সেরেনা-বিদায়ের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মেয়েদের সিঙ্গলসে ফের ইন্দ্রপতন শারাপোভারও চতুর্থ রাউন্ডে হার! পুরুষ সিঙ্গলসে মহাঅঘটন না থাক, নাদাল শেষ আটে উঠলেন ম্যাচের কয়েকটা বিপজ্জনক মোড় সামাল দেওয়ার পাশাপাশি নিজের আচমকা গরম মেজাজকেও সামলে। অ্যান্ডি মারের তো শেষ আটে উঠতে চারটে সেটের পাশাপাশি পাঁচটা ম্যাচ পয়েন্টের দরকার পড়লই, সঙ্গে রাগের চোটে কোর্টের মধ্যেই নিজের র্যাকেট আছড়ে ভেঙে নিয়ম লঙ্ঘনের কোপেও পড়লেন।
কিন্তু এক মেগাতারকা যথেষ্ট কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও নিঃশব্দে, নিখুঁত খেলে মেলবোর্নের গ্র্যান্ড স্ল্যামে উপর্যুপরি এগারো বার কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখলেন বত্রিশ বছর বয়সেও! তিনি রজার ফেডেরার শেষ আটে মারের মুখোমুখি হওয়ায় জানিয়েছেন, ইভান লেন্ডলের ছাত্রকে হারাতে স্তেফান এডবার্গের টোটকা নিতে লম্বা সেশনে বসবেন। “গত বার সেমিফাইনালে মারের কাছে পাঁচ সেটে হেরেছিলাম। তাই এডবার্গের সঙ্গে এ বার এই ম্যাচের জন্য বসব। ওর কিছু জিনিস নেব, যেগুলো ওকে খেলোয়াড়জীবনে সাফল্য দিয়েছে। আমার সাফল্যের জন্য ও-ও কিছু জিনিস বলে দেবে, যা মারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব। সোজা কথা, পরের ম্যাচটা আমি একটু অন্য ভাবে খেলার কথা ভাবছি।” |
অন্য মেজাজে। সঙ্গাকে হারানোর পরে ঈগল নিয়ে ফেডেরার। ছবি: টুইটার।
|
‘টেনিসের মহম্মদ আলি’ (অনেকটা কিংবদন্তি বক্সারের মতো দেখতে) ফরাসি তারকা জো উইলফ্রেড সঙ্গার অতীতে একাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফেডেরার-বধের অভিজ্ঞতা থাকলেও সোমবার নৈশালোকোজ্জ্বল রড লেভার কোর্টে তাঁর ৩-৬, ৫-৭, ৪-৬ অসহায় হারকে টেনিসমহল বলছে, ‘ফেডেরারের হুলে বিদ্ধ সঙ্গা!’ অন্য দিকে, রজারের পরের মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী মারে অখ্যাত ফরাসি স্টিফেন রবার্টকে হারাতে গিয়ে এ বারের টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম সেট খোয়ান। স্বীকার করেন, “ওর খেলা দেখতে মজা লাগলেও ওর বিরুদ্ধে খেলতে মোটেই মজা লাগে না। বেশ গড়বড়ে প্লেয়ার। ওর প্রায় কোনও শটই কপিবুক টেনিস শট নয়।”
নাদালও নিশিকোরিকে দু’টো টাইব্রেকার সেটে হারিয়ে স্বীকার করেন, “জাপানি ছেলেটাকে আমি খুব শিগগির বিশ্বের প্রথম দশে দেখতে পাচ্ছি।” পাশাপাশি শীর্ষ বাছাই একহাত নেন ম্যাচের চেয়ার আম্পায়ারকে। তৃতীয় সেটের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নাদাল নির্ধারিত ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় দুটো পয়েন্টের ভেতর নেওয়ায় আম্পায়ার ‘সময় লঙ্ঘনের’ অপরাধে তাঁকে সতর্ক করেন। ক্ষিপ্ত নাদাল পরে বলেন, “সতর্ক করেছে, বেশ করেছে। কিন্তু সতর্ক করার সময়টা নিয়েই আমার প্রবল আপত্তি। আরে, তুমি ম্যাচের অন্য কোনও সময়েও তো আমাকে বলতে পারতে। তৃতীয় সেটে ওই সময়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি আজ হারলে ওটাই কিন্তু টানির্ং পয়েন্ট হয়ে যেত!” |
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে
মারিয়া শারাপোভা। সোমবার মেলবোর্নে। ছবি: এএফপি।
|
নাদালের শেষ আটে প্রতিপক্ষ প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামে এই অবধি ওঠা দিমিত্রভ। বুলগেরীয় বয়ফ্রেন্ড এখনও অস্ট্রেলীয় ওপেনে টিকে আছেন বলেই শারাপোভাকে এ দিন হেরেও যেন তেমন বিষণ্ণ দেখায়নি! তৃতীয় বাছাই রুশ টেনিস সুন্দরীকে যথেষ্ট পরিণত খেলে এবং দরকারের সময় স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রেখে হারান ২০ নম্বর বাছাই স্লোভাক তরুণী সিবুলকোভা। ৩-৬, ৬-৪, ৬-১। সেরেনার মতোই শারাপোভা হারের জন্য নিজের চোটকে দায়ী করেছেন। “ফিটনেস সমস্যা কাটিয়ে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলতে যে পেরেছি, সেটাই আমার চোখে নিজের সাফল্য। তবে কাঁধের পুরনো চোটের সমস্যা আজও ভুগিয়েছে। যেটা সবচেয়ে ভাল জানে আমাকে যে হারিয়েছে সে-ই। সিবুলকোভা তৃতীয় সেটে সুযোগটার পুরো ফায়দা নিয়েছে।”
টেনিস সার্কিটের প্রিয় মাশা-র বিদায়ে খেতাবের রাস্তা গত বারের চ্যাম্পিয়ন আজারেঙ্কার (এ দিন চতুর্থ রাউন্ডে স্লোয়ানে স্টিফেন্সকে মাত্র পাঁচ গেম দিয়ে উড়িয়ে দেন) সামনে আরও পরিষ্কার হয়ে গেল বলে ভাবছে টেনিসমহল। কোয়ার্টার ফাইনালে দ্বিতীয় বাছাই আজারেঙ্কার সামনে যদিও পাঁচ নম্বর বাছাই এবং প্রবল লড়াকু রাডওয়ানস্কা, কিন্তু শেষ আটে বাকিদের মধ্যে না লি ছাড়া সবই অনিয়মিত নাম। সিমোনা হালেপ, পেনেত্তা-র মতো নামগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালে বিরলই! |