সেমিফাইনালে কিন্তু নাদাল-ই এগিয়ে
ভিন্টেজ ফেডেরার সামনে পড়লে কী হয়, টের পেল মারে
অ্যান্ডি মারেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ৬-৩, ৬-৪, ৬-৭ (৬-৮), ৬-৩ হারিয়ে ফেডেরার অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালে নাদালের মুখোমুখি হওয়ার পর বুধবার সন্ধে থেকে একটা প্রশ্ন খুব বেশি শুনতে হচ্ছে। ম্যাচটায় কি আসলে এডবার্গের ভলির কাছে হেরে গেল লেন্ডলের পাওয়ারফুল বেসলাইন টেনিস?
লেন্ডলের কোচিংয়ে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে মারের ফোরহ্যান্ডের প্রচুর উন্নতি ঘটেছে। খেলার পাশাপাশি মানসিকতাতেও টাফনেস এসেছে। সব সত্যি। কিন্তু ফেডেরারের মতো শীর্ষমানের কমপ্লিট টেনিস প্লেয়ারকে এডবার্গ নতুন করে আর কী শেখাতে পারে? হ্যাঁ, টিভিতে এ দিন খেলা দেখে মনে হল, ইদানীংকালের মধ্যে মারের বিরুদ্ধে একটু বেশি নেটের সামনে এসেছে ফেডেরার। কিন্তু আসলে তো বেচারা মারে এ দিন পড়ে গিয়েছিল সেই ভিন্টেজ ফেডেরারের সামনে। যার সামনে এ দিন মারে না হয়ে, জকোভিচ বা নাদাল পড়লেও ম্যাচের স্কোরলাইন হয়তো এ রকমই হত।

উচ্ছ্বাস: জিতে ফেডেরার
“গত বছরের চেয়ে আমি এখন অনেক উঁচুতে আছি।
খেলায়, মানসিকতায়। কারণ, কোর্টে নিজের মুভমেন্টের ব্যাপারে
আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।” —
এডবার্গের থেকে এই ম্যাচের জন্য ফেডেরার যদি সত্যিই কিছু সাহায্য পেয়ে থাকে, এত দূরে বসে আমার মনে হচ্ছে সেটা পিওর মানসিক। দু’জনেই কুল-কুল প্লেয়ার। কোর্টে ঠান্ডা মেজাজে প্রতিপক্ষকে খুন করতে ভালবাসে। যেটা ইদানীং পুরোপুরি ফেডেরার পারছিল না। আগে ওর হারাটাই ছিল অবিশ্বাস্য ঘটনা। কিন্তু গত দু’মরসুম বেশ কিছু ম্যাচ হারায় প্রতিপক্ষদের মনে যেমন ফেডেরার সম্পর্কে ভয়টা কেটে গিয়েছে, তেমনই ফেডেরারের মনের গহন কোণে হয়তো আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে— আমিও হেরে যেতে পারি! ঠান্ডা কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাসী স্বভাবের এডবার্গ হতে পারে ফেডেরারের ভেতর আবার সেই পুরনো আত্মবিশ্বাসটা ফিরে আসতে সাহায্য করেছে যে, আমি হারতে পারি না। যত কঠিনই লড়াই হোক।
আসলে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন যে কী বিস্ময়কর বস্তু এই ম্যাচে ফেডেরার আরেক বার প্রমাণ করে দিল। প্রথম দুটো সেটে একেবারে নিখুঁত টেনিস খেলেছে। তৃতীয় সেট টাইব্রেকারে হারার পিছনে ফেডেরারের যত না বেশি লং র‌্যালিতে যাওয়াটা কারণ, তার চেয়েও বেশি কারণ, দু’বার ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা। এমনকী টাইব্রেকারেও ম্যাচ পয়েন্ট খুইয়েছে। মারেও সেই সময় নিজেকে অনেকটা ফিরে পাচ্ছিল। আসলে বত্রিশের ফেডেরার এখন যত বেশি শর্ট র‌্যালি খেলবে, প্রতিপক্ষের তত অসুবিধে। তেমনই যত বেশি লং র‌্যালি খেলবে তত বিপক্ষের সুবিধে। কিন্তু সব ধারণাকে অমূলক করে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন চতুর্থ সেটে উড়িয়ে দিল তার মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীকে।

হতাশা: ছিটকে গিয়ে মারে

স্বস্তি: অভিষেকে কোচ এডবার্গ
নাদালও অবাক করে দিল! সিঙ্গলসে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ও-ই প্রথম তিন বাছাইদের মধ্যে একমাত্র টিকে থাকা প্লেয়ার এ বারের সেমিফাইনাল লাইন-আপে। আরেকটু হলে অস্ট্রেলীয় ওপেনে টানা চার দিনে চার নম্বর ইন্দ্রপতনও বুধবার ঘটে যেত। নাদালের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট প্রতিপক্ষ দিমিত্রভের পেশাদার ট্যুরে যতটা পরিচিতি শারাপোভার ‘স্টেডি বয়ফ্রেন্ড’ হিসেবে, ঠিক ততটাই ছেলেটা আমাদের মতো টেনিস বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিচিত ‘বেবি ফেড’ ডাকনামে। চেহারায় আর খেলায়, দুটোতেই রজার ফেডেরারের সঙ্গে মিল আছে। এ দিন জীবনের প্রথম গ্র‌্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত খেলল। নাদাল বলেই এক সেট পিছিয়ে এবং তৃতীয় সেটে তিন-তিনটে সেট পয়েন্ট থেকে রক্ষা পেয়ে ৩-৬, ৭-৬ (৭-৩), ৭-৬ (৯-৭), ৬-২ ম্যাচ বার করেছে। সত্যিই, এ দিন নাদাল নিজেকে ‘লাকি’ ভাবতেই পারে। একইসঙ্গে প্রবল সাহস আর সহনশীলতার জন্যও নাদালের বাহবা পাওয়া উচিত। কেননা তৃতীয় সেটে মোক্ষম সময়ে বিপক্ষ যেমন আনফোর্সড এররের হ্যাটট্রিক করেছে, তেমনই নাদাল নিজের সার্ভিস-হাত, মানে বাঁ হাতের তালুর বিশাল ফোস্কার যন্ত্রণাকেও সারাক্ষণ সামলে ম্যাচ জিতেছে। নিজে টেনিসটা খেলেছি বলেই আমি নিশ্চিত, সার্ভিস করার সময় নাদাল বেশ ভালই যন্ত্রণা পেয়েছে। যন্ত্রণায় র‌্যাকেট হাত থেকে পড়ে যাওয়ার মতো ওর অবস্থা যদি হয়ে থাকে, তা হলেও অবাক হব না।
তা সত্ত্বেও এক দিনের বিশ্রামের পর শুক্রবার নাদাল-ই আমার মতে ফেডেরারের বিরুদ্ধে ফেভারিট। বাঁ হাতির শটের স্বাভাবিক বাড়তি অ্যাঙ্গেলের পাশাপাশি নাদালের অসমসাহস ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। যেমন বেশির ভাগ সময় ঘটেছে এই গ্রেট রাইভ্যালরিতে।

যন্ত্রণা: নাদালের হাত এখন যেমন
“আমি আজ সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম বলেই জিতেছি। তবে সেটা আজই।
পরের দিনটা নতুন দিন। সেমিফাইনালটাও নতুন ম্যাচ।” —
নাদাল না হোক, কাগজে-কলমে চতুর্থ নক্ষত্রপতন কিন্তু এ দিন হল। গত দু’বারের মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন আজারেঙ্কা কোয়ার্টার ফাইনালে হারায়। জকোভিচের মতোই মেলবোর্ন পার্কে বহু ম্যাচ পর আজারেঙ্কা হারের মুখ দেখল। তার চেয়েও আমার কাছে বেশি তাৎপর্যের, এত উঁচু পর‌্যায়ের ম্যাচের মীমাংসাসূচক তৃতীয় সেটে একটাও গেম বিপক্ষকে না দিয়ে রাডওয়ানস্কার ‘লাভ’-এ জেতা! ৬-১, ৫-৭, ৬-০। অস্ট্রেলীয় ওপেন এ বার মেয়েদের নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছেই। লি না, বাউচার্ড, রাডওয়ানস্কা, সিবুলকোভা—চার সেমিফাইনালিস্ট মেলবোর্নে কখনও খেতাব জেতেনি। তবে লি না-র অন্য গ্র‌্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় ওকেই এখন ফেভারিট মনে হচ্ছে। আর আমার ডার্ক হর্স সিবুলকোভা।
ডাবলসে লিয়েন্ডার-স্টেপানেক জুটিকে চব্বিশ ঘণ্টা আগে ফেভারিট দেখালেও কোয়ার্টার ফাইনালে ওরা এ দিন ফরাসি জুটি লদ্রা-মাহুর কাছে হেরে গেল ২-৬, ৬-৭ (৪-৭)। স্রেফ প্রতিদ্বন্দ্বী টিমের অসাধারণ ধারাবাহিক সার্ভিস ভাঙতে না পারায়। গোটা ম্যাচে একটাও ব্রেক পয়েন্ট পায়নি লিয়েন্ডাররা। উল্টে প্রথম সেটে নিজেরা দু’টো সার্ভিস গেম হারায়। দ্বিতীয় সেটে লিয়েন্ডার-স্টেপানেক ভাল সার্ভিস করলেও টাইব্রেকারে ফের সেই অসাধারণ ধারাবাহিক ফার্স্ট সার্ভের দাপটে ম্যাচ জিতে নেয় লদ্রারা। ভাল খেললেও এ দিন প্রতিপক্ষ টিম আরও বেশি ভাল খেলায় হারল লিয়েন্ডাররা।

সিবুলকোভা:
মেয়েদের কালো ঘোড়া
সেমিফাইনালে
পুরুষ
নাদাল-ফেডেরার
বার্ডিচ-ওয়ারিঙ্কা
মেয়ে
লি না-বাউচার্ড
রাডওয়ানস্কা-সিবুলকোভা

ছবি: এএফপি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.