পশ্চিমবঙ্গের অগ্রাধিকারের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে এসে দাঁড়াল মুলায়ম সিংহ ও নবীন পট্টনায়কের দল। প্রসঙ্গ, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি) পর্যায়ে উত্তরণের পর শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভির্সিটি (বেসু)-তে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডারেল ফ্রন্টের ভাবনা তেমন গতি না পেলেও লোকসভা ভোটের আগে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে এমন বিষয়ভিত্তিক ঐকমত্য তাৎপর্যপূর্ণ।
বেসু-র আইআইইএসটি-তে উত্তরণ সংক্রান্ত বিলটি ইতিমধ্যেই লোকসভায় বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। বর্তমানে বিলটি রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে। আজ বেসু নিয়ে স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকেই ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ আসন সংরক্ষণের দাবিতে সরব হন দল নির্বিশেষে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদেরা। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদারেরা সাফ জানিয়ে দেন, রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের প্রশ্নে কোনও আপসে তাঁরা নারাজ। এই সময়েই তাঁরা পাশে পেয়ে যান সপা ও বিজেডি-কে। আসন সংরক্ষণের পাশাপাশি নয়া প্রতিষ্ঠানের নামে আইআইইএসটি-র সঙ্গে ‘বেসু শিবপুর’ শব্দবন্ধটিও যোগ করার দাবিও জানিয়েছেন ডেরেক।
বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা দু’টি দাবিই খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্তমানে বেসুতে ছাত্র ভর্তি হয় মূলত জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে। রাজ্যের জন্য সংরক্ষিত থাকে মোট আসনের আশি শতাংশ। কিন্তু লোকসভায় পেশ হওয়া বেসু সংক্রান্ত বিলটিতে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন সচিব (উচ্চশিক্ষা) অশোক ঠাকুরের যুক্তি ছিল, বেসু-কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই আইআইইএসটি-তে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে মেধাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত। আজ তাঁর এই ব্যাখ্যা খারিজ করে ডেরেক যুক্তি দেন, বেসু-র সঙ্গে রাজ্যের মানুষের আবেগও জড়িত। ফলে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে কেন্দ্রকে।
প্রসঙ্গত, ঠিক তিন বছর আগে বেসু-কে আইআইইএসটি-তে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। গোটা দেশের মোট ছ’টি প্রতিষ্ঠানকে এই পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এর মধ্যে বেসু-কেই প্রথম আইআইইএসটি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন প্রতিষ্ঠানের গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো হবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি)-র মতো। সেই প্রসঙ্গেই আজ বৈঠকে ডেরেক বলেন, এনআইটি-গুলিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আইআইইএসটি-র ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাঁকে সমর্থন করেন প্রশান্তবাবু। বৈঠকে উপস্থিত বেসুর উপাচার্য অজয় রায়ও সেখানকার সামগ্রিক চিত্রটি কমিটির সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। বর্তমানে বেসু-র পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় তিন হাজার হলেও, আইআইইএসটি-তে উন্নীত হওয়ার পর তা বেড়ে পাঁচ হাজারে দাঁড়াবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনুদানও বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ছ’শো কোটি টাকায়। বর্তমানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে পঞ্চাশ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেয় রাজ্য। কেন্দ্রীয় অনুদান বৃদ্ধি পেলে রাজ্য ওই টাকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জটিলতা থাকলেও বিলটি যাতে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে পাশ হয়ে যায়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছেন রাজ্যের সাংসদরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্ভবত পাওয়া যাবে শুধু শীতকালীন অধিবেশনটুকু। ওই অধিবেশনেই বিলটি পাশ করানোর উপর জোর দিচ্ছে তৃণমূল। কারণ, বিলটি যে হেতু লোকসভায় পেশ করা হয়েছে, তাই লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিলটিও বাতিল হয়ে যাবে। সেই কারণে সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বিলে সংশোধনী আনার পরিকল্পনা নিলেও এখন তা থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। তারা চাইছে, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহেই বিলটি পাশ করিয়ে নিতে। আসন সংরক্ষণের বিষয়টি যাতে বিলে পরে জুড়ে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে নিশ্চয়তা দাবি করেছেন ডেরেকেরা। |