দক্ষিণ আফ্রিকার পর এ বার নিউজিল্যান্ডেও আবার পরপর দুটো ওয়ান ডে হেরে বসল ভারত। বুধবার তার সঙ্গে যোগ হল আরও একটা বাড়তি অপমান— ওয়ান ডে ক্রিকেট র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বসেরার আসনটাও হারাল ধোনির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিম। শুনছি পরের তিনটে ম্যাচ জিততে পারলে ওরা নাকি আবার র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসবে। কিন্তু যা অবস্থা দেখছি, তাতে এই টিমের উপর বাজি ধরার আস্থাটা পাচ্ছি না।
বুধবার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪২ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ২৭১-৭। কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে ভারতের টার্গেট দাঁড়ায় ৪২ ওভারে ২৯৭। এই হারের দায় কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মের উপর ফেলা ঠিক হবে না। এই টিমটায় অবিলম্বে কিছু বদল না আনলে কিন্তু ভারতের জন্য আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করে আছে।
প্রথমেই বলব ইশান্ত শর্মার কথা। আপনাদের মতো আমিও বুঝতে পারছি না, ইশান্ত এই টিমে কী করছে? প্রায় সাত বছর ধরে টানা জাতীয় দলে খেলছে ইশান্ত, কিন্তু এখনও ওর বোলিংয়ে পরিণতির কোনও ছাপ দেখতে পাচ্ছি না। এখনও বাচ্চাদের মতো বল করে যাচ্ছে। ওর চেয়ে তো মহম্মদ শামি ভাল বল করছে এখন। ভুবনেশ্বর কুমারও ওর চেয়ে বেশি ভাল বল করছে। দু’দিন পর বরুণ অ্যারন টিমে এলে দেখবেন, সে-ও ইশান্তকে টপকে যাচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখুন, ইশান্তের চেয়ে অনেক বেশি ধারাবাহিক বোলার পেয়ে যাবেন। আমাদের অশোক দিন্দার কথাই ধরা যাক। এই মরসুমে যথেষ্ট ধারবাহিক ভাবে বল করেছে ও। তবুও ওকে জাতীয় দলের জন্য ভাবা হবে না! |
ফের রান করলেন কোহলি, ফের হারল ভারত। |
শুধু ইশান্ত কেন, শামিকে বাদ দিলে গোটা বোলিং ইউনিটটাকেই খুব সাধারণ দেখাচ্ছে। এই যে আমরা টানা দুই স্পিনার খেলিয়ে যাচ্ছি, তাদের কেউই কার্যকর নয়। ওরা না পারছে উইকেট তুলতে, না পারছে রান আটকাতে। আর রবীন্দ্র জাডেজার তো ব্যাট হাতেও সম্প্রতি মনে রাখার মতো একটা পারফরম্যান্স নেই। আমার মনে হয় জাডেজা আর অশ্বিনের মধ্যে এক জনকে খেলানো হোক। আর যে বাদ পড়বে, তার জায়গায় স্টুয়ার্ট বিনিকে সুযোগ দেওয়া হোক। টি-টোয়েন্টিতে ওর ব্যাটিং যা দেখেছি, তাতে মনে হয় ছেলেটা খুব খারাপ করবে না। অ্যাটাকিং ব্যাটসম্যান, হাতে বড় শট আছে।
আর একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল, সুরেশ রায়না আর কত বছর টিমে থাকবে? ভাবলে অবাক লাগে, এই ছেলেটা প্রায় দুশোটা ওয়ান ডে খেলে ফেলেছে! অথচ এখনও শর্ট বলের বিরুদ্ধে টেকনিকটা আয়ত্ত করে উঠতে পারল না। যত দূর মনে করতে পারছি, শেষ ২৫-৩০টা ইনিংসে একটা হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত নেই রায়নার। এই যে অম্বাতি রায়ডুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটা কি স্রেফ ট্যুরিস্ট হিসেবে? কেন রায়নাকে বসিয়ে ওকে সুযোগ দেওয়া হবে না? আগে মনে হত শর্ট বলের বিরুদ্ধে বোধহয় শুধু রায়নারই সমস্যা আছে। এখন তো সেই রোগ শিখর ধবন, রোহিত শর্মাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। টিম ম্যানেজমেন্ট কি পারে না কোনও বিশেষজ্ঞ এনে এই রোগের দাওয়াই খুঁজতে? আজও দুই ওপেনারের মধ্যে শিখর করল ১২, রোহিত ২০। |
০-২ পিছিয়ে এক নম্বরের আসন হারাল ভারত
১৯ জানুয়ারি ২০১৩-এ রাঁচিতে ইংল্যান্ড-কে সাত উইকেটে হারিয়ে
ওয়ান ডে
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছিল ভারত। তার পর থেকে
ধোনিরা এক নম্বরে ছিলেন এক বছর দু’দিন। |
|
|
|
হ্যামিল্টনের নানা ফ্রেম। হতাশার বুধবার ধোনির টিম ইন্ডিয়ার জন্য। |
জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছে, ইশান্ত-রায়না-জাডেজাদের জন্য কি অন্য কোনও মাপকাঠি বরাদ্দ করে রাখা আছে? না হলে এখনও কেন এক জনও জাতীয় নির্বাচক উঠে দাঁড়িয়ে বলতে পারছেন না যে, ভাই অনেক হয়েছে। এ বার এদের বাদ দাও। জাতীয় নির্বাচকের চেয়ারটা তো আর সাম্মানিক নয়, ওঁরা এখন টাকা পাচ্ছেন নিজেদের কাজের জন্য। তা-ও কী ভাবে এত নির্বিকার থাকছেন, বুঝতে পারছি না। আমি বলছি না যে, নতুন প্লেয়ার আনলেই টিমটা দারুণ খেলতে শুরু করবে। কিন্তু অন্তত এটা ভাবা যাবে যে, আমরা সেরা টিমটা নামাতে পেরেছি।
সবচেয়ে বড় সমস্যাটা কী জানেন? অধিনায়ক নিজে। যে দিন ওর ফাটকা খেটে যাবে, সে দিন ঠিক আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে ওর সিদ্ধান্ত ক্রিকেটীয় যুক্তির বাইরে চলে যায়। ও প্রচণ্ড একগুঁয়ে। এক বার কিছু ভেবে নিলে ওকে নড়ানো যায় না। তবে আশা করব অন্তত এ বার ধোনি নড়েচড়ে বসবে! |
হ্যামিল্টনের স্কোর |
নিউজিল্যান্ড |
গুপ্তিল ক শামি বো রায়না ৪৪
রাইডার ক ধোনি বো শামি ২০
উইলিয়ামসন স্টাম্প ধোনি বো জাডেজা ৭৭
টেলর ক ধোনি বো শামি ৫৭
অ্যান্ডারসন ক ধবন বো ইশান্ত ৪৪
ব্রেন্ডন ক ও বো শামি ০
রঙ্কি ন.আ ১৮
নাথান বো ভুবনেশ্বর ১
মিলস ন.আ. ২
অতিরিক্ত ৮ মোট ৪২ ওভারে ২৭১-৭।
পতন: ২৫, ১১৪, ১৭৪, ২৪৮, ২৫০, ২৫১, ২৫২।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-১-৪৩-১, শামি ৭-০-৫৫-৩, ইশান্ত ৬-০-৪৬-১,
জাডেজা ৮-০-৪৬-১, বিরাট ২-০-১২-০, অশ্বিন ৮-০-৫০-০, রায়না ৪-০-১৮-১।
|
ভারত |
ধবন বো সাউদি ১২
রেহিত ক রঙ্কি বো সাউদি ২০
বিরাট ক দেভচিচ (পরিবর্ত) বো সাউদি ৭৮
রাহানে ক রঙ্কি বো ম্যাকক্লেনাঘান ৩৬
ধোনি ক উইলিয়ামসন বো অ্যান্ডারসন ৫৬
রায়না ক সাউদি বো মিলস ৩৫
জাডেজা বো অ্যান্ডারসন ১২
অশ্বিন ক গুপ্তিল বো সাউদি ৫
ভুবনেশ্বর ক নাথান বো অ্যান্ডারসন ১১
শামি ন.আ ১
ইশান্ত ন.আ. ১
অতিরিক্ত১০ মোট ৪১.৩ ওভারে ২৭৭-৯।
পতন: ২২, ৩৭, ১২৭, ১৬৪, ২২৬, ২৫৭, ২৫৯, ২৬৫, ২৭৫।
বোলিং: মিলস ৯-১-৫০-১, ম্যাকক্লেনাঘান ৮-১-৪৫-১,
সাউদি ৯-০-৭২-৪, নাথান ৮-০-৪০-০, অ্যান্ডারসন ৭.৩-০-৬৭-৩। |
(নিউজিল্যান্ড ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে জয়ী) |
|
|