আলমারির সামনে দাঁড়াতেই ফিরল স্মৃতি
৯৭৫ থেকে ২০১৪প্রায় ২৯ বছর পরে ফের মুর্শিদাবাদে এলেন প্রাবন্ধিক ফাদার দ্যঁতিয়েন। তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘গদ্য পরম্পরা’ রচনার সময়ে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কবি-প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসীর ব্যক্তিগত পাঠাগার থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম খোশবাসপুরে তিনি প্রথম বার এসেছিলেন। ওই টানেই ৮৯ বছরের ফাদার দ্যঁতিয়েনের সোমবার রাতে বহরমপুরে এসে পৌঁছান।
মঙ্গলবার সকালে তিনি চলে যান খোশবাসপুর গ্রামে। তাঁর আসার কথা জানতে পেরে গোকর্ণ নিত্যগোপাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করে। ছাত্রীদের সঙ্গে ঘন্টা খানেক গল্প-আড্ডায় কাটান তিনি। বাংলা আধুনিক গান থেকে ফরাসি ভাষায় গান গেয়ে শোনান। ছাত্রীরাও সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান তাঁকে। তাঁদের সঙ্গে গলা মেলান ফাদারও। তিনি বলেন, “ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা’আমার সব থেকে প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। আমার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ওই গানটি গাওয়ার কথা আমি বেলজিয়ামে বলে রেখেছি।”
বহরমপুরে ফাদার দ্যতিয়েন।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন গ্রামে গিয়ে তাঁর চোখে ধরা পড়েছেবদলে যাওয়া গ্রাম এবং গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। তিনি বলেন, “এক সময়ে আমি দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীতে থাকতাম। তখন ট্রেনে করে গিয়ে নৌকোয় নদী পেরিয়ে যেতে হত। যাতায়াত পথে পড়ত গাছপালা ঘেরা ছোট ছোট বাড়ি। আমার ভীষণ ভাল লাগত দেখতে। বছর কয়েক আগে আমি ফের বাসন্তী গিয়েচিলাম। কিন্তু আগের জীবন ফিরে পাইনি। খোসবাসপুরে এসেও টের পাচ্ছি যে, গ্রামের উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তায় মোরাম পড়েছে। পিচ রাস্তা হয়েছে। তখন এত বাড়ি-ঘর ছিল না। গ্রামের মানুষের আর্থিক উন্নতির কারণে বড় বড় বাড়ি হয়েছে।” তিনি বলেন, “তবে মেয়েরা সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখে ভাল লাগছে।”
১৯২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের একটি ছোট শহরে জন্ম ফাদার পল দ্যঁতিয়েনের। তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে কলকাতায় এসেছিলেন ১৯৪৯ সালে। কিন্তু ভারতে আসার প্রস্তুতি হিসেবে তিনি দু’বছর সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে শ্রীরামপুরে থাকার সময়ে শুরু হয় তাঁর বাংলা ভাষা চর্চা। ফরাসিভাষী ফাদার ক্রমশ আবিষ্কার করতে থাকেন বাংলার স্বতন্ত্র ধ্বনি, ইতিহাস এবং সমাজ জীবনকে। বিশ্বভারতী থেকেও পাঠ নিয়েছেন বাংলা ভাষার। বাংলাতেই এক দিন লিখতেও শুরু করেন ‘ডায়েরির ছেঁড়া পাতা’। ষাটের দশকে সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় এক টানা দু’বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ওই লেখা। সেই সময়ে তিনি থাকতেন কলকাতার শ্যামাপুকুর অঞ্চলে। ওই গ্রন্থের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭২ সালে নরসিংহ দাস পুরস্কারে সম্মানিত করে তাঁকে। তাঁর লেখা ‘রোজনামচা’ প্রকাশিত হয় অধুনালুপ্ত ‘অমৃত’ পত্রিকায়।
ফাদার বলেন, “গদ্য পরম্পরা লেখার সময়ে আমি মুর্শিদাবাদে এসেছিলাম। কিন্তু সেই কথা কিছুতেই আমি মনে করতে পারছিলাম না। তখনই মুর্শিদাবাদে আসার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু বুধবার ওই পাঠাগারের আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে অজস্র বই-পুরনো পত্র-পত্রিকা দেখে অদ্ভূত ভাবে আমার সব কথা মনে পড়ে গেল। ওই গ্রন্থে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মা আনোয়ারা বেগমের গদ্য রচনাও রয়েছে।”
ফাদারের কথায়, “১৯৭৮ সালে আমি বেলজিয়াম ফিরে যাই। এখন আমি ব্রাসেলস্ শহরে বাস করি। এই সময়ের মধ্যে কয়েক বার কলকাতায় এসেছিলাম। কিন্তু নতুন করে ২০০৭ সালের পর থেকে আবার বাংলা ভাষায় লেখালিখি শুরু করি। কয়েক বছর আগে দেশ পত্রিকার সম্পাদক হর্ষ দত্ত ফোন করে আমাকে লেখার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আমি কি আগের মতো বাংলায় লিখতে পারব বলে নিজেরই সন্দেহ ছিল। তখন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুরু করি। এর পরে বাংলায় একটা লেখা লিখতে শুরু করে বুঝতে পারলাম, আমি পারব।”
২০১১ সালে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয় হয় তাঁর ‘গদ্য সংগ্রহ’। বাংলা ভাষায় সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০১২ সালে রাজ্য সরকার তাঁকে রবীন্দ্র পুরষ্কারে সম্মানিত করে। ফাদার বলেন, “বাঙালি জীবন নিয়ে সাংবাদিকতা ধর্মী লেখার ইচ্ছে রয়েছে। তবে আমি আবার রম্য রচনা ধর্মী লেখার কথাই ভাবছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.