জঙ্গিপুর থেকে কোচবিহার, সংঘর্ষ শিক্ষায়
শিক্ষাঙ্গনে হিংসা ঠেকাতে লাঠিপেটা করার কড়া দাওয়াই বাতলেছেন আচার্য-রাজ্যপাল। শক্ত হাতে হাল ধরতে বলেছেন উপাচার্যদের। তা সত্ত্বেও উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের কলেজে কলেজে সংঘর্ষ থামার লক্ষণ নেই।
কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে হাঙ্গামা ছড়িয়েছে জঙ্গিপুর থেকে কোচবিহার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) ও ছাত্র পরিষদের সংঘর্ষে দু’পক্ষের ৩০ জন ছাত্রছাত্রী জখম হন। চলে ভাঙচুরও। জঙ্গিপুরে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখার আশ্বাস পেয়ে কলেজ খোলা হলে ফের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও নানা কারণে কয়েকটি শিক্ষাঙ্গনে গণ্ডগোল বাধে।
রাজ্যপালের ক্ষোভ এবং নিদানেও কি কোনও কাজ হচ্ছে না?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “যেখানে যা-ই ঘটুক, প্রতিটি ঘটনাই নিন্দনীয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। প্রতিটি ঘটনার পিছনে থাকা আসল সত্যটা বার করতে হবে।”
ফেব্রুয়ারিতে গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে গোলমালে কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরের মৃত্যুর পরে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত ছাত্রভোট স্থগিত করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ২৬ অগস্ট ফের কলেজে নির্বাচনের কথা ঘোষণার পরে ফের গণ্ডগোল শুরু হয়েছে কলেজে কলেজে।
• কোচবিহার বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজ: ছাত্র সংঘর্ষ।
• চাঁচল কলেজ: ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর অফিস ঘেরাও।
• জঙ্গিপুর কলেজ: বিক্ষোভের মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
• আশুতোষ কলেজ: বিক্ষোভ অশিক্ষক কর্মচারীদের।
• কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠ: তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ ।
• আলিপুরদুয়ার শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যামন্দির: তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ।
• ধূপগুড়ির আংরাভাসা নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়: স্কুলে তালা দিলেন অভিভাবকদের একাংশ।
কোচবিহারের কলেজটিতে প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারচুপি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ মিছিল করে অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে যান টিএমসিপি-র সমর্থকেরা। পুলিশের সামনেই ইটপাথর, লাঠি নিয়ে টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ছাত্র পরিষদের দখলে আছে কলেজের ছাত্র সংসদ। এ দিন টিএমসিপি-র লোকজন বেশি থাকায় তারাই তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা পিছু হটলে টিএমসিপি-র পতাকা নিয়ে মুখে রুমাল বেঁধে কিছু যুবককে ক্লাসঘরের চেয়ার-টেবিল আছড়ে ভাঙতে দেখা যায়। নবীনবরণের জন্য তৈরি মঞ্চ, বাইরে রাখা সাইকেল, মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। কোচবিহারের এসপি অনুপ জায়সবাল বলেন, “ঘটনাটা কলেজের অন্দরের। তাই কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা জরুরি। কোনও অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা যাবে।” ওই ঘটনার প্রতিবাদে ৩০ সেপ্টেম্বর জেলায় ছাত্র ধর্মঘট এবং ১ অক্টোবর ওই কলেজের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্র পরিষদ। এত কিছুর পরেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চঞ্চল মণ্ডলের দাবি, তিনি কিছুই দেখেননি! তাঁর যুক্তি, “টিএমসিপি স্মারকলিপি দিতে আসবে বলেছিল। ঘরেই ছিলাম। পরে শুনলাম, ভাঙচুর হয়েছে। কারা করেছে, তা দেখিনি। টিচার্স কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করব।”
ভর্তি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর ঘেরাও, বিক্ষোভে জেরবার হয়ে বুধবার মূল ফটকে তালা দিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন জঙ্গিপুর কলেজের অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা মণ্ডল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ভর্তি বন্ধ রাখার শর্তে এ দিন কলেজ খুলে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষের অসুস্থতার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন অসীম মণ্ডল। কলেজে ঢোকার পরেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। বিক্ষোভকারী ছাত্র পরিষদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ভর্তি-সমস্যা মেটাতে সাত দিন সময় চান। বলেন, “এসডিও-র আশ্বাস ও কলেজে ভর্তি স্থগিত থাকবে, এই শর্তে আমি কলেজের দায়িত্ব নিয়েছি।” জঙ্গিপুরের এসডিও অরবিন্দ মিনা জানিয়ে দেন, ভর্তি বন্ধ রেখে কলেজ চলবে। কোনও অশান্তি বা গোলমাল হলে প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা করবে।
এ দিনই দুপুরে হুগলির কামারপুকুর কলেজে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে জখম হন ১৫ জন। কলেজের উন্নয়নের দাবিতে ছাত্র সংসদের উদ্যোগে মিছিল বেরিয়েছিল। মিছিল কলেজের মূল ফটকের কাছে আসতেই মুখে রুমাল বেঁধে লাঠি-রড নিয়ে তাদের উপরে হামলা চালায় টিএমসিপি-র অন্য গোষ্ঠীর ছেলেরা। আহত হন ১০ জন। পাল্টা হামলায় অন্য গোষ্ঠীরও পাঁচ ছাত্র জখম হন। কলেজ-কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। কলেজে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে ছাত্র সংসদ। বিকেলে পুলিশের মধ্যস্থতায় ঘেরাও ওঠে। এ দিন কলেজে ব্যানার টাঙানোর দাবিতে ঘেরাও মালদহের চাঁচল কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে টিএমসিপি। অধ্যক্ষের কথায় পুলিশ আসে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঘেরাওমুক্ত হন অধ্যক্ষ।
আলিপুরদুয়ারের শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যামন্দিরের বালক বিভাগে স্কুল পরিচালন সমিতির মনোনয়নপত্র পেশ নিয়ে এ দিন সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে আহত হন ১২ জন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। পরে মনোনয়নপত্র পেশের কাজ শেষ হয়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.