কলকাতার কলেজগুলিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটলেও মঙ্গলবার ছাত্র-ভোট ঘিরে উত্তাপ ছড়াল জেলায়। এ দিন ভোট হওয়া প্রায় সব কলেজেই (কলকাতার একটি এবং রায়গঞ্জের একটি বাদে) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’ (টিএমসিপি)।
সবচেয়ে বেশি গণ্ডগোল হয়েছে মালদহ মহিলা কলেজে। ‘জোর খাটিয়ে’ সেখানে একক ভাবে ছাত্রী সংসদের ১৮টি আসনই দখলের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ, টিএমসিপি-র কর্মীদের মারে এক ছাত্রী-সহ দুই এসএফআই সমর্থক জখম হন। এসএফআই ও ছাত্র পরিষদের কেউই মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।
মহিলা কলেজ সূত্রের খবর, সোম এবং মঙ্গলবার সেখানে মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়ার দিন ছিল। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোনও কলেজেই অন-লাইনে মনোনয়ন তোলার ব্যবস্থা হয়নি। এসএফআইয়ের দাবি, সোমবারও টিএমসিপি-র বাধায় মনোনয়ন তুলতে না পেরে তারা পুলিশের দ্বারস্থ হয়। পুলিশের আশ্বাসে এ দিন মনোনয়ন তুলতে যেতেই হয় ‘বিপত্তি’। এসএফআইয়ের অভিযোগ, উইমেনস কলেজ রোডের দু’পাশে এবং কলেজের গেটে বেঞ্চ পেতে বসে থাকা টিএমসিপি-র মহিলা এবং পুরুষ কর্মীরা হামলা করে তাঁদের কর্মীদের উপরে। লোহার রড, বাঁশ, লাঠি দিয়ে মাটিতে ফেলে পেটানো হয় তাঁদের দু’জনকে। ‘হামলা’র প্রতিবাদে এসএফআই দুপুর দেড়টা নাগাদ তিন নম্বর কলোনির মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এক ঘণ্টা অবরোধের জেরে যানজট দেখা দেয় জাতীয় সড়কে। |
এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে-র ক্ষোভ, “ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখের অভিযোগ, “টিএমসিপি-র হামলার আশঙ্কায় আমাদের কেউ মনোনয়ন তুলতে বা জমা দিতে যাননি।”
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, “মহিলা কলেজের কেউ এসএফআই ও ছাত্র পরিষদের প্রার্থী হতে চাননি।” এক ধাপ এগিয়ে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার বক্তব্য, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই ওখানে ভোট হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসএফআই আমাদের ছাত্র সংসদ দখল করার চেষ্টা করেছিল। আমরা তা রুখে দিয়েছি।” পুলিশি-নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ও বলেছেন, “এসএফআইয়ের কেউ এ দিন মনোনয়ন তুলতে যাননি। মারধরের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও করেননি। অভিযোগ পেলে, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”
রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে আবার মনোনয়ন তোলা নিয়ে টিএমসিপি-রই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে এ দিন। এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর এক ছাত্রকে মারধর করে বলে অভিযোগ। আবার টিএমসিপি-র বহিরাগতদের দাপটে তারা মনোনয়ন তুলতেই পারেনি বলে দাবি এসএফআইয়ের। তবে টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্ব সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
কলকাতায় এ দিন নির্বাচন হয়েছে আশুতোষ, মণীন্দ্রচন্দ্র ও জয়পুরিয়া কলেজে। তিনটিতেই তারা জিতেছে বলে দাবি টিএমসিপি-র। তিনটি কলেজেই পুলিশি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টি কলেজে নির্বাচন ছিল। একটি বাদে সবক’টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি। একটিতে (মুরলীধর মহিলা কলেজ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে ডিএসও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব কলেজ কলকাতায় অবস্থিত, এ দিন সেই কলেজগুলির নির্বাচন শেষ হয়েছে। তবে ‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ (নাক)-এর পরিদর্শনের জন্য স্কটিশ চার্চ কলেজে নির্বাচন এর মধ্যে হয়নি। সেটি হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ৫৫টি আসনই দখল করল ছাত্র পরিষদ। কলেজের আটটি আসনে আগেই তারা জিতেছিল। বাকি ৪৭টি আসনেও জেতে তারাই। ভোট চলাকালীন কলেজ লাগোয়া এলাকা থেকে দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পথ অবরোধও হয়। |