মারজিতের ইস্তফা কি এক্তিয়ার ছাড়ানোর মাসুল
ক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ বেধেছিল উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গেও। এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আধিকারিকের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সংসদ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু তাতে দমেননি সংসদ-প্রধান।
অনেকেই মনে করছেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কোনও ভূমিকা না-থাকায় এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করে বিরাগভাজন হয়েছে সংসদ। ওই সংসদের চেয়ারম্যানের পদে সুগত মারজিৎ ইস্তফা দেওয়ার পরে এখন তাই প্রশ্ন উঠছে, সেই জন্যই কি অব্যাহতি বা পদত্যাগ?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র নির্দেশিকা মেনে রাজ্যে উচ্চশিক্ষা সংসদ তৈরি হয় ১৯৯৪ সালে। আইন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সংসদের অন্যতম দায়িত্ব। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিচালন কাঠামো থাকা সত্ত্বেও সংসদের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন কী, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে শিক্ষাজগতেই।
সংসদের এক প্রাক্তন কর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজকর্মে ঢোকার অধিকার নেই সংসদের। তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কখনওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে সেটা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থায় আলোচনা করে তার প্রয়োগ ঘটিয়েছে। এ ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়ন, কলেজ পরিদর্শনের কাজ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজকর্মে ঢোকার অধিকার কিন্তু সংসদের নেই।”
সরকার বদলের পরে সুগতবাবু সংসদ-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। তার পরেই সংসদের সক্রিয়তা ক্রমশ অতি-সক্রিয়তার পর্যায়ে পৌঁছয় বলে মনে করছেন শিক্ষাকর্তাদের অনেকে।
দু’বছর দায়িত্ব সামলানোর পরে ১ অক্টোবর থেকে ওই পদে অব্যাহতি চেয়ে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন সুগতবাবু। ব্রাত্যবাবু জানান, চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। দু’জনেরই দাবি, নিজের গবেষণা, পড়াশোনা, গানবাজনার কাজ সামলে ওই পদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারছিলেন না বলেই ইস্তফা দিয়েছেন সুগতবাবু। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। বৃহস্পতিবারেও সুগতবাবু বলেন, “আমার পদত্যাগের ব্যাপারে বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে যা বলেছি, তার বেশি কিছু বলার নেই।”
সরকারি সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য খোঁজা, রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাজের ধরন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সুগতবাবুর মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। এমনকী বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও চেয়ারম্যানের বনিবনার অভাব ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সংসদ সরাসরি ঢুকে পড়ায় ক্ষোভ তৈরি হয় শিক্ষক, কর্মচারী, আধিকারিকদের মধ্যে। সেই ক্ষোভের প্রতিফলনও ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। সাংবাদিকতা, কেমিক্যাল টেকনোলজি ইত্যাদি বিভাগের অভ্যন্তরীণ অভিযোগের তদন্তে সংসদের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে সরাসরি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলায় আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রবীণ আধিকারিকের নিয়োগ নিয়ে সংসদ প্রশ্ন তোলায় মামলা হয়। কিন্তু সংসদের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা ঠেকানো যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের জন্য উৎসবকালীন অগ্রিম হিসেবে ১৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠায় সংসদ। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এই চিঠি নিয়ে মতবিরোধ হয় সংসদ-কর্তৃপক্ষের। পরে সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নেয় সংসদ। কিন্তু তার আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে ওই চিঠি প্রত্যাহার করায় বিভ্রান্ত হতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে।
আবার উপাচার্য থেকে বিভাগীয় প্রধানদের ঘর সাজিয়ে, সেগুলিতে শীতাতপ যন্ত্র বসানোর পরামর্শও সম্প্রতি সংসদের কাছ থেকে পৌঁছেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলে কাদের মনোনীত করা হবে, চিঠি লিখে সেই সুপারিশও করেছেন সুগতবাবু। সংসদের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করার। কিন্তু প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তিতে তা আর হয়ে ওঠেনি। যদিও ভবিষ্যতে সেই প্রক্রিয়া চালু করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান সংসদকর্তারা। প্রশাসনিক থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে এমন সব সিদ্ধান্ত তিনি ‘পদাধিকারবলে উচ্চশিক্ষার অভিভাবক হিসেবে’ই নিয়েছেন বলে দাবি করেন সুগতবাবু। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরে সংসদ এমন খবরদারি কেন চালাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
রাজ্যের প্রথম সারির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তার কথায়, “কর্মীদের পাওনাগণ্ডা নিয়েও কথা বলবে সংসদ! এটা ভাবাই যায় না।”
সুগতবাবু বুধবার, পদত্যাগের দিনেও দাবি করেছেন, তাঁর আমলেই সংসদ সক্রিয় হয়েছে। সংসদের অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছে। তার আগে এই সংস্থার কথা কারও জানাই ছিল না। পাশে বসে সে-কথা সমর্থন করেন শিক্ষামন্ত্রীও। কিন্তু সংসদের এই ভূমিকা যে পক্ষান্তরে হস্তক্ষেপ, সেই অভিযোগ সম্বন্ধে কী বলবেন?
শিক্ষামন্ত্রীর জবাব, “এই নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.