মঙ্গলবার রাতে কলকাতার উপরে বায়ুপ্রবাহ ছিল অন্য দিনের থেকে কিছুটা আলাদা। একটা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকছিল, অন্য একটা বেরিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে হঠাৎ করেই পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়েছিল এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস। মঙ্গলবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরের ট্রান্সমিসোমিটার দেখাচ্ছিল দৃশ্যমানতা ৭০০ মিটার। ৫ মিনিট বাদেই তা নেমে যায় ৫০ মিটারে। মাটির উপরে ৫০ মিটার পর্যন্ত ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বিমানবন্দরের আশপাশে জলাজমি থাকায় পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়া জলীয় বাষ্প আরও ঠান্ডা হয়ে নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। তাই নিমেষে অন্ধকার নেমে আসে। দৃশ্যমানতা ঝপ করে অনেকটা নেমে যায়। এর জেরে বিমানবন্দরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের বিমান ওঠানামা। আকাশে থাকা বিমানগুলি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। যেগুলি ওড়ার অপেক্ষায় ছিল, সেগুলিও ওড়েনি।
মঙ্গলবার রাতে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ডিউটিতে থাকা বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “২৫ বছর ধরে চাকরি করছি। ৫ মিনিটের মধ্যে আচমকা এ রকম কুয়াশার দাপট কখনও দেখিনি। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে রাতের আকাশে চাঁদ-তারা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। অথচ মাটি থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না কিছুই।”
আবহবিদেরা বলছেন, মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দরের মধ্যেই এমনটা বেশি হয়েছিল। বিমানবন্দরের জলাজমিগুলির জন্যই বায়ুমণ্ডলের জলকণা এ ভাবে ঘন হয়ে নেমে আসে। মাটির কাছে আবহবিদদের কারও কারও ব্যাখ্যা, তবে মঙ্গলবার রাতে যেটা হয়েছে, তা সচরাচর হয় না বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। আগে থেকে তার ইঙ্গিতও মেলেনি। তাই সতর্ক করা যায়নি কোনও বিমানকেই।
তবে খুব কম সময়ের জন্যই দৃশ্যমানতা ৫০ মিটার ছিল বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তবে, ধীরে ধীরে তা বাড়লেও রাতের মধ্যে বিমান ওঠানামার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বুধবার ভোর পাঁচটায় দৃশ্যমানতা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মিটার। তার পরে ফের বিমান ওঠানামা শুরু হয়।
তবে মঙ্গলবার রাতের ওই অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। তাঁরা জানান, অনেক ঝুঁকি নিয়েই দু’টি বিমান নামে। এক অফিসারের কথায়, “মঙ্গলবার রাতে কুয়াশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই থেকে স্পাইস জেট ও ইন্ডিগোর উড়ান কলকাতার এত কাছে চলে এসেছিল যে শেষ মূহূর্তে মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র উড়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কুয়াশা যেহেতু নীচের দিকে ছিল, তাই ওই দুই বিমানের পাইলট উপর থেকে রানওয়ের আলো দেখতে পান। তখনই নামতে শুরু করেন। রানওয়েতে নামার পরে দুই বিমানের পাইলট বুঝতে পারেন, কতটা ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের নামতে হয়েছে।”
|