সারদা কাণ্ড
পুজোর আগেই টাকা ফেরত, কিন্তু জোগাবে কে
টাকা লাগবে।
এবং অনেক টাকাই লাগবে।
কিন্তু টাকা জোগাবেন কোন গৌরী সেন? জানা যায়নি।
তবু পুজোর আগেই প্রথম পর্যায়ে সারদা গোষ্ঠীর কিছু আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, এই পর্যায়ে হাজারখানেক আমানতকারী জমা রাখা টাকা ফেরত পাবেন। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির পরে গড়া কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন বৃহস্পতিবার বলেন, “যাঁদের কম টাকা জমা রয়েছে, সেই ধরনের কিছু গরিব আমানতকারীকে পুজোর আগেই টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” যদিও সেই টাকার সংস্থান কী ভাবে হবে, তা এখনও আদৌ স্পষ্ট হয়নি।
সারদা সংস্থায় যে-সব গরিব মানুষের জমা টাকার পরিমাণ ১০ হাজারের কম, সেন কমিশন তাঁদের মধ্যে হাজারখানেক আমানতকারীর তালিকা তৈরি করছে বলে মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই তালিকা সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সরকারের হাতে পৌঁছবে। মহাকরণের এক পদস্থ কর্তা জানান, ওই সব আমানতকারীর টাকা জমা রাখার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর আগেই তাঁদের হাতে টাকা তুলে দিতে চান।
প্রথম পর্যায়ে প্রাপকদের বাছাই করা হল কী ভাবে?
সারদা কাণ্ডে সারা দেশ থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ আমানতকারী টাকা ফেরতের আবেদন জানিয়ে কমিশনে দরখাস্ত করেছেন। হাজার ছয়েক আমানতকারীর শুনানি শেষ করেছে কমিশন। অধিকাংশ আবেদন নথিভুক্ত করার দায়িত্বে আছে সারদা কাণ্ডে গড়া স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্ত দলের হাতে। কমিশন জানিয়েছে, সব আবেদনের শুনানির প্রয়োজন নেই। সিট সূত্রের খবর, কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী আবেদনকারীদের দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যাঁদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ ১০ হাজার বা তার কম, তাঁদের ফেলা হয়েছে একটি শ্রেণিতে। অন্য শ্রেণিতে আছেন ১০ হাজারের বেশি টাকা রাখা আবেদনকারীরা। সিটের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮০% আবেদনকারী ১০ হাজার টাকার নীচের শ্রেণিতে পড়েছেন। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ আবেদনকারী সারদা সংস্থায় ১০ হাজারের কম টাকা জমা রেখেছেন। এই শ্রেণির আবেদনকারীদের অনেকেই মহিলা।
আবেদনকারী বাছাই পর্বে তাঁদের দেওয়া তথ্য ঠিক কি না, তা যাচাইয়ের দায়িত্বও বর্তেছে সিটের উপরে। সারদার বিভিন্ন অফিস থেকে অনেক নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটারে রাখা আমানতকারীদের তথ্যও। আবেদনকারীর দেওয়া কাগজপত্র ঠিক কি না, কম্পিউটারে তুলে রাখা সেই সব তথ্যের সঙ্গে তা মেলানো হচ্ছে।
আজ, শুক্রবার কমিশনের অফিসে সেই অনুসন্ধানের সবিস্তার তথ্য নিয়ে আলোচনা হবে বলে মহাকরণের খবর। ওই বৈঠকে থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাস্ট্রসচিব। অর্থ দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান, প্রথম পর্যায়ে যাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তাঁদের আবেদনের সত্যতা দ্রুত যাচাইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমানতকারীদের দেওয়া ঠিকানা ঠিক কি না, জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা তা দেখবেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
কী ভাবে দেওয়া হবে টাকা?
আমানতকারীর হাতে হাতে টাকা দেওয়া হবে না বলেই অর্থ দফতর সূত্রের খবর। টাকা দেওয়া হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই জন্য প্রত্যেক আবেদনকারীকে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। প্রয়োজনে সেই ব্যাপারে সরকারি সহায়তাও মিলবে।
সারদা কাণ্ডে সর্বস্বান্তদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই তহবিল গড়তে সিগারেটের উপরে বাড়তি কর বসানোর কথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বিশেষ তহবিল এখনও গড়া হয়নি। বাড়তি করও বসেনি সিগারেটের উপরে। পরে সেটা বসানো হলেও সেই করের টাকা স্বাস্থ্য খাতে যাবে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, পুজোর আগে কিছু আমানতকারীকে ফেরত দেওয়ার টাকা আসবে কোথা থেকে?
প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, সরকারের কোনও দফতরের বাজেটে এই খাতে অর্থ রাখা নেই। তাই সরকার ঠিক করেছে, ‘জনস্বার্থে এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য’ একটি আইন তৈরি করবে রাজ্য। সেই আইনে সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হবে সেন কমিশনকে। ওই আইন-বলেই আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। এক মুখপাত্র জানান, যে-হেতু একটি আইন চালু করতে সময় লাগে, তাই পুজোর আগে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করতে চাইলে সরকারকে স্বল্প কালের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে।
পুজোর বাকি ৪২ দিন। এর মধ্যে এত সব কাজ সেরে টাকার ব্যবস্থা কী ভাবে হবে, সেই সংশয় থাকছেই। সরকার অন্য কোনও পথে টাকা জোগাড় করতে পারে কি না, সেই বিকল্প পন্থা কী, স্পষ্ট নয় তা-ও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.