অবশেষে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বেসু
বেসু-র মুকুটে নতুন পালক। নতুন মর্যাদা, নতুন নাম।
যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্যালকাটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামে। তার পর নাম হল বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। লোকমুখে শিবপুর বিই কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর বিই কলেজ হয়েছিল বেসু। বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে এটি। বুধবার বেসু দেশের প্রথম ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (আইআইইএসটি)-র মর্যাদা পেল।
এ দিন লোকসভায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (সংশোধনী) বিলটি পাশ হয়। তার সুবাদেই বেসুর এই উত্তরণ সম্ভব হল। এর ফলে ‘জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ’ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই ছাতার তলায় চলবে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা এবং বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় গবেষণা। ইঞ্জিনিয়ারিং-বিজ্ঞানের উৎকৃষ্ট মানের শিক্ষক-অধ্যাপকও তৈরি করবে এই প্রতিষ্ঠান। এর জন্য প্রথম পাঁচ বছরে ৫৯২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে এক কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র।
বেসু-কে অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উৎসাহ, উদ্যোগেই এই রূপান্তর সম্ভব হল। বেসু এবং উপাচার্যকে অভিনন্দন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অজয় রায় জানাচ্ছেন, রূপান্তরের পরে বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অনেক সহজ হবে। তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার। এখন বেসু-তে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। রূপান্তরের পরে তা পাঁচ হাজারে দাঁড়াবে। জাতীয় স্তরে আইআইটি জেইই (মেন)-এর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তি হবে। অজয়বাবু জানান, বেসুই দেশের প্রথম আইআইইএসটি হল।
উচ্ছ্বসিত বেসু-র পড়ুয়ারা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
রূপান্তরের সলতে পাকানো শুরু আট বছর আগে। ২০০৫ সালে বেসু-সহ দেশের সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তার আগেই অধ্যাপক এস কে জোশীর নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি সাতটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে আইআইইএসটি নাম দিয়ে নতুন ধাঁচের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার সুপারিশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে ‘জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ’ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়, তার জন্য সংসদে নতুন আইন আনার কথাও বলা হয়।
বেসু-কে আইআইইএসটি করার প্রস্তাব রাজ্যের কাছে আসে ষষ্ঠ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। প্রাথমিক ভাবে এই প্রস্তাবে রাজ্য ততটা সাড়া দেয়নি। কিন্তু সপ্তম বামফ্রন্টের আমলে সেই মনোভাব বদলায়। তবে রাজ্য পাল্টা শর্ত দেয়, পরিচালন সমিতিতে রাজ্যের প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং মোট আসনের ৫০ শতাংশে রাজ্যের ছাত্র ভর্তি করতে হবে। ২০০৭ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে বেসু-র সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলে কেন্দ্র। কিন্তু তার পরে বড় ধরনের ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বেসু-তে। লাগাতার ক্লাস বিক্ষোভ, পরীক্ষা বয়কট শুরু হয়। শিক্ষকেরাও বিক্ষোভে সামিল হন। তার রেশ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চত্বর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার রাজপথেও। তারই জেরে আইআইইএসটি-র পরিকল্পনা স্থগিত করে কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনুকূল না-হলে এ ব্যাপারে আর এগোনো হবে না।
যদিও বেসু কর্তৃপক্ষ হাল ছাড়েননি। বারবার দিল্লি গিয়ে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর চালিয়ে গিয়েছেন উপাচার্য। এ দিন লোকসভায় লোকপাল বিল নিয়ে বিতর্ক চলার মধ্যেই সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথ ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (সংশোধনী) বিল’টির প্রসঙ্গ তোলেন। এমনিতে এই অধিবেশনে বিলটি পেশ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু সিপিএম সাংসদ সইদুল হক গত দু’দিন ধরে বিলটি পেশ করানোর জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। মন্ত্রক থেকে তাঁকে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গেরই তিনটি দল সিপিএম, আরএসপি এবং তৃণমূল তিনটি সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলি বাদ দিলে বিলটি এই অধিবেশনে পেশ করা যাবে। সেই মোতাবেক ওই তিনটি সংশোধনী বাদ দিয়েই বিলটি এ দিন পেশ হয়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পল্লম রাজু তখন সংসদে ছিলেন না। কমলনাথ প্রাক্তন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলকে বিলটি পেশ করার অনুরোধ করেন। কপিল ইতস্তত করে বলেন, উনি আর ওই মন্ত্রকের দায়িত্বে নেই। কী করে বিলটি পেশ করবেন তিনি? তখন মানবসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শশী তারুর হাত তুলে বলেন, তিনি বিল পেশ করতে চান। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়। বিলটি ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায়।
উপাচার্য অজয়বাবু এ দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় সরকার, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং রাজ্যের সমস্ত সাংসদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে বেসুর শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষের নিরন্তর প্রচেষ্টাও বেসুকে আইআইইএসটি-তে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে।” রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা এই খবরে খুব খুশি হয়েছেন। সকলেই উৎসাহিত।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উত্তরণকে স্বাগত জানিয়েছেন বেসুর শিক্ষক সংগঠন বেসুটার সম্পাদক অমিতাভ রায়ও।
ক্যালকাটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নাম নিয়ে শিবপুরের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৫৬ সালে। পরে সেটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। ১৯৯৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। ২০০৪-এ এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে রাজ্য সরকার। প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণও হয় তখনই। এ বার আবার নাম বদলাবে।
রাজ্যের প্রস্তাব মেনে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আইআইইএসটি-তে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে কি? বেসু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এ দিন যে বিল পেশ হয়েছে, তাতে এমন কোনও শর্ত নেই। সিপিএম সাংসদ সইদুল হক জানাচ্ছেন, এই সংশোধনীটিই তাঁরা বিলে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। দ্রুত বিল আনার স্বার্থে তা আপাতত বাদ পড়েছে। পরে ওই সংশোধনী বিলে ঢোকানো হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.