শহরের একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা তিন মহিলাকে খুনের অভিযোগে ধৃত ‘জ্যোতিষী’ নিত্যানন্দ দাসকে দু’দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলি বিশ্বাস। ধৃতকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে বিচারক ওই নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার বলেন, “বহরমপুরে তিন মহিলা খুনের ঘটনায় ধৃত নিত্যানন্দকে শুক্রবার ফের বহরমপুর ফৌজদারি আদালতে হাজির করানো হবে। এ দিন তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়নি। তাই তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।” তিন মহিলাকে খুনের পাশাপাশি তাঁদের গয়না হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে।
সেই চোরাই গয়না কেনার দায়ে সারগাছির এক ব্যবসায়ী ওমর আলি শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আইনজীবী বিশ্বপতিবাবু বলেন, “জামিন নাকচ করে দিয়ে তাঁকেও দু’দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।” এ দিনও তাদের হয়ে বহরমপুরের কোনও আইনজীবী আদালতে সওয়াল করতে রাজি হননি। অন্য দিকে ‘বহরমপুর নাগরিক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে বহরমপুর পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের নেতৃত্বে এ দিন বহরমপুর ফৌজদারি আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। বহরমপুরের মানুষ এ দিন নিত্যানন্দকে আদালতে তোলার সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। বহু মানুষের ভিড়ের মধ্যে পুলিশকে বেশ সতর্ক হয়েই নিত্যানন্দকে নিয়ে বেরোতে হয়। |
|
|
বহরমপুর আদালতের সামনে ধৃত নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শহরবাসীর। —নিজস্ব চিত্র। |
|
শহরের সতীমার গলির মুখের একটি বহুতল আবাসনের এক তলা থেকে গত ৬ জানুয়ারি তিন মহিলার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক খাইয়ে ওই তিন জনকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি বহরমপুর শহর লাগোয়া পাকুড়িয়ার বাসিন্দা নিত্যানন্দকে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১২ জানুয়ারি বহরমপুর ফৌজদারি আদালতে তাকে হাজির করানো হলে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিত্যানন্দকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
কয়েক বছর আগে প্রথম পক্ষের স্ত্রী নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করেছেন বহরমপুর আদালতে। ওই মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। বহরমপুর আদালতে তার বিরুদ্ধে ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ারও একটি মামলা ঝুলে রয়েছে। নিত্যানন্দের হয়ে ওই ২টি মামলা লড়ছেন আইনজীবী পীযূষ ঘোষ। তিন মহিলা খুনের মামলা লড়ার জন্যও নিত্যানন্দের মা পীযূষবাবুর কাছে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু আপাতত সেই অনুরোধ তিনি রক্ষা করেননি। পীযূষবাবু বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০৪ ধারা অনুসারে প্রতিটি অভিযুক্তেরই আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ওই ধারা অনুসারে বিচারক যদি আমাকে নিত্যানন্দের হয়ে মামলা লড়ার নির্দেশ দেন, তখন আমাকে তা মানতে হবে।”
এ দিন আদালত চত্বরে ‘বহরমপুর নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সামিল হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক খাজিম আহমেদ, দুই কবি উৎপলকুমার গুপ্ত ও অশোক দাস, পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য এবং বহরমপুর চাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ-সহ শহরের বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা ওই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বহরমপুর শহরের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
|