নদী পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ না হলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের বিশেষজ্ঞরা। বুধবার লালগোলা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার জুড়ে গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা। আট জনের ওই প্রতিনিধি দলে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রকের বাস্তুকারেরা ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রীর অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি অরিজিৎ দে ও ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্র কুমার হালদার। ওই বিশেষজ্ঞ দলের প্রবীণ সদস্য অরুণ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘ফরাক্কা থেকে লালগোলার খাণ্ডুয়া পর্যন্ত নদীর পাড় বরাবর অসংখ্য ইটভাটা গজিয়ে উঠেছে। নদীর পাড় থেকে লরি বোঝাই করে মাটি কাটা হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে বার বার মৌখিকভাবে জানানোর পাশাপাশি চিঠিও লেখা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। যতদিন এইভাবে মাটি কাটা চলবে ততদিন গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন রোধে যে কাজই করা যাক না কেন তা টিঁকবে না। অর্থ ও চেষ্টা দুটোয় জলে যাবে।” তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গিপুরের নারুখাকিতেও পদ্মার ভাঙ্গন রোধ সম্ভব নয়। কারণ নদীর দুই পাড় কখনোই বাঁধানো যায় না। এক পাড়ে নারুখাকির বর্ডার আউট পোস্ট। অন্য পাড়ে বাহুরা, ময়া প্রভৃতি গ্রাম। হয় নারুখাকির ভাঙন ঠেকাতে হবে, না হলে বাহুরার লোকালয় রক্ষা করতে হবে।” |
|
|
জঙ্গিপুর পদ্মার ভাঙন দেখতে কেন্দ্রের জলসম্পদ
দফতরের প্রতিনিধি দল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |
|
বুধবার লালগোলার ময়া, বাহুরা, মিঠিপুর, সুতি, অরঙ্গাবাদের মতো বেশ কিছু ভাঙন কবলিত এলাকার পরিস্থিতি সরজমিনে দেখেছেন ওই বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যথেষ্ট বিপজ্জনক ও সমস্যাবহূল। দিল্লি ফিরে জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পেশ করা হবে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে জলসম্পদ মন্ত্রক যোজনা বরাদ্দ করে অর্থ মন্ত্রকের কাছে জমা দেবে। সেই অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু সম্ভব। কারণ জল সম্পদ মন্ত্রকের নিজস্ব কোনও ফান্ড নেই যা দিয়ে এই বিশাল এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন রোধের কাজ করা যায়। এর জন্য অর্থ মন্ত্রকের কাছ থেকে বাড়তি বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ দরকার।
ভাঙনের কারণ নিয়ে কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত রাজ্য সরকারের সেচ ও গঙ্গা ভাঙন দফতরের মুর্শিদাবাদের সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষও। তিনি বলেন, “আমাদের দফতর থেকেও বহুবার রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নদীর পাড় থেকে ইটভাটাগুলির মাটি কাটা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নিতে সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু মাটি কাটা বন্ধ হয়নি আজও। নদী পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। তা না হলে গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন কোনওভাবেই রোধ করা যাবে না।” নারুখাকি বর্ডার আউটপোস্ট থেকে পদ্মার দূরত্ব ছিল ৩০০ মিটার। বর্তমানে সেই দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০ মিটারে। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, “ভাঙন রোধের জন্য ব্যবস্থা নিতে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এ বছর অগষ্ট মাস থেকে নারুখাকিতে ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। পরিস্থিতি তেমন হলে সীমান্ত চৌকি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
|