পড়ুয়াদের বেয়াড়াপনার মোকাবিলায় কড়া ব্যবস্থার পক্ষপাতী আচার্য-রাজ্যপাল। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে না-পারায় উপাচার্যদের ডেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তার পরেই ছাত্র-অসন্তোষ মেটাতে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন শাখায় একটি করে পরামর্শদাতা কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্র, শিক্ষক, আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে ছাত্রছাত্রীদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনবে। এর ফলে ঘেরাও, বিক্ষোভ-অবস্থানের মতো কর্মসূচি থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের আশা। আচার্য-রাজ্যপালকেও এই পদক্ষেপের কথা জানানো হবে। কিন্তু কমিটি গড়ে কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ের সুর শোনা গিয়েছে শিক্ষাজগতেই।
শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-র উপাচার্য অজয় রায় অবশ্য আশাবাদী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রদের নিয়ে কমিটি, ফোরাম গড়ে যে ভাল ফল পাওয়া যায়, সেটা আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানেন না।” বেসু-র মতোই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক কলেজে ছাত্র সংগঠন নেই। কলেজের অধ্যক্ষ স্বামী ভূদেবানন্দও মনে করেন, “এই ধরনের কমিটি হলে ছাত্র-শিক্ষক দূরত্ব কমবে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও মনে করেন, নিয়মিত আলাপ-আলোচনায় ভুল বোঝাবুঝি মেটানো সম্ভব। তা হলে এ ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কাও থাকে না।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে তাদের বেশ কিছু কমিটি আছে। আলোচনাও হয়। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করেও ঘেরাও-আন্দোলনের রাস্তা থেকে তাঁদের বিরত করা যাবে কি না, তা নিয়ে যাদবপুরের শিক্ষকদের অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্রছাত্রীরা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ৫০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন। ঘেরাও উঠলেও রিলে অনশন চালিয়ে যান। এক শিক্ষক বলেন, “অনশনও তুলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা শুনছে না। উল্টে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছে।” অন্য এক শিক্ষকের মন্তব্য, “আমাদের একটা কাউন্সেলিং সেল আছে। তারা নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করে। বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ, সেমিনারে যুক্ত করে তাদের। তা সত্ত্বেও কেন যে এই ধারায় ছেদ পড়ছে না, সেটা ভেবে দেখতে হবে।”
প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ এই ধরনের কমিটির মধ্যে না-গিয়ে র্যাগিংয়ের মতো ঘেরাও বন্ধেও কড়া আইন প্রণয়নের দাবি তুলেছেন। এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সৈফুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “দেশে ঘেরাও-বিরোধী আইন তৈরি করা দরকার। ঘেরাও বিকৃত সংস্কৃতি।” আর প্রাক্তন নকশাল ছাত্রনেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ছাত্র বা শিক্ষক কারওই অনড় অবস্থান নেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনিক দায়িত্ব শিক্ষকদের উপরে চাপিয়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার উদ্যোগও বন্ধ হওয়া দরকার। র্যাগিং বা যে-কোনও তদন্ত কমিটিতে শিক্ষকদের না-জড়িয়ে অন্যদের রাখা ভাল।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁদের নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে আশাবাদী। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “ছাত্রদের সমস্যা তৃণমূল স্তরে মেটানো গেলে আন্দোলন এত বড় আকার নেবে না। প্রতিটি বিভাগে ছাত্র-শিক্ষক কমিটি আছে। সব শাখায় পরামর্শদাতা কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে ডিনদের।” তিনি জানান, ওই কমিটির আহ্বায়ক হবেন শাখার সচিব, ডিন হবেন চেয়ারম্যান, সব বিভাগের প্রধানেরা থাকবেন ওই কমিটিতে। থাকবেন ছাত্র-প্রতিনিধিরাও। সুরঞ্জনবাবু বলেন, “ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়ে গেলে সেই ছাত্রছাত্রীরা কমিটিতে থাকবেন। তার আগে কোন পদ্ধতিতে প্রতিনিধি বাছাই হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট শাখার ছাত্র, শিক্ষকেরাই ঠিক করবেন।” |