অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ। স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে তখনও বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি মারুফা খাতুন!
ফলতার তটিনী বালিকা বিদ্যাপীঠের বারো ক্লাসের ছাত্রীটি কিছুক্ষণ আগে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বইখাতা আর টাকা পেয়েছে। উপরি হিসেবে চোখের সামনে দেখেছে জলজ্যান্ত তারকাদের সমাবেশ। এত দিন যাঁরা ছিলেন সিনেমা-টিভির পর্দায়, তাঁরাই ক’হাত দূরে বসে হাসছেন, কথা বলছেন, হাত নাড়ছেন! অবাক হওয়া আর ফুরোয় না মুগ্ধ কিশোরীর। “দারুণ ব্যাপার। মেয়েদের জন্য এত কিছু করা হচ্ছে! খু-উ-ব, খু-উব ভাল লাগছে।”— প্রতিক্রিয়া মারুফার।
শুধু সে নয়। বারাসতের গৈরিকা সাহা, কোচবিহারের ছন্দা রায় কিংবা সামসি সীতাদেবী বালিকা বিদ্যামন্দিরের যমুনা মাঝি— মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোরে চর্মচক্ষে তারকা দর্শন করে ‘কন্যাশ্রীরা’ সকলে একই রকম আপ্লুত, অভিভূত।— সহাস্যে বললেন মমতা। |
‘কন্যাশ্রীদের’ সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। পাশে প্রসেনজিৎ ও কোয়েল।
মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: সুমন বল্লভ। |
মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘কন্যাশ্রী’র উদ্বোধনের দিনে এ ভাবেই রাজ্যের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীদের সঙ্গে তারকাদের মিলিয়ে দিল প্রশাসন। নেতাজি ইন্ডোরে অনুষ্ঠানমঞ্চের প্রথম সারিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলেন মহিলা শিল্পীরা। তাঁদের ভিড়ে কার্যত হারিয়েই গেলেন রাজ্যের নারী-সমাজকল্যাণমন্ত্রী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র কিংবা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। নারী-সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কন্যাশ্রী প্রকল্পে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী অবিবাহিত স্কুলছাত্রীদের (অষ্টম-দ্বাদশ শ্রেণি) পড়াশুনো বাবদ বছরে পাঁচশো টাকা দেবে রাজ্য সরকার। শর্তানুযায়ী, পরিবারের বার্ষিক আয় হতে হবে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম। অনাথ ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে অবশ্য পারিবারিক আয়ের কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না। আঠারো-ঊর্ধ্ব মেয়েরা বিয়ে না-করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইলে পাবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। কন্যাশ্রীর অনুদান-অর্থ সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
এবং এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বোতাম টিপে প্রকল্পের উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে দশ হাজারের বেশি ছাত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে গেল কন্যাশ্রীর অনুদান। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। ৯৭৮৪ জন পেল পাঁচশো টাকা করে, ২৮০ জন ২৫ হাজার। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রকল্পটির পিছনে রাজ্যের খরচ হবে অন্তত হাজার কোটি টাকা। মমতার কথায়, “আমাদের লক্ষ্য, ২৪ লক্ষেরও বেশি মেয়ের কাছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধে পৌঁছে দেওয়া।”
এই বিপুল অর্থের সংস্থান করা যে সহজ কাজ নয়, মুখ্যমন্ত্রী তা-ও জানিয়ে দিতে ভোলেননি। বলেন, “অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এত টাকা কোথা থেকে আসবে? সব তো কেন্দ্র নিয়ে নিচ্ছে! আমি বলে দিয়েছি, টাকা জোগাড় করা আপনার ব্যাপার।” তাঁর মন্তব্য, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো মেয়েরাই গড়তে পারে। তাই মেয়েদের জন্য টাকাটা খরচ করা হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রের দাবি, মূল্যযুক্ত কর (ভ্যাট)-এর হার ১% বাড়িয়ে কন্যাশ্রীর টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য।
এ দিন প্রকল্পের উদ্বোধনে কোনও ফাঁক না-রাখার চেষ্টায় কসুর করা হয়নি। সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলি উপলক্ষ্যে সোমবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে যেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে, এ দিন ইন্ডোরেও ছিল তার প্রতিফলন। সারদার আমানতকারীদের কলকাতায় আনা-নেওয়া-রাখা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলি কোমর বেঁধে নেমেছিল। জেলার জেলার কন্যাশ্রীদের জন্যও বাস থেকে শুরু করে খাবারদাবার, সব ব্যবস্থা হয় প্রশাসনের উদ্যোগে। ভাড়া করা হয়েছিল অন্তত সাড়ে তিনশো বাস।
উদ্বোধনের আয়োজনে কত পড়ল?
সরকারের এক কর্তা জানান, এ দিনের অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় নারী-সমাজকল্যাণ দফতরের প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। |