মহাকরণের কেরোসিন-কাণ্ডে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রকাশনা বিভাগের রেজিস্ট্রার বিস্ময় রায়কে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করল রাজ্য সরকার। ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ব্যক্তিগত কাজে তিনি ছুটিতে থাকায় বুধবার বিস্ময়বাবুর বাড়িতে সাসপেনশনের নোটিস পৌঁছে দেওয়া হয়। পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না পৌঁছনো পর্যন্ত তাঁকে ছুটিতেই থাকতে বলা হয়েছে, জানান রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা।
স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর, বিস্ময়বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ:
• যথোপযুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে কার্যত একক সিদ্ধান্তে শ্রীরামপুরের জ্যোতির্ময় নন্দীকে প্রকাশনা বিভাগে কীটনাশক ছড়ানোর কাজে নিযুক্ত করা।
• কীটনাশক ছড়ানোর সময় নজরদারিতে গাফিলতি। যদিও রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, “সাময়িক বরখাস্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। বিভাগীয় তদন্ত চলাকালীন যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি কারও উপর প্রভাব খাটাতে কিংবা তথ্য বিকৃত করতে না পারেন, সেই কারণে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।”
বিস্ময় রায়। |
প্রশাসনের অন্য অংশ এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, কাজ করতে না দেওয়াটাই শাস্তির নামান্তর। সাসপেনশনে থাকার সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সচরাচর পুরো বেতন পান না। এ ক্ষেত্রে তা-ই যদি হয়, তা হলে কেন বিস্ময়বাবুর সাসপেনশনকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলা হবে না, প্রশ্ন প্রশাসনিক কর্তাদের। বিস্ময়বাবু অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। ছুটিতে থাকায় এ দিন মহাকরণেও আসেননি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, “আমি সরকারি কর্মী। সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করব না।” তবে বুধবার ফের তিনি বলেছেন, “আমার অবস্থান বদলায়নি। প্রথম দিন যা বলেছি, শেষ দিন পর্যন্ত সেটাই বলে যাব।”
পুলিশি তথ্য বলছে, ২৯ নভেম্বর সন্ধে ৬টা নাগাদ মহাকরণের জি ব্লকে স্বরাষ্ট্র দফতরের রেজিস্ট্রার অব পাবলিকেশনের ঘরে কেরোসিনের গন্ধ পান এক কনস্টেবল। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, মেঝেতে কেরোসিন ছড়িয়ে রয়েছে। তড়িঘড়ি নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মহাকরণে কেরোসিন ছড়িয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। তদন্ত শুরুর দু’দিন পরেই গ্রেফতার হন জ্যোতির্ময় নন্দী। পুলিশকে তিনি জানান, বিস্ময়বাবুর নির্দেশেই তিনি ওই বিভাগে অনেক দিন ধরে কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করছেন। কীটনাশকে কেরোসিন মিশিয়েই স্প্রে করতেন তিনি। আগুন লাগানোর কোনও অভিসন্ধি তাঁর ছিল না। এর পর বিস্ময়বাবুও প্রকাশ্যে জানান যে, তিনি জ্যোতির্ময়বাবুর কোনও অপরাধ দেখছেন না। বহু দিন ধরেই তিনি ওই বিভাগে কাজ করছেন। এই মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে সরকার। প্রশাসনের এক কর্তা এ দিন বলেন, “কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিস্ময়বাবুকে যে সাসপেন্ড করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত অনেক দিন আগে হলেও আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে কিছু সময় লেগে যায়।”
|