মাত্র আধঘণ্টা উড়ে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে ভারতীয় সময় ১০টা নাগাদ ছেড়েছিল বিমান। কিন্তু সেই বিমান কলকাতায় পৌঁছল ১৪ ঘণ্টা পরে, বুধবার দুপুর বারোটায়!
কেন? কলকাতার মাথায় আসতেই এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানের পাইলট জানতে পারেন ঘন কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছে কলকাতার রানওয়ে। নামা যাবে না। মুখ ঘুরিয়ে বিমান নিয়ে চলে যান নাগপুরে। সেখানে নামেন রাত সওয়া বারোটায়। কলকাতার আকাশ পরিষ্কার হয় বুধবার ভোর পাঁচটা নাগাদ। সকাল ছ’টায় নাগপুর থেকে ছাড়ার কথা ছিল বিমানটির। কিন্তু ততক্ষণে পাইলট ও বিমানসেবিকাদের নির্ধারিত ডিউটির সময় উত্তীর্ণ হয়ে যায়। ফলে অন্য পাইলট ও বিমানসেবিকাদের পাঠিয়ে বিমানটি সকাল ১০টায় রওনা হয়। সেটি কলকাতায় নামে দুপুর ১২টায়।
ঢাকা-কলকাতা ওই উড়ানে ছিলেন আশিস ঘটক। তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে ছাড়ার সময়ে কি এরা জানতে পারেনি যে কলকাতার আবহাওয়া খারাপ? তা হলে তো এই দুর্ভোগটা সহ্য করতে হতো না।” কিন্তু আশিসবাবুর জানার কথা নয়, মঙ্গলবার রাতে কী বিচিত্র ব্যবহার করেছে আবহাওয়া। মাত্র পাঁচ মিনিট আগের হাল্কা কুয়াশা কী ভাবে ভোল পাল্টে এক নিমেষে ঘন অন্ধকারে ছেয়ে দিতে পারে! তাও তো কলকাতা থেকে পাঁচ মাইল দূরেই অবস্থা বেগতিক দেখে পাইলট মুখ ঘুরিয়ে উড়ে যান অন্যত্র। মঙ্গলবার রাতে তার আগেই পরপর মুম্বই থেকে উড়ে আসা ইন্ডিগো ও স্পাইসজেটের বিমান ওই ঘন কুয়াশায় ভয়ানক বিপদের মুখে পড়ে গিয়েছিল। ইন্ডিগোর পাইলট তো রানওয়েতে নামার পরে অসহায় ভাবে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানান, তিনি সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।
কলকাতায় নামতে না পেরে ঘন এই কুয়াশায় মুখ ঘুরিয়ে আশিসবাবুর বিমানের মতোই আরও আটটি বিমান অন্যত্র উড়ে যায়। সাম্প্রতিক অতীতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কলকাতায় আসা এতগুলি বিমানের অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। এর মধ্যে দেশীয় বিমান যেমন ছিল তেমনই ছিল বিদেশি বিমান। মঙ্গলবার যাত্রীদের নিয়ে সেই বিমানগুলি দেশ-বিদেশের অন্য বিমানবন্দরে গিয়ে নেমেছে। সারা রাত চূড়ান্ত হয়রানির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।
আশিসবাবুর অভিযোগ বেশ গুরুতর। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত সওয়া বারোটায় তাঁদের নাগপুরে নামানোর পরে কোনও খাবার এমনকী, পানীয় জলও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “নাগপুরে প্রথমে আমাদের বিমান থেকে নামতে দেওয়া হচ্ছিল না। ঝগড়াঝাঁটি করে নেমে আসি। বেশির ভাগই বিদেশি যাত্রী। তার পরে সারা রাত ওই হেনস্থা।” বুধবার সকাল ৬টায় বিমান কলকাতার উদ্দেশ্যে ছাড়বে বলে জানানো হলেও তা ছাড়ে বেলা দশটায়। আশিসবাবুর কথায়, “পাসপোর্ট জমা রেখে বাইরে গিয়ে খাবার কিনতে যেতে চেয়েছিলাম। তা-ও যেতে দেয়নি।”
হয়রানির অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছে শান্তিনিকেতনের ছাত্রী সিঞ্চিতা মাজির। মঙ্গলবার রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। তাঁর বাবার অফিসের সহকর্মী ও তাঁদের পরিবার নিয়ে মোট ৯৮ জন একসঙ্গে যাচ্ছিলেন বেড়াতে। কিন্তু যে বিমান মালয়েশিয়া থেকে এসে তাঁদের নিয়ে যাবে, সেটি ততক্ষণে কলকাতায় না নেমে কুয়াশার জন্য ইয়াঙ্গন চলে গিয়েছে। সিঞ্চিতার কথায়, “রাত পৌনে একটায় কলকাতা থেকে বিমান ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু সওয়া বারোটা থেকে বিমানবন্দরের ডিসপ্লে বোর্ডে দেখাতে শুরু করে উড়ান বাতিল করা হয়েছে। অথচ অফিসারেরা এসে বলছিলেন, যাবে। কিন্তু দেরি হবে।” কখন উড়ান ছাড়বে, তা নিয়ে সারা রাত ধোঁয়াশায় কেটে যায়। তবে তাঁরা রাতে খাবার পান। পরে নিজেদেরই হোটেলের ব্যবস্থা করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। বুধবার বিকেল তিনটে নাগাদ তাঁদের উড়ান ছাড়ে।
|