পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন ঘটনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী, পূর্বস্থলী কলেজের ছাত্র সৌভিক আইচ। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজের এজলাসে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রূদ্ধদ্বার আদালতে আরও চার অভিযুক্তের সঙ্গে হাজির ছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত পারুলিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা। প্রদীপবাবুর আইনজীবী প্রতীমসিংহ রায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা জেরা করেন সৌভিককে।
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি খুনের ঘটনার সময়ে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সৌভিক। ওই দিন দুপুরেই পূর্বস্থলী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে দু’দল ছাত্রের মারামারিতে আহত হন তিনি। আহত হয়েছিলেন আরেক টিএমসি সমর্থকও। তাঁদের দেখতেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সজল ঘোষ।
শুরুতেই প্রতীমবাবু সৌভিক আইচের কাছে জানতে চান তিনি এখনও পড়াশোনা করছেন কি না। সৌভিক জানান, তিনি বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এরপরে প্রতীমবাবু একের পর এক প্রশ্ন করে সজল ঘোষ খুনের দিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানতে চান। যেমন, ক’টার সময়ে তাঁকে তদন্তকারী অফিসার প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করেন, কোথায় করেন, তাঁকে কে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন, কোন চিকিৎসক তাঁকে জরুরী বিভাগে দেখেন ইত্যাদি। এরপর জানতে চান কলেজের গণ্ডগোলে কখন হয় ও কে কে দেখেছিলেন। সৌভিক কয়েকজনের নাম করেন, যেমন রতন ঘোষাল, কৌশিক চক্রবর্তী প্রমুখ। ওই গণ্ডগোলে আহত হয়ে সৌভিক নিজে কোনও এফআইআর করেছিলেন কিনা বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কারও নামে কোনও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কিনা সে প্রশ্ন করা হলে সৌভিক বলেন না। এরপর তাঁর বাড়ি থেকে কলেজ, পূর্বস্থলী থানা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নবদ্বীপ হাসপাতাল কতদূরে তা জানতে চান আইনজীবি। এরপর প্রশ্ন করেন, পূর্বস্থলী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর নবদ্বীপ হাসপাতালের মধ্যে কোনটি কাছে? সৌভিক উত্তর দেন, পূর্বস্থলী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এরপরে সন্তু ভৌমিকও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কি না, তার সঙ্গে আর কে ছিল এ সমস্ত জানতে চান আইনজীবী। প্রদীপবাবুর আইনজীবি বলেন, সন্তু আপনাদের দলের ছেলে নয়, আপনারা যা রাজনৈতিক মতবাদ ও আদর্শে বিশ্বাস করেন তাও সন্তুবাবু বিশ্বাস করেন না। সৌভিক বলেন, হ্যা। প্রতীমবাবু বলেন, তাহলে দলের কর্মী না হওয়ায় তার প্রতি আপনার বিশ্বাস বা আস্থা কোনটাই নেই। সৌভিক বলেন, আছে।
ইতিপূর্বে আদালতে দেওয়া গোপন জবানবন্দি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় সৌভিককে। সাক্ষী ভেবেচিন্তে হ্যাঁ, না অথবা মনে নেই বলতে থাকেন। প্রতীমবাবু জানতে চান, সাক্ষী তার গোপন জবানবন্দিতে নবদ্বীপ হাসপাতালের কোথায় খুনের ঘটনা ঘটেছিল, কখন ঘটেছিল তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। এটাও বলেননি কী ভাবে প্রদীপ সাহা ওই রাতে হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন। তার পোশাক বা মোটরবাইকে যে আরও তিন জন ছিল সেকথাও বলেননি। প্রতীমবাবু সাক্ষীকে বলেন, আপনি গোপন জবানবন্দিতে এটাও বলেন নি প্রদীপ সাহা সজল ঘোষকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন, বলেন নি প্রদীপ সাহা সেই রাতে বলেছিল ‘কাজ হয়ে গেছে, চলে আয়’। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই সৌভিক বলেন না অথবা মনে নেই।
এরপরে সৌভিকবাবুর তদন্তকারী অফিসার কে দেওয়া বয়ান বা সেই রাতে সজলবাবুর দেহের সুরতহাল করার সময় পুলিশকে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে পরপর প্রশ্ন করতে থাকেন প্রতীম সিংহ রায়। এক সময় তিনি সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন খুনের ঘটনার কতক্ষণ পরে হাসপাতালে পুলিশ এসেছিল। সাক্ষী বলেন, প্রায় ঘণ্টাখানেক পর। তখন প্রতীমবাবু জানতে চান, অথচ সাক্ষী তার এজাহারে বলেছেন ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে, তা হলে কোনটা ঠিক? এই প্রশ্নে তীব্র আপত্তি জানান নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁশুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বৃহষ্পতিবার আবারও শুনানি হওয়ার কথা।
|