রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক ছিল। দৃশ্যমানতা ছিল বিমান নামানোর উপযোগী। হঠাৎ কলকাতা বিমানবন্দরের দখল নিল গাঢ় কুয়াশা। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে নেমে পড়া দু’টি বিমানের দুই পাইলটই তখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় টানটান গোটা বিমানবন্দর। শেষ পর্যন্ত এটিসি এবং পাইলটদের তৎপরতায় রক্ষা পেল দু’টি বিমান। হাঁপ ছাড়লেন যাত্রীরাও।
মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিমানবন্দরে। রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিমান ওঠানামায় কোনও সমস্যা আছে বলে মনে হয়নি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র। কিন্তু রাত ১০টা ২৪ মিনিটে মুম্বই থেকে আসা স্পাইসজেটের বিমান রাজারহাটের দিক থেকে নামার সময়েই পড়ে যায় ঘন কুয়াশার মুখে। পাইলটের কাছে প্রধান রানওয়ে তখন ঝাপসা। ঝুঁকি নিয়েই কোনও মতে রানওয়েতে নেমে যদি বা ট্যাক্সি-বে পর্যন্ত পৌঁছলেন, তার পরে সবই অন্ধকার। রানওয়ে গ্রাস করেছে কুয়াশা। পাইলট অসহায়ের মতো এটিসি-কে বলেন, “কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোন দিকে যাব, বুঝতে পারছি না। পথ দেখান।” এটিসি ‘ফলো মি জিপ’ (আলো লাগানো যে-জিপ বিমানকে পথ দেখায়) পাঠায়। সেই জিপের মাথায় ঝিলিক দিতে থাকা আলোয় পথ দেখে গন্তব্যে পৌঁছয় সেই বিমান।
কিন্তু বিপদ তখনও পিছনেই। কারণ, কুয়াশার অন্ধকারের মধ্যেই তত ক্ষণে রানওয়েতে নেমে পড়েছে মুম্বই থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি বিমান। সেটির পাইলট এটিসি-কে জানান, সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিপদ ঘটে যেতে পারে। এটিসি তৎক্ষণাৎ সেই বিমানকে রানওয়ের উপরেই থেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। স্পাইসজেটের বিমানটিকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার পরে ‘ফলো মি জিপ’ ইন্ডিগোর বিমানকে পথ দেখাতে এগিয়ে যায়। রানওয়েতে তখন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সেই বিমান। কী হয়েছে, বুঝতে না-পেরে যাত্রীরা উৎকণ্ঠিত। জিপের আলোই পথ দেখিয়ে ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয় সেই বিমানকে।
বিমানবন্দর সূত্রে বলা হয়, বিপদ ঘটতে পারত দু’ভাবে। প্রথমত, ঠিক সময়ে প্রথম বিমানটিকে না-সরালে এবং দ্বিতীয় বিমানটিকে রানওয়েতে দাঁড় করিয়ে দিতে না-পারলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। দ্বিতীয়ত, এটিসি-র জিপ যথাসময়ে পথ না-দেখালে বিমান যেখানে-সেখানে গোঁত্তা মেরে দুর্ঘটনায় পড়ত। বরাতজোরে দু’টোই এড়ানো গিয়েছে।
কিন্তু এমনটা হল কেন? মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মূর্তিমান বিপদের মতো গাঢ় কুয়াশাই বা এল কী ভাবে?
বিমানবন্দরের এক অফিসার জানান, রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যমানতা ছিল ৭০০ মিটার। কলকাতা বিমানবন্দরে ক্যাট-২ প্রযুক্তি থাকায় ৩৫০ মিটার পর্যন্ত দৃশ্যমানতা থাকলেও বিমান চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়। কিন্তু এ দিন মাত্র পাঁচ মিনিটেই দৃশ্যমানতা নেমে যায় ৫০ মিটারে। ফলে বিমান চলাচলের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। মাত্র পাঁচ মিনিটে ঘন কুয়াশা ঝেঁপে আসায় বিমানবন্দরে নামার জন্য প্রস্তুত সব উড়ানকে খবর দেওয়া যায়নি। তত ক্ষণে ইন্ডিগো ও স্পাইসজেটের বিমান দু’টি নেমে পড়েছিল। কুয়াশার এমন আকস্মিক হানা কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে পারবে হাওয়া অফিস। রাতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বিমানবন্দর যখন কুয়াশার দখলে, তখন নামবে বলে মাত্র ২০ মাইল দূরে আকাশে অপেক্ষা করছিল ঢাকা থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার অন্য বিমান। এটিসি তাকে নাগপুরে পাঠিয়ে দেয়। এ ভাবেই ৭-৮টি বিমানকে বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। |