এ বার এসজেডিএ দুর্নীতি মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র (কেস রেকর্ড) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ওই নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আবেদনকারী সৌমেন বিশ্বাসের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আর্জির প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ঠিকাদারদেরও মামলায় পক্ষভুক্ত করার আদেশও দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। চার সপ্তাহের মধ্যেই মামলার শুনানি হবে। এর মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিতে হবে। এসজেডিএ, শিলিগুড়ির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকেও হলফনামা দিতে হবে।
ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটকের দায়ের করা জনস্বার্থের মামলায় এসজেডিএ সহ সব পক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তবে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব উচ্চ আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ দিন মামলাকারীর আইনজীবী সুব্রতবাবু বলেন, “এসজেডিএ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন সিইও তথা তৎকালীন মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতারের পর থেকে যা ঘটেছে তাতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই মামলার সিবিআই তদন্ত ও গোদালার জামিন খারিজের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে ডিভিশন বেঞ্চ মামলার যাবতীয় নথি তলব করেছে।” সুব্রতবাবু জানান, তিনি মামলাকারীর হয়ে উচ্চ আদালতের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছিলেন, যে ঠিকাদাররা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, তাঁদের একাংশের সঙ্গে শাসক দলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তাই মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত যাতে বকেয়া কোনও টাকা যাতে ঠিকাদারদের দেওয়া না-হয়, সে জন্যও আর্জি পেশ করা হয়। সুব্রতবাবু বলেন, “আমাদের আর্জি শুনে ডিভিশন বেঞ্চ ঠিকাদারদের বক্তব্য জানতে তাঁদেরও পক্ষ ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।”
উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। সিপিএম সূত্রের খবর, মূলত অশোকবাবুর উদ্যোগেই ওই দুর্নীতির মামলা সংক্রান্ত কিছু নথি, এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যে কমিটি গড়ে গোপন তদন্ত করিয়েছে এসজেডিএ, তার রিপোর্টের একাংশও সংগৃহীত হয়েছে। এদিন অশোকবাবু বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যে তদন্ত হয়েছে তার রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট বড় দুর্নীতি হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সব ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সে দিক থেকে দেখলে উচ্চ আদালতের তরফে নথি তলব করাটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা আশাবাদী সব তথ্য সামনে আসবে।”
বস্তুত, এসজেডিএ-এর দুর্নীতি মামলা রাজ্যের তরফেই দায়ের করা হয়েছে। তা নিজস্ব গতিতে এগোচ্ছিল। কিন্তু, গত ৩০ নভেম্বর মামলায় জেরার জন্য দ্বিতীয় দফায় ডেকে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। সে দিন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের একজন এসিপি আদালতে জানান, বিশদে জেরার জন্য গোদালা কিরণকুমারকে পুলিশি হেফাজতে রাখা দরকার। শিলিগুড়ির আদালত চার দিনের জন্য তাঁকে পুলিশ হেফাজতের রাখার নির্দেশ দেন। সে দিনই শিলিগুড়ির পুলিশ কমনিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে বদলি করা হয়। খোদ রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র সাংবাদিক বৈঠকে গোদালা কিরণকুমারকে ওই ভাবে গ্রেফতারের বিরোধিতা করে পুলিশ কমিশনারকে সরানোর কথা জানান। ওই ঘটনাক্রমে কথা উল্লেখ করে এ দিন আইনজীবী সুব্রতবাবু আদালতে বলেন, “একজন পুলিশ অফিসার লিখিত ভাবে শিলিগুড়ি আদালতে জানিয়ে দিলেন, গোদালা কিরণ কুমারকে জেরার জন্য ১০দিন পুলিশ হেফাজতে রাখা দরকার। চারদিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার অনুমতিও পান। কিন্তু, ২৩ ঘণ্টার মাথায় একই অফিসার জেরা সম্পূর্ণ হয়েছে জানিয়ে দেন। সরকার পক্ষের তরফেও গোদালা কিরণ কুমারের জামিনের আর্জির বিরোধিতা করা হয়নি। এতেই নানা আইনি প্রশ্ন ওঠে। তা সবই উচ্চ আদালতে জানিয়েছি।”
|