পড়ন্ত বিকেলে হোটেলের লনে হালকা স্ট্রেচিং করছিলেন সুয়োকা, গুরবিন্দর, তুলুঙ্গারা। তাঁদের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তা বলে অপেক্ষমান গাড়িটায় উঠে পড়লেন আর্মান্দো কোলাসো। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “স্পোর্টিং ক্লুব ভাল দল। কঠিন ম্যাচ। ওরাও টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে সর্বশক্তিতে ঝাঁপাবে। জিততে চাইবে। আমাদেরও জিততে হবেই। ম্যাচটা কিন্তু জমবে।” কোথায় উত্তেজনা? কোথায় চাপ? পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ যেন নিজের মেজাজেই। ডেম্পোয় যেমন থাকতেন। লাল-হলুদে এসেও যে বদলায়নি।
পাহাড় ঘেরা মাল্লাপুরমের ইস্টবেঙ্গল শিবিরে ঢোকার মুখে বড় একটা ব্যানার টাঙানো, আর্মান্দোর দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল রাংদাজিদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ ড্র করার পর লাল-হলুদ সমর্থকরা যে ভাবে ফেসবুকে আশঙ্কিত মন্তব্য করছেন তার লেশমাত্র নেই দলের ভেতর নেই। বরং অধিনায়ক হরমনজিৎ খাবরা থেকে দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার সৌমিক দে সবার মুখে বাজছে আত্মবিশ্বাসের এক জোরালো সিডি। “যে বার আমরা ফেড কাপের প্রথম ম্যাচ ড্র করি সে বারই ফাইনাল খেলি। চ্যাম্পিয়ন হই।” কথা শুনে বোঝা যাচ্ছিল, লাল-হলুদ হোটেলের ঘরে-ঘরে এই অদৃশ্য সিডি ঘুরে চলেছে নিরন্তর। আত্মবিশ্বাস জোগাতে। আশঙ্কা থেকে দূরে থাকতে। চাপ কমাতে। |
কুংফু নয়, স্ট্রেচিং। হোটেলের লবিতে সুয়োকা-তুলুঙ্গা।
দর্শক সৌমিক। বৃহস্পতিবার মঞ্জেরিতে। —নিজস্ব চিত্র |
পরিসংখ্যানও চিডি-মোগাদের দাবির পক্ষেই। ২০০৯ গুয়াহাটি ফেড কাপে ভিভা কেরলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টবেঙ্গল। ২০১১ কলকাতা ফেড কাপে মহমেডানের সঙ্গে আটকে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলেছিল লাল-হলুদ। গত বার শিলিগুড়িতে ফাইনালে গ্যালারি জুড়ে মশাল জ্বলেছিল। সেখানেও প্রথম ম্যাচে এই স্পোর্টিং ক্লুবের সঙ্গেই ড্র করে ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল। পরিসংখ্যান মাঝেমাঝে আত্মবিশ্বাস জোগায় ঠিক। কিন্তু তার সব সময় ধারাবাহিকতা নেই। উলটপুরাণেরও অসংখ্য উদাহরণ আছে হাতের কাছেই। সে জন্যই সম্ভবত বাস্তবের জমিতে হাঁটতে চাইছেন দেশের সফলতম কোচ। কোলাসো বললেন, “পরের দু’টো ম্যাচ জিতলেই তো আমরা সেমিফাইনাল যাব। গ্রুপের যা অবস্থা তাতে রাংদাজিদ ম্যাচ জিতলেও স্পোর্টিং বা বেঙ্গালুরুকে সেই হারাতেই হত আমাদের। এখনও সেই লক্ষ্যের সামনেই দঁড়িয়ে আমরা। তবে এখন স্পোর্টিং ম্যাচটা ডু অর ডাই আমাদের কাছে।”
স্টেডিয়াম দর্শকে উপচে পড়লেও মঞ্জেরির মাঠে আলো কম। অভিযোগ প্রায় সব দলের। তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল কোচ। তিনি চিন্তিত বরং নিজেদের মাঝমাঠ নিয়ে। যা তাকে খুশি করতে পারেনি প্রথম ম্যাচে। আর্মান্দোর স্বভাব হল সত্যি কথাটা মাঝেমধ্যে সোজা-সাপটা বলে দেন। যা নিয়ে বিতর্ক হয়। যেমন এ দিন তিনি বলছেন, “আমরা বড্ড বেশি লং বল খেলছি। সেটার জন্য আমিও দায়ী।”
পুরো টিমকে অনুশীলন না করিয়ে এ দিন বিশ্রামের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। হোটেলের বাইরে বেরনোও বারণ ছিল চিডিদের। তবে স্ট্রেচিং, জিম করেছেন ফুটবালাররা। ডার্বি ম্যাচ হারের পর ফেড কাপে প্রথম ম্যাচেই ড্র। কলকাতা লিগ জয়ের মধুচন্দ্রিমা কাটিয়ে সমালোচনার স্ফুলিঙ্গ ইতিউতি যে উড়তে শুরু করেছে টের পাচ্ছেন আর্মান্দো। গোয়ায় যে চাপ ছিল না, সেটা কলকাতার প্রধানে যে এত তাড়াতাড়ি এত প্রবল ভাবে ধাক্কা দেবে তা হয়তো ভাবেননি গোয়ান ভদ্রলোক। সে জন্যই স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে শনিবারের ম্যাচ জেতা তাঁর কাছে অগ্নিপরীক্ষা।
সঞ্জয় সেনের আবার কোলাসোর মতো সমস্যা নেই। মহমেডান কোচের সমস্যা অন্য জায়গায়। সেমিফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত করতে কাল ভবানীপুরের বিরুদ্ধে পেন-জোসিমারদের জিততেই হবে। কিন্তু এমন গুরত্বপূর্ণ সময়েই ক্লাবের ফুটবলারদের চেক বাউন্স করেছে। কর্তারা দ্রুত সেই সমস্যার সামাধান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগুন ধামাচাপা দিলেও তার প্রভাব পড়তে পারে ম্যাচে। মহমেডান কোচ অবশ্য বললেন, “ফেড কাপ সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য আমরা তৈরি।” |
শুক্রবার ফেডারেশন কাপ
মহমেডান স্পোর্টিং: ভবানীপুর (মঞ্জেরি, বিকেল ৫-০০)
ইউনাইটেড স্পোর্টস: পুণে এফসি (কোচি, বিকেল ৪-০০)
চার্চিল ব্রাদার্স: ঈগলস এফসি (কোচি, সন্ধে ৭-০০)
ডেম্পো: ইউনাইটেড সিকিম (মঞ্জেরি ৭-৩০)। |