এক জেলায় হুঁশিয়ারি, পাশের জেলায় হাসিমুখ। মঙ্গলবার রেজিনগরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা তীব্র সমালোচনা করেন মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের, বুধবার ততটাই উদার হলেন নদিয়া জেলা প্রশাসনের প্রতি। নানা প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করলেন, সাংবাদিকদের কাছেও জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করলেন। এ দিন বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেন, সত্যিই কি উন্নয়নের কাজে এতটা ফারাক? নাকি রাজনৈতিক কারণে দুই জেলায় দু’রকম অবস্থান?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আগাগোড়াই খুব ভাল ‘মুডে’ ছিলেন। বারবার তিনি জেলার বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করেছেন। কাউকেই তেমন বকাঝকা করেননি। কেবল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তাদের তিনি দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেন। কারণ এই দফতরে সিংহভাগ বরাদ্দ এখন খরচ হয়নি। তবে এ দিন নদিয়ার পুলিশ তাঁর রোষের মুখে পড়েনি। রাস্তায় তোলা আদায়ের জন্য মুর্শিদাবাদের পুলিশকে মমতা মঙ্গলবার ভর্ৎসনা করলেও, নদিয়ার পুলিশকর্তাদের কেবল নির্দেশ দিয়েছেন, থানাগুলির পরিদর্শনের কাজ আগামী ১০ দিনে শেষ করতে। |
বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা নদিয়ার সাফল্যের কথা তুলে ধরে জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করেন। তাঁর দাবি, নদিয়া জেলা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে প্রথম। বিপিএল পরিবারে বিদ্যুৎ-সংযোগের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে, বাকি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। চারশো কোটি টাকার ৯৯টি আর্সেনিক-মুক্ত পানীয় জলের প্রকল্পের ৪৫টি শেষ হবে মার্চের মধ্যে। এই আর্থিক বছরের শেষে নদিয়া জেলাকে ‘মডেল জেলা’ হিসাবে ঘোষণার সম্ভবনার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। নানা প্রকল্পে একের পর এক জেলার সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের রেকর্ড আমরাই ভাঙব।” আরও ভাল কাজ করলে পুরস্কার দেবার আশ্বাসও দেন তিনি।
সিপিএম এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মেঘলাল শেখ বলেন, “এখানে কাজটা আসল নয়। মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদ কংগ্রেসের। তাই ভাল কাজ করলেও সেখানে সমালোচনা করতে হবে। আর নদিয়ার জেলা পরিষদ তৃণমূলের, তাই কাজ না করলেও প্রশংসা করতে হবে। পুরোটাই রাজনৈতিক কারণে।” জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএম এর স্বপন ঘোষের দাবি, বামফ্রন্ট আমলের কাজ এখনকার সাফল্য বলে দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। “বিভিন্ন গ্রামে গেলেই বোঝা যাবে বিদ্যুদয়নের কী হাল,” মন্তব্য করেন তিনি।
নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “উনি চান না কোথাও বিরোধীরা থাকুক। মুর্শিদাবাদে মানুষের ভোটে জেলা পরিষদ থেকে পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। এটা ওনার ভাল লাগছে না। তিনি প্রশাসনকে আগাম সতর্কতা দিয়ে রাখলেন।”
মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস নেতা এবং কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও তা-ই বলেন। তাঁর বক্রোক্তি, “মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন তৃণমূলের যতটা তাঁবেদারি করেছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট নন। আরও তোষণ না করলে এ রকমই সমালোচিত হবে, সেই ইঙ্গিতই তকিপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে দিয়ে গেলেন।” এ দিন বিরোধী দলের তিন বিধায়ক ও জেলা পরিষদের ২১জন সদস্য আমন্ত্রণ পাননি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে। তাতে দলতন্ত্রের অভিযোগ আরও পোক্ত হয়েছে। স্বপনবাবুর অভিযোগ, “জেলা পরিষদের ২১ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে কী ভাবে জেলার উন্নয়ন হবে, আমরা বুঝতে পারছি না।”
যখন জেলা পরিষদ ছিল বামফ্রন্টের, তখন মমতার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে ডাকা হয়নি। তৃণমূলের তরফে বলা হতো, প্রশাসনিক বৈঠকে সভাধিপতির কোনও প্রয়োজন নেই। এ বার কিন্তু ছবিটা একেবারেই আলাদা। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন বৈঠকে প্রথম সারিতেই বসেছিলেন তৃণমূলের সভাধিপতি বাণীকুমার রায়। কেন ভিন্ন ছবি? জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, “কারণটা খুবই সহজ। আমাদের জেলা পরিষদ উন্নয়নের প্রতীক। যাঁদের নেতৃত্বে জেলা পরিষদ পরিচালিত হচ্ছে, সেই সভাধিপতি ও সদস্যদের তো ডাকতেই হবে।” |