পুজোর আগে সারদা গোষ্ঠীর এক লক্ষ আমানতকারীর হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেবে রাজ্য সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ৯২৬ জন আমানতকারীর হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিয়ে সেই কর্মসূচি শুরু করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার পরেই পুরোদমে টাকা বিলি শুরু হয়ে যাবে। কমিশন সূত্রের খবর, জেলাশাসকের দফতরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনই ওই টাকা আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেবে। সারদা কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি শ্যামল সেন বৃহস্পতিবার বলেন, “সামনের মাসের গোড়া থেকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হবে। মূলত যাঁরা জেলার বাসিন্দা, সর্বস্বান্ত এবং ১০ হাজার টাকার কম লগ্নি করেছিলেন, টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে তাঁদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে।”
টাকা বিলির আগে সারদা কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে অর্থ দফতর। তাতে বলা হয়েছে, টাকা ফেরতের ক্ষেত্রে লগ্নিকারীর দাবি কোনও ভাবেই একমাত্র বিচার্য নয়। সেন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অর্থাৎ লগ্নিকারী ক্ষতিপূরণ বাবদ যত টাকাই দাবি করুন না কেন, তাঁকে কত টাকা দেওয়া হবে, কমিশনই সেটা ঠিক করবে।
অর্থ দফতর তাদের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেছে, ক্ষতিপূরণ তহবিলের টাকা তোলার জন্য সারদা গোষ্ঠী, তাদের এজেন্ট ও ‘বেনামদারদের’ (যারা বেনামে সম্পত্তি কেনে) সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে সেন কমিশন। একই সঙ্গে ওই গোষ্ঠী এবং তার বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা বাজেয়াপ্ত করা, এমনকী সারদা গোষ্ঠী যাঁদের ঋণ দিয়েছিল, সেই সব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকেও টাকা আদায়ের ক্ষমতা ওই কমিশনকে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
ক্ষতিপূরণ প্রকল্পে সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট ও বেনামদারদের সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশের ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে বলা হয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর আমানতকারীরা যে-টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, সেই টাকা দিয়েই যদি কোনও এজেন্ট ব্যক্তিগত সম্পত্তি করেন, তা হলে সেই সম্পত্তিও বিক্রি করতে পারবে কমিশন। ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার পরে কোনও টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে থাকলে কমিশন সেই বাড়তি টাকা সরকারকে ফেরত দেবে।
মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফিরিয়ে দিতে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করবে সরকার। ওই তহবিলের ১৫০ কোটি টাকা আসবে তামাকজাত দ্রব্যের উপরে বসানো কর থেকে। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে, তা অবশ্য তখন খোলসা করে বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। সেই তহবিল ভরাতেই স্বরাষ্ট্র দফতরের পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাত থেকে ইতিমধ্যে ৫০ কোটি টাকা সেন কমিশনের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে অর্থ দফতর।
এই নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে প্রশাসনের অন্দরেই। অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, যে-সংস্থায় টাকা রেখে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন, তাদেরই সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া উচিত। সরকার কেন তাঁদের দায় নেবে? ওই অফিসারদের বক্তব্য, পরিকল্পনা বা পরিকল্পনা-বহির্ভূত যে-খাতই হোক না কেন, করের টাকাতেই সরকারি কোষাগার ভরে ওঠে। ক্ষতিপূরণের নামে কিছু মানুষকে সেই টাকা দিয়ে সহায়তা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নই তুলেছেন ওই অফিসারেরা। অন্য এক দল অফিসার অবশ্য বলছেন, সরকার সব সময় জনস্বার্থে কাজ করে। সেই লক্ষ্যেই সারদার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে সরকার। |