বছর দুয়েকের মাথায় রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিলেন সুগত মারজিৎ। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ওই দায়িত্বে অব্যাহতি চেয়ে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, সুগতবাবুর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। সুগতবাবু জানিয়েছেন, নিজের পড়াশোনা, গবেষণা এবং সঙ্গীতচর্চার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ওই পদের দায়িত্ব সামলানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সরকারের বিভিন্ন কমিটিতে থাকছেন তিনি।
|
সুগত মারজিৎ |
কিন্তু সুগতবাবু উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদ কেন ছাড়লেন, সেই প্রশ্ন উঠছেই। চলছে নানান জল্পনাও। আর সেই সব প্রশ্ন ও জল্পনার পুরোভাগে আছে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেই সুগতবাবুর বিরোধের প্রসঙ্গ। সরকারের একটি সূত্রের খবর, বিভিন্ন বিষয়েই ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে সুগতবাবুর মতের মিল হচ্ছিল না। উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রধানের পদ থেকে সুগতবাবুর সরে যাওয়ার পিছনে সেটিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন অনেকে। যদিও এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী এবং সুগতবাবু।
উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রধানের ইস্তফার কারণ হিসেবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যকাল নিয়ে টানাপোড়েনের কথাও উঠছে। অগস্টে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকারের ৬৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তাঁর জায়গায় নতুন উপাচার্য বাছতে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন সুগতবাবু। কিন্তু পরে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে মালবিকাদেবীর কার্যকাল ছ’মাস বাড়ানো হয়। এই নিয়ে সরকারের একাংশের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় সুগতবাবুর।
আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে-ভাবে কাজ করছিলেন, তা নিয়ে সরকারের বেশ কিছু পদস্থ কর্তা আপত্তি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু সুগতবাবু ওই উপাচার্যদের সমর্থন করায় তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তাদের মতবিরোধ চলছিল বলে জানাচ্ছে সরকারি সূত্র।
এ-সবের জেরেই চেয়ারম্যানের পদে সুগতবাবুর ইস্তফা কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সুগতবাবু ও ব্রাত্যবাবু দু’জনেই জানিয়েছেন, কোনও মতবিরোধের জন্য নয়। নেহাতই সময়ের অভাবে এই সিদ্ধান্ত।
প্রায় দু’বছর আগে উচ্চশিক্ষা সংসদে যোগ দেন অর্থনীতির শিক্ষক সুগতবাবু। তিনি তখন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা। গত বছর ফেব্রুয়ারির পর থেকে তিনি আর ওই কেন্দ্রের অধিকর্তার পদে নেই। প্রশ্ন উঠছে, অধিকর্তার দায়িত্ব সামলেও সুগতবাবু যদি সংসদের চেয়ারম্যান থাকতে পারেন, তা হলে এখন সেই পদ ছাড়তে হচ্ছে কেন?
ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুগতবাবু। তিনি বলেন, “ওই সেন্টারে আমি এখন ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া’ অধ্যাপক। এ ছাড়া একটি প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছি। সেই কাজটির পরিধি অনেক বিস্তৃত। বিদেশেও বেশ কিছু কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত। গান করা আমার শখ। এত চাপের মধ্যে সংসদ-চেয়ারম্যানের কাজে ঠিকঠাক সময় দিতে পারছিলাম না।” সুগতবাবু রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদ, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্য। হকার নীতি সংক্রান্ত একটি কমিটিতেও আছেন তিনি। তাঁর দাবি, এত সব কাজ সামলে সংসদ-প্রধানের দায়িত্ব পালন করা কঠিন হচ্ছে বলে তিনি আগেও সরকারকে জানিয়েছেন। এ দিন
বিকাশ ভবনে ব্রাত্যবাবুর ঘরে সাংবাদিক বৈঠকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন সুগতবাবু।
তার পরেই আছড়ে পড়ে প্রশ্ন ও জল্পনার স্রোত। প্রেসিডেন্সির নয়া উপাচার্য বাছাই এবং কয়েক জন উপাচার্যের কাজ নিয়ে মতবিরোধের সঙ্গে সঙ্গে সংসদের কাজের ধরন নিয়েও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল শিক্ষামহলে। এক শিক্ষাকর্তা বলেন, “উচ্চশিক্ষা সংসদ শিক্ষার নীতি নিয়ে কথা বলতে পারে। এই সংসদ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজে ঢুকে পড়তে চাইছে। এটা মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। এই নিয়েও সুগতবাবুর সঙ্গে কারও কারও বনিবনার অভাব দেখা যাচ্ছে।”
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এ-সব কথা মানতে চাননি। সুগতবাবুকে পাশে বসিয়ে তিনি এ দিন বলেন, “উনি না-থাকলে কাজের সমস্যা হবে। তবে ওঁর অসুবিধার কথা বুঝেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। পরে যখনই দরকার হবে, সুগতবাবুর কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য চাওয়া হবে।”
মন্ত্রী জানান, সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে আপাতত দায়িত্ব সামলাবেন। পরবর্তী চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে পরে। এই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। |