আলোচনা হচ্ছে, বললেন ব্রাত্য
কেউ চান ছাত্রভোট রদ, কেউ কেউ স্থগিতের পক্ষে
ফেল করাদের পাশ করানোর দাবি, হাজিরা কম হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে দেওয়ার দাবি, যে-কোনও ছুতোনাতায় বিশৃঙ্খলা এমনিতেই রাজ্যের বেশির ভাগ কলেজে ছাত্র সংসদের এটাই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপরে ছাত্রভোট হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের হিংসা-হানাহানির সমার্থক। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্রভোটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ থাকার প্রয়োজনটা কী? তাঁদের কারও কারও মতে, সব কলেজে ছাত্রভোট পাঁচ বছর স্থগিত রেখে পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হোক রাজ্য সরকার। পাঁচ বছর পরে পর্যালোচনা করে দেখা যাবে, নির্বাচন করে ছাত্র সংসদ গড়ার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি না।
কী ভাবছে সরকার?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বুধবার বলেন, “শিক্ষক হিসেবে এবং ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ছাত্র সংসদগুলি যে-ভাবে চলছে, তাতে শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। কিন্তু সরকারের অংশ হিসেবে বলতে পারি, শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগে সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছাও।” তিনি জানান, এই নিয়ে আলোচনা দরকার। সরকার দ্রুত তা শুরু করে দিচ্ছে।
ক্যাম্পাসে হিংসা রুখতে ছাত্রভোট বন্ধ করার পক্ষপাতী বিশিষ্ট অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, “এত দিন দেখতাম, কলেজের ছেলেরা বহিরাগতদের সাহায্যে গোলমাল পাকাচ্ছে। কিন্তু গার্ডেনরিচের ঘটনায় ভিতরের ছাত্রদের যোগই নেই। তাঁদের থেকে বয়সে বড়, এলাকার রাজনীতিকেরাই এর সঙ্গে জড়িত। এটা গণ্ডগোলের নতুন ধারা।” দুনিয়া জুড়ে প্রথম সারির বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীরা সমস্যার কথা জানাতে শিক্ষকদের কাছেই যান, ছাত্র সংসদের দ্বারস্থ হন না। তিনি বলেন, “প্রার্থীদের ভর্তি করানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ক্রীড়া ইত্যাদির অজুহাতে চাঁদা তোলা আর ঠিকাদারদের থেকে কমিশন নেওয়া মূলত এই তিন পদ্ধতিতে ছাত্র সংসদ টাকা তোলে। সাধারণ পড়ুয়াদের ভাল-মন্দের সঙ্গে সংসদের কোনও সম্পর্কই থাকে না।” তাই তা রাখার মানে হয় না বলে ওই শিক্ষকের অভিমত।
প্রথাগত ছাত্র সংসদ না-থাকলে প্রতিষ্ঠান যে গোল্লায় যায় না, ক্ষতি হয় না পড়ুয়াদেরও সেই দৃষ্টান্ত হাতের কাছেই রয়েছে। ফি-বছর ছাত্রভোটে হানাহানির জেরে সংবাদ-শিরোনাম হত শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)। সেখানকার বর্তমান কর্তৃপক্ষ নির্বাচন বন্ধ রেখে সৃষ্টিমূলক কাজে পড়ুয়াদের যুক্ত করেছেন। ফলে কয়েক বছর ধরে শান্তি বিরাজ করছে বেসু-তে। উপাচার্য অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “প্রায় ১০০% ছাত্রছাত্রীই কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।”
খড়গপুর আইআইটি-তে দীর্ঘ কাল অধ্যাপনা করেছেন অজয়বাবু। তিনি জানান, আইআইটি-তে ছাত্রভোট হয়। কিন্তু তার সঙ্গে অন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করলে ভুল হবে। বাইরের দলীয় রাজনীতির স্পর্শ আইআইটি ক্যাম্পাসে নেই। ছাত্রভোটে তাই হিংসার প্রশ্ন ওঠে না। একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানান আইআইএম কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক অনুপ সিংহ। তিনি বলেন, “আইআইএমেও প্রতি বছর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়। অনেক বিতর্কসভা, আলোচনাসভায় উত্তপ্ত কথাবার্তা হয়। কিন্তু গোলমাল হয় না! কারণ সেখানে দলীয় রাজনীতি ঢুকতে পারে না।” তিনি চান, ছাত্রভোট থাক। কিন্তু নির্বাচনের পদ্ধতি বদলানো হোক।” সেই বদলের সুপারিশও রাজ্যের কাছে পৌঁছেছে প্রায় সাত মাস আগে। কার্যকর হয়নি।
কিন্তু আইআইটি, আইআইএমের মতো গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের বাইরে শত শত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভগৃহেই ঢুকে পড়েছে দলীয় রাজনীতি। তাই সেখানে ছাত্র সংসদ গড়া মানেই হিংসার আগুনে বাতাস দেওয়া বলে মনে করেন বহু প্রবীণ শিক্ষক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় চান, আপাতত পাঁচ বছরের জন্য সর্বত্র ছাত্রভোট বন্ধ রাখা হোক। সেই পাঁচ বছরে বেসু-র মতো ছাত্রছাত্রীদের সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে। তার পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঠিক হোক, ছাত্রভোটকে চিরবিদায় দেওয়া হবে কি না। তাঁর কথায়, “যদি দেখা যায় যে, ছাত্র সংসদ না-থাকায় পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরেছে, পড়ুয়াদের মধ্যেও সদ্ভাব গড়ে উঠেছে, তা হলে সংসদ না-থাকাই ভাল।” তাঁর প্রশ্ন, “অক্সফোর্ড, কেমব্রিজেও তো ছাত্র ইউনিয়ন আছে। সেখানে তো এমন হয় না! ভোটে পড়ুয়ারা সামাজিক, রাজনৈতিক নানা বিষয়ে তর্কবিতর্ক করেন। কিন্তু গুলি তো চলে না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.