অনুশীলন শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে হোটেলে ফিরে গেলেন মোগা। পেটের গণ্ডগোল। রাতে ক্ষীণ গলায় বললেন, “ওষুধ খেয়ে একটু সুস্থ হয়েছি। খুব দুর্বল লাগছে। তবু কাল খেলব। খেলতেই হবে।”
মাঠের পাশে বসে সারাক্ষণ অনুশীলন দেখলেন তিন ফুটবলার—নওবা, গুরবিন্দর, জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজ। তিন জনেরই চোট। শেষ দু’জনের পরিবর্ত আছে টিমে। নওবার ঠিকঠাক বদলি নেই। নওবা না খেললে, রাজু গায়কোয়াড় বা খাবরা খেলবেন। শেষ জনকে কিন্তু তো ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসাবে ভেবে রেখেছেন দলের কোচ।
কিন্তু এ সব নিয়ে যাঁর ভাবার কথা সেই আর্মান্দো কোলাসো আবার মাঠে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে কার্যত স্লোগান তুলে দিয়েছেন, ‘হয় তিন পয়েন্ট আনো, না হলে ব্যাগ গুটিয়ে বাড়ি চলো।’
ফেড কাপে গত বারের চ্যাম্পিয়নদের অবস্থা এখন সে রকমই। স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে জিততে পারলে চিডিরা টিঁকে থাকবেন। ড্র করলে তাকিয়ে থাকতে হবে কালকেরই দ্বিতীয় ম্যাচের দিকে। যে ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি খেলবে রাংদাজিদের সঙ্গে। ইস্টবেঙ্গল ড্র করল আর সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু জিতল—এ রকম হলে ব্যাগ গুছিয়ে এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরতে হবে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। “না জিতলে তো বাড়ি যেতেই হবে,” বলছিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ।
কেন জেতার চেয়েও ড্র নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে ইস্টবেঙ্গল হোটেলে। কারণ সাম্প্রতিক কালে গোয়ার এই ক্লাবটিকে হারাতেই পারেনি ইস্টবেঙ্গল। শিলিগুড়ি ফেড কাপের পর চার বার ইস্টবেঙ্গল-স্পোর্টিং ম্যাচ হয়েছে। প্রতি বারই পয়েন্ট ভাগ করে নিয়েছে দু’দল। |
হাসি ফেরার অপেক্ষায় ইস্টবেঙ্গল। |
‘ডু অর ডাই নয়, কাল ডু ফর লাইফ’ বলতে বলতে টিম বাসে উঠে পড়লেন এডে চিডি। বুধবার রাংদাজিদ ম্যাচে পেনাল্টি নষ্ট করেছিলেন। কোনও টেনশন নেই। “কাল পেনাল্টি পেলে আবার মারব। গোল নষ্ট করি যেমন, গোল করিও,” বলার সময় বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয় নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলার সুবাদে ইস্টবেঙ্গল টিমটার মধ্যে একটা এমন একাত্মতা গড়ে উঠেছে যে, পাহাড় প্রমাণ চাপের মুখেও অদ্ভুত রকম শান্ত থাকেন চিডি-উগারা। ট্রেভর মর্গ্যান চলে যাওয়ার পর আর্মান্দো কোলাসোর জমানাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
আর্মান্দো নিজে অবশ্য বাস্তবের মুখোমুখি। দীর্ঘদিন গোয়ায় কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, জেতা সহজ হবে না। “দুলেরে শেষ ম্যাচে ওরা ভাল খেলেছিল। আই লিগেও ওরা খুব ভাল জায়গায়। ফলে জিততে হলে আরও ভাল খেলতে হবে আমাদের।” মাঝমাঠ সংগঠিত করতে এ দিন অনুশীলনে দীর্ঘক্ষণ ব্যয় করলেন তিনি। মাঝমাঠে কিছু বদলও হচ্ছে। লোবো ফিরছেনই, খাবরা রাইট ব্যাক খেললে সুবোধকুমারও ঢুকতে পারেন টিমে। কিন্তু তাতেও কতটা সুবিধা হবে চিন্তায় রয়েছেন আর্মান্দো। বলছিলেন, “ফেড কাপ না জিতলে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে না। বহু দিন ইস্টবেঙ্গল আই লিগ পায়নি, ওটা জেতাই আমার আসল লক্ষ্য। সামনে আইএফএ শিল্ড আছে। নক আউট টুর্নামেন্টে অঘটন ঘটে।”
স্পোর্টিং বধের অঙ্ক কষার জন্য এ দিনও পুরো মাঠ পাননি আর্মান্দো। মঞ্জেরিতে পরিকাঠামো না দেখেই ফেড কাপ ফেলেছে ফেডারেশন। ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন মাঠে দেখা গেল গরু চরছে। গোবরে ভর্তি। পরিষ্কারের লোকও নেই। মাল্লাপুরম স্পেশ্যাল পুলিশের এই মাঠে লাল মাটির ধুলো উড়ছে বলে শট মারলে। বল মারার পর নাক চাপা দিচ্ছিলেন উগারা। আর্মান্দো সব সমস্যা মানিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রদের পড়াশুনারই যদি সঠিক পরিকাঠামো না থাকে তা হলে পরীক্ষায় ভাল ফল হবে কী করে? |