মমতা-স্পর্শে কন্যাশ্রীর যাত্রা শুরু মাস পয়লায়
প্রকল্পের নাম দিয়েছেন তিনি। প্রকল্পের প্রতীক (লোগো) তাঁর হাতে আঁকা। স্লোগানও তাঁর তৈরি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই সাধের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প যাত্রা শুরু করছে আগামী ১ অক্টোবর। এতে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের (অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ বাবদ বছরে পাঁচশো টাকা অনুদান দেবে রাজ্য সরকার। উদ্বোধনের দিনেই রাজ্যের দশ হাজার ছাত্রীকে এর আওতায় আনা হচ্ছে বলে মহাকরণের খবর।
তবে সাহায্য পাওয়ার কিছু শর্তও আছে। টাকা তারাই পাবে, যারা অবিবাহিত এবং স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বেশি হতে পারবে না। তবে অনাথ ও প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে পারিবারিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা রাখা হয়নি। একটি পরিবারে যত জন কন্যাসন্তান, শর্ত পূরণ করলে সকলেই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে। আঠারোর পরেও কেউ যদি বিয়ে না-করে পড়াশুনো চালিয়ে যেতে চায়, কন্যাশ্রী তার পাশে আছে। সে ক্ষেত্রে মেয়েটি পাবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। কন্যাশ্রীর টাকা জমা পড়বে ছাত্রীদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
প্রকল্পটি থাকছে রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ দফতরের আওতায়। দফতর-সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এমন একটি প্রকল্পের কথা ভাবছিলেন, যার হাত ধরে গ্রাম-শহরের লক্ষ লক্ষ পরিবারের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া যায়। তারই সূত্রে ‘কন্যাশ্রী’র জন্ম। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের উন্নয়নে মেয়েদের সামিল করতে চাইছেন। কন্যাশ্রী সেই কাজটাই করবে বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা। “পরিবর্তনের সরকারের আমলে সম্পূর্ণত রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এটাই হতে চলেছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।” দাবি করেছেন সূত্রটি।

শ্রী-শর্ত
• ২০১৩-র ১ এপ্রিলে বয়স ১৩-১৮ (অষ্টম-দ্বাদশ শ্রেণি)
• পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম (অনাথ ও প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা নেই)
• হতে হবে অবিবাহিতা
• সরকারি বা সরকার অনুমোদিত স্কুলের পড়ুয়া

প্রাপ্তি
• ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বছরে ৫০০ টাকা
• আঠারো-ঊর্ধ্ব অবিবাহিতা ছাত্রীদের থোক ২৫ হাজার
এবং এর যাবতীয় খুঁটিনাটি মুখ্যমন্ত্রীরই হাতে তৈরি। কী রকম?
মহাকরণের খবর: যে কোনও পরিবারের ‘শ্রী’ হলেন কন্যারাই এই ভাবনা থেকে প্রকল্পের নাম স্থির করেছেন মমতা। নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরে প্রকল্পের প্রতীক (লোগো) ঠিক করতে বিভিন্ন বেসরকারি পেশাদার সংস্থার কাছে নকশা চাওয়া হয়েছিল। গোটা পঞ্চাশেক নকশা জমাও পড়ে। কিন্তু একটাও মুখ্যমন্ত্রীর মনে দাগ কাটেনি।
শেষমেশ অফিসারদের অনুরোধে তিনি নিজেই একটা লোগো এঁকে ফেলেন। “রাত জেগে উনিই কন্যাশ্রীর লোগো বানিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ে বই পড়ছে। বইয়ের এক দিকে বাংলায় লেখা, এগিয়ে যাও বড় হও। অন্য দিকে ইংরেজিতে লেখা, স্টাডি অ্যান্ড স্মাইল।” জানাচ্ছেন এক কর্তা। লোগোটি গত স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে এক বার প্রদর্শিত হয়েছে।
শুধু নামকরণ বা প্রতীকীকরণ নয়। কন্যাশ্রীর আকর্ষণ বাড়াতে সরকারের যে বিজ্ঞাপন, তার স্লোগানও মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত বলে প্রশাসনের দাবি। সেই বিজ্ঞাপনে অভিনেতা প্রসেনজিৎ বলছেন,
‘মেয়েরা আমাদের ঘরের সম্পদ
ওরা বাংলার রূপসী
ওদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন
কন্যাশ্রী কন্যাশ্রী।’


নারী-সমাজকল্যাণ দফতরের তৈরি বিজ্ঞাপনটি ইতিমধ্যে চ্যানেলে-চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে।
কন্যাশ্রী সম্পর্কে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া নিজের বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী একটি কবিতাও লিখেছেন
‘মেয়েরা আমাদের ঘরের সম্পদ
ভবিষ্যতের অনন্যা
ওদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে দিন
কন্যাশ্রী ওদের প্রেরণা।’


সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, দেশের কিছু রাজ্যে এই জাতীয় প্রকল্প চালু রয়েছে, যার মধ্যে মধ্যপ্রদেশেরটি চোখে পড়ার মতো। বস্তুত সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজসিংহ চৌহানের জনপ্রিয়তার পিছনে ওই প্রকল্পের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন মহাকরণের একাংশ।
তাঁরা এ-ও বলছেন, “অন্য রাজ্যের প্রকল্পগুলো তুলনায় জটিল। যেমন, দিল্লিরটি। জটিলতার কারণেই তাতে বিশেষ সাড়া মেলেনি।”
আর সেই অভিজ্ঞতারই পরিপ্রেক্ষিতে কন্যাশ্রী চালুর আগে মুখ্যমন্ত্রী সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন প্রকল্পের সরলীকরণে। পাশাপাশি প্রশাসনের দাবি, প্রান্তিক পরিবারের মেয়েদের পঠনপাঠনে উৎসাহদান ছাড়াও প্রকল্পটির আরও বেশ কিছু সামাজিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কী রকম?
নারী-সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেনের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ হয় ৫৪.৭% মেয়ের। হারটা জাতীয় গড়ের বেশি। এ অবস্থায় আর্থিক সাহায্য পেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলে কিশোরীরা সচেতন হবে। তাতে বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
কন্যাশ্রী স্কুলছুটের প্রবণতাও কমাবে বলে সচিবের দাবি। “কন্যাশ্রী প্রকল্পে সাহায্যপ্রাপ্ত মেয়ে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে সরকার খোঁজ-খবর করবে। সে কোনও অসাধু কাজে জড়িয়ে পড়লে তা নজরে আসবে।” বলেন তিনি।
এ হেন ‘উচ্চাকাঙ্খী’ পরিকল্পনা রূপায়ণে খরচে কার্পণ্য করা হচ্ছে না। প্রাথমিক হিসেবে, এটির পিছনে বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। যেখানে সরকারের ভাঁড়ারে এত টানাটানি, সেখানে এই বিপুল অর্থের সংস্থান হবে কোথা থেকে?
অর্থ-কর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সম্প্রতি যুক্তমূল্য করের (ভ্যাট) হার ১% বাড়িয়েছে। তা থেকে প্রাপ্য অর্থের সিংহভাগ কন্যাশ্রীতে ব্যয়ের কথা ভাবা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.