ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিংসা, হানাহানি কিছুতেই থামছে না। সোমবার বাংলার দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত অন্তত চারটি কলেজে ছাত্রভোটকে ঘিরে গোলমাল বাধে। সেগুলো হল কলকাতার মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ, শিলিগুড়ির সূর্য সেন মহাবিদ্যালয়, বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয় এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ।
সোমবার ছিল মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। এসএফআইয়ের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে তাদের সমর্থকেরা মেট্রো স্টেশনে ঢোকার পরে টিএমসিপি-র এক দল কর্মী-সমর্থক তাঁদের উপরে চড়াও হয়। এসএফআই নেতা শ্রীজিৎ গোস্বামী বলেন, “টিএমসিপি আমাদের সমর্থকদের বেধড়ক মেরেছে।” তিনি জানান, আক্রান্ত ছাত্রদের বাঁচান স্টেশনের আরপিএফ-কর্মীরা। তাঁরাই এসএফআই-সমর্থকদের কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দেন এবং পুলিশেরই সাহায্যে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফেরেন।
এ দিন পর্যন্ত কলকাতায় ৯০টির মধ্যে ৮-১০টি কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে এসএফআই। তা-ও সংশ্লিষ্ট কলেজের মোট আসনের মাত্রই কয়েকটিতে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, টিএমসিপি-র বাধায় তারা মনোনয়নপত্র তুলতে কিংবা জমা দিতে পারেনি। অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি-র দাবি, সংগঠনগত দুর্বলতার জন্যই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি এসএফআই।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির পরে এ দিন ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হয়। টিএমসিপি-র দাবি, ৮৭৬টির মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তারা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানান, ছাত্রছাত্রীদের নাম, রোল নম্বর ও পাঠ্যক্রমের নাম ছাড়া ছাত্র সংগঠনের নাম মনোনয়নপত্রে থাকে না। তাই এই দাবি কত দূর সত্য, সেই বিষয়ে এখনই মন্তব্য করছেন না তাঁরা।
শিক্ষার অঙ্গনে হিংসা রুখতেই কিছু দিন ছাত্রভোট বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পরে পুলিশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু পুলিশি ব্যবস্থা সত্ত্বেও হাঙ্গামা ঠেকানো যাচ্ছে না। মনোনয়নপত্র তোলার দিন বলে সোমবার সকাল ১০টা থেকেই শিলিগুড়ির সূর্য সেন মহাবিদ্যালয় ও বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই মহাবিদ্যালয়ে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি ছিল। কিন্তু ঝামেলা এড়ানো যায়নি।
সূর্য সেন কলেজে বেলা ১২টা নাগাদ মনোনয়নপত্র তোলা শুরু হয়। সব আসনের জন্যই মনোনয়নপত্র তোলে টিএমসিপি। এসএফআইয়ের পড়ুয়ারা আসামাত্র কলেজ-চত্বরে ঢোকার মুখে একটি স্কুলমাঠে তাঁদের আটকে রেখে টিএমসিপি ঢিল ছোড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস। টিএমসিপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসএফআই সূত্রের খবর, ৫৫টির মধ্যে মাত্র তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছে তারা।
মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে বাগডোগরা কলেজেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে এসএফআইয়ের হাতাহাতি হয়। এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা শেষ পর্যন্ত বাগডোগরা থানা ঘেরাও করেন। বিরোধীদের অভিযোগ মানতে রাজি নন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “ওই অভিযোগ ঠিক নয়। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখব।” বিকেলে নতুন করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায়কে ঘণ্টা দুয়েক ঘেরাও করে টিএমসিপি।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এসএফআই সব জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারছে কি না, টিএমসিপি সর্বত্র জিতছে কি না, জানা নেই। তবে আমার মতে, বিরোধী দলকে মনোনয়নপত্র পেশ করতে দেওয়া এবং জেতা-হারায় ভারসাম্য রাখা উচিত।” |