আদালতের নির্দেশ মেনে তালিকা তৈরি করা হয়নি। মানা হয়নি অন্যান্য নির্দেশও। এই অবস্থায় আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) মারফত শিক্ষক মনোনয়নের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত সোমবার এই নির্দেশ দেন। তিনি মনে করেন, এসএসসি-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানাতে হবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক-পদে বিএড-উত্তীর্ণ প্রার্থী ছাড়া কাউকে নিয়োগ করা যায় না। তবে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র পক্ষে আইনজীবী আশা গুটগুটিয়া আগে আদালতকে জানান, এ রাজ্যে শূন্য পদের তুলনায় বিএড পাশ করা প্রার্থীর সংখ্যা কম। এই অবস্থায় বিএড ডিগ্রি না-থাকলেও শিক্ষক-পদে নিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের বিএড ডিগ্রি আছে, তাঁদের বঞ্চিত করা যাবে না।
সেই সময়েই বিচারপতি রায় দিয়েছিলেন, এসএসসি-র পরীক্ষায় নির্বাচিত প্রার্থীদের দু’টি তালিকা প্রকাশ করতে হবে। একটি তালিকা বিএড ডিগ্রিধারীদের, অন্যটি বিএড ডিগ্রিহীনদের। প্রথম তালিকা থেকে সকলকে নিয়োগপত্র দেওয়ার পরেই দ্বিতীয় তালিকা থেকে শিক্ষক-পদে নিয়োগপত্র দেওয়া যাবে।
কিন্তু এসএসসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পরে দেখা যায়, একটি যুগ্ম তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় কারা বিএড ডিগ্রিধারী, কারাই বা অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত এবং কারা প্রতিবন্ধী, তার কোনও উল্লেখই নেই। উচ্চ আদালত যে দু’টি তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছিল, এসএসসি-কর্তৃপক্ষ তা-ও মানেননি। সোমবার ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানিয়ে দেন, বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অন্য কোনও প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়াটা বরদাস্ত করবে না আদালত।
ওই যুগ্ম তালিকা প্রকাশের পরে তিনশোরও বেশি প্রার্থী হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁদের বক্তব্য, তালিকায় যাঁদের আগে নাম আছে, তাঁদের অনেককেই কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়নি। বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী এসএসসি-র এই অবৈধ কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রায় ১৪০ জন প্রার্থীকে কাউন্সেলিংয়ে ডেকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেই এসএসসি তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, এসএসসি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অনৈতিক ভাবে নিয়োগপত্র দিচ্ছে। মেধার বিষয়টি উপেক্ষা করে কম শিক্ষিত প্রার্থীদের নিয়োগ করলে আখেরে শিক্ষার ভিত্তিটাই নষ্ট হয়ে যাবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, যুগ্ম তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনেক সময়েই তালিকার ক্রম মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। সেই সঙ্গে আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের সকলে অবশ্যই নিয়োগপত্র পাবেন। এমনই ব্যবস্থা করেছে এসএসসি। কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি না-দেখে কিছু বলা যাবে না।” |
শনিবার বদলি শুরু হচ্ছে স্কুলে |
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাধারণ বদলির প্রক্রিয়া ২৫ জানুয়ারি, শনিবার শুরু হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই দিন থেকে স্কুল-কর্তৃপক্ষের কাছে বদলির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন বলে সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কমিশনের ওয়েবসাইট wbssc.com-এ এই সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। এই প্রক্রিয়া ১০ মার্চ পর্যন্ত চলার কথা। তবে কমিশনের কর্তাদের ধারণা, এটা জুলাই পর্যন্ত গড়াতে পারে। |