সমাবেশে লোক আনার চিরাচরিত পদ্ধতি হল বাস বা গাড়ি ভাড়া করে আসা। এ বারও সেই পদ্ধতি বজায় থাকবে। তবে তার পাশাপাশি ট্রেনে চেপে সমাবেশে আসার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সিপিএম সূত্রের যুক্তি, গাড়ি নিয়ে গেলে এলাকায় চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সমাবেশ থেকে ফিরে হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কা তাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ব্রিগেডের প্রস্তুতি চালাতে গিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ফের দলের অন্দরে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিষ্ক্রিয় কর্মীদের প্রতি মায়া দেখানোর আর প্রয়োজন নেই! কঠিন সময়ে লোকসভা ভোটের আগে এই ব্রিগেডের ডাকে যে কর্মীরা সাড়া দিতে উৎসাহ দেখাবেন না, তাঁদের বাদ দিয়েই দলকে নির্বাচনের কাজে ঝাঁপাতে হবে।
দলের অন্দরেই বিমানবাবুর আরও বক্তব্য, ২০১৩ সালে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে জেলায় ৫৯টি এবং বামফ্রন্টের তরফে ২২টি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সচরাচর রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এতটা সক্রিয়তা দেখা যায় না। শুধু জেলায় জেলায় কর্মী-সমর্থকেরা কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন, রাজ্য নেতৃত্ব নীরব দলের মধ্যে এই সমালোচনার মোকাবিলা করতে চেয়ে ওই পরিসংখ্যান পেশ করেছেন রাজ্য সম্পাদক। নতুন বছরের গোড়ায় কর্মীদের কাছে নতুন আহ্বান জানিয়ে তাঁর আশা, জেলা থেকে সাড়া মিলবে। |