ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রির দাবি উঠেছে অনেক আগেই। অবশেষে ওই সংস্থার মালিকানাধীন বৈদ্যুতিন চ্যানেল বিক্রির মাধ্যমে তার সূচনা হচ্ছে। শ্যামল সেন কমিশনই ওই চ্যানেল বিক্রি করবে বলে সোমবার জানানো হয়েছে। ভরাডুবির পরে এই প্রথম সারদা সংস্থার কোনও সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
আপাতত সারদা সংস্থার ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড (বিডব্লিউডব্লিউ)-এর তারা নিউজ, তারা মিউজিক, তারা পঞ্জাবি এবং টিভি সাউথ এশিয়া এই চারটি চ্যানেল বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এ দিন কমিশনে হাজির হয়ে জানিয়ে দেন, ওই চ্যানেল বিক্রির ব্যাপারে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। সেই অনুসারেই আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে কমিশন ওই সব চ্যানেল বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, তারা গ্রুপ ছাড়াও সারদা গোষ্ঠীর আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম একই পদ্ধতিতে বেচে দেওয়া হবে। তবে সেগুলো বিক্রির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ২৪ জানুয়ারি পরে।
কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু এ দিন বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থাকে দিয়ে নিলামে ওই সব চ্যানেল বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” কমিশন সূত্রের খবর, জেরা পর্ব শেষ হতেই এ দিনই নিলামের কাজে অভিজ্ঞ কেন্দ্রীয় সংস্থা মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেডিং কর্পোরেশন (এমএসটিসি)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন শ্যামলবাবু।
এক সময় সুদীপ্তের অধীনে থাকলেও সারদা গোষ্ঠীর বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারির পরে তারা মিউজিক, তারা নিউজ-সহ চারটি চ্যানেলই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে কর্মীরাই এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওই সব চ্যানেল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েক দিন আগে সারদার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করার কথা উঠতেই কমিশনের দ্বারস্থ হয় ওই অ্যাসোসিয়েশন। কমিশনের কাছে লিখিত আবেদনে জানানো হয়, ওই সম্পত্তি বিক্রি হওয়ার আগে পর্যন্ত যেন তাঁদের চ্যানেল বন্ধ করা না-হয়। শ্যামলবাবু জানান, ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই সুদীপ্তকে এ দিন আবার কমিশনে ডেকে পাঠানো হয়। হাজির থাকতে বলা হয় ওই সব চ্যানেলের আইনজীবীকেও।
শ্যামলবাবু ছাড়াও কমিশনের অন্য দুই সদস্য যোগেশ চট্টোপাধ্যায় ও অম্লান বসু এ দিনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। কমিশন সূত্রের খবর, চ্যানেলের কর্মীদের আর্জির কথা উঠতেই সুদীপ্ত জানিয়ে দেন, ওই আবেদনের ব্যাপারে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তার পরেই তিনি বলেন, “ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সম্পত্তি বেচে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করুক কমিশন।”
জেরা পর্বের প্রথমার্ধে মূলত ওই বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বিষয় নিয়েই প্রশ্নোত্তরের পালা চলে। যাঁরা সারদা সংস্থার তৈরি বাংলো ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি ওঠে তার পরেই। এ দিনের শুনানিতে এই ধরনের ১৬ জন আবেদনকারী হাজির ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট ফ্ল্যাট ও বাংলো তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
সারদার আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “আবেদনকারীরা ফ্ল্যাট বা বাংলোর দামের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা সারদার কাছে জমা দিয়েছিলেন। কমিশনের সামনে সারদা-প্রধান সুদীপ্ত এ দিন জানিয়ে দেন, বাকি টাকা ওঁরা কমিশনে জমা দিন এবং নিজেদের ফ্ল্যাট বা বাংলোর দখল নিন।” শ্যামলবাবু পরে জানান, ওই সব আবেদনকারীকে ২৪ জানুয়ারি বাকি টাকা দিতে হবে। তার পরেই ফ্ল্যাট ও বাংলোর স্বত্ব তুলে দেওয়া হবে তাঁদের হাতে। সারদা সংস্থার মালিক হিসেবে সুদীপ্তই সংশ্লিষ্ট দলিলে সই করবেন। শ্যামলবাবু বলেন, “বাংলো এবং ফ্ল্যাট মিলিয়ে মোট ১৬টি সম্পত্তি রয়েছে। এই খাতে বকেয়া রয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ২৪ তারিখে সেই টাকা দিতে হবে আবেদনকারীদের।
৮ জানুয়ারির শুনানিতে হাজির হয়ে সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা কমিশনে জমা দেবেন। এ দিন জেরা পর্বের শুরুতেই কমিশনের কাছে হাতে লেখা একটি তালিকা দেখান তিনি। তিনি জানান, জেলে বসেই তিনি ওই তালিকা তৈরি করেছেন। পরে শ্যামলবাবু জানান, তালিকাটি টাইপ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। |