সরকারি হোমে আশ্রিত মনোরোগীদের দেখতে যাওয়ায় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জেলার সমাজ কল্যাণ আধিকারিক মহম্মদ বদরুদ্দোজা। তিনি বলেন, “ওই রিপোর্ট অনুসারে জেলাশাসকের অনুমতি নিয়ে অধীর চৌধুরি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।” তবে জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু সেই অভিযোগপত্র যথাযথ কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যেমন জানা যাবে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত সোমবার জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারকে সঙ্গে নিয়ে কান্দি ব্লকের মহালন্দির ওই হোমে গিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের তকিপুরে মুখ্যমন্ত্রী পা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেই মহালন্দির ওই হোমের আবাসিক মনোরোগীদের প্রাগৈতিহাসিক যুগের চেয়ে অমানবিক অবস্থায় রাখার কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাই সোনার বাংলার স্বপ্ন ফেরি করা মুখ্যমন্ত্রীর খুব গোঁসা হয়েছে। এ কারণে সারদার প্রতীক মুখ্যমন্ত্রীর র্নিদেশে আমার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “পুরভোটের আগে খুনের সাজানো মামলায় আমাকে জেলে পুরতে না পেরে সিপিএমের বাধ্য ছাত্রী এ বার লোকসভা ভোটের আগে আমাকে ফের জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছেন। স্থানীয় সাংসদ হিসাবে এই শীতে নগ্ন অবস্থায় থাকা মনোরোগীদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, পথ্য ও পানীয় জল দাবি করেছি। তার জন্য জেলে পাঠালে আমার বয়েই গেল।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সংরক্ষিত এলাকায় জোর করে অনুপ্রবেশ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মীদের তিরস্কার করা-সহ বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযুক্ত করে রেল প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার আগের দিন গত মঙ্গলবার রেজিনগরের তকিপুরে ‘মিনি মহাকরণ’ সঙ্গে নিয়ে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী অধীরবাবুর সম্পর্কে ‘রাজনৈতিক সতর্কতা’ জারি করেছেন বলে জেলার কংগ্রেস নেতাদের দাবি। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন কারও কথা শুনে কাজ করবে না। কেবল রাজ্য সরকারের কথা শুনে কাজ করবে।” সরকারি কর্তাদের উদ্দেশে তাঁর কথার ইঙ্গিত স্পষ্ট করতে তার পরই তিনি বলেন, “আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। ইশারাই কাফি।’’ মুখমন্ত্রী সে কথা বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অধীরবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই প্ররোচিত হয়ে জেলা প্রশাসন অধীরদাকে ফের ফাটকে পুরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে কারণেই মানবিক একটি ঘটনাকে অধীরদার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।” শিলাদিত্যবাবু জানান, তিনি জেলা স্বাস্থ্য ও শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন। তাঁর কথায়, “আমি স্থানীয় সাংসদ হিসেবেই অধীরদাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। এতে কোনও অন্যায় নেই।” জেলা প্রশাসন অবশ্য শিলাদিত্যবাবুর সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রশাসনের নিয়ম মতোই হচ্ছে।” তিনি জানান, সপ্তাহ দু’য়েক আগে কান্দির মহকুমাশাসকও ওই হোম পরিদর্শন করেছেন। তারপরে রেল প্রতিমন্ত্রী ওই হোমে যাওয়ার পরদিনই অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন)-ও পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের নির্দেশে।
ওই হোমে রয়েছেন মোট ২১২ জন মনোরোগী আবাসিক। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সন্দীপ দত্ত বলেন, “ওই হোমের নতুন গৃহ নির্মান করার জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পানীয় জল সরবরাহের সুষ্ঠু পরিকাঠামো গড়এ তোলার জন্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক জন মনোরোগ বিশেজ্ঞ চিকিৎসক ও এক জন সাধারণ চিকিৎসক যাতে প্রতিদিন হোমে গিয়ে আবাসিকদের টিকিৎসা করেন সেই ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। ওই হোমের সার্বিক বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের কাছে রির্পোট করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক রির্পোট অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” ওই হোমের মোট জমির পরিমান প্রায় ৪৫ একর। তার মধ্যে ৪০ একরেরও বেশি জমি দীর্ঘ দিন ধরে জবরদখল হয়ে আছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপবাবু বলেন, “ওই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পর পদক্ষেপ করা হবে।” |