|
|
|
|
সৌজন্যে চাপা ঠান্ডা লড়াই, সর্বসম্মতিতে পুরপ্রধান দুর্গেশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
গঙ্গাজল ছিটিয়ে ঝাড়গ্রাম পুরসভার দখল নিল তৃণমূল। সর্বসম্মতিক্রমে পুরপ্রধান পদে নির্বাচিত হলেন শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব ওরফে দুর্গেশবাবু। বুধবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে অবশ্য তৃণমূলের দুই শিবিরের ‘ঠান্ডা লড়াই’য়ের সাক্ষী রইলেন আমজনতা। পাশাপাশি, ‘আমরা-ওরা’ বিভেদ ঘুচিয়ে রাজনৈতিক সৌজন্যের আবহও দেখা গেল শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান-মঞ্চে। ১৬ জন নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্গে এক সারিতে ছিলেন একমাত্র বিরোধী কাউন্সিলর সিপিআইয়ের জল্পনা মিদ্যা।
বুধবার সকাল থেকে পুরসভায় ছিল সাজো-সাজো রব। পুরভবনের লাগোয়া প্রধান রাস্তার ধারে শপথগ্রহণের জন্য নীল-সাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ১৭ জন নব-নির্বাচিত কাউন্সিলরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রকাশ্য মঞ্চে শপথ নেন কাউন্সিলরেরা। |
|
পুরপ্রধান পদে শপথ নিচ্ছেন শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
তার আগে এদিন সকাল সোয়া এগারোটা নাগাদ শহরের অফিসার্স ক্লাব মাঠ থেকে তৃণমূলের মিছিল শুরু হয়। মিছিলের পুরোভাগে দুই ব্রাহ্মণ আম্রপল্লবে গঙ্গাজল ছেটাতে-ছেটাতে আসেন। মিছিলে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে ছিলেন দুই মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা ও সৌমেন মহাপাত্র , তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। মিছিলের একেবারে পিছনে ছিলেন মুকুল রায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত শহর সভাপতি তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর প্রশান্ত রায় ও তাঁর অনুগামীরা। অন্দরের খবর, পুরসভার পদ নিয়ে দুর্গেশ-শিবির ও প্রশান্ত-শিবিরের ঠান্ডা লড়াইয়ের জেরেই মিছিলে এই দূরত্ব।
পাঁচ মাথা মোড়, শিবমন্দির মোড় হয়ে মেন রেল ক্রশিং পেরিয়ে দুপুর বারোটা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় নিমতলায় পুরভবনের সামনে। রাস্তার ধারে প্রকাশ্য মঞ্চে ১৭ জন কাউন্সিলরকে পুরসভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। ১৭ জন কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পাঠ করান ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ। দুর্গেশবাবু, প্রশান্তবাবু-সহ চার জন কাউন্সিলর ইংরেজিতে শপথ নেন। বাকিরা শপথ নেন বাংলায়।
এরপর দুপুর ১টা নাগাদ পুরভবনের সভাঘরে পুরপ্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়াটি হয়। তার আগে পুরভবনেও গঙ্গাজল ছেটানো হয়। মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে পুরপ্রধান নির্বাচনের সভাটি পরিচালনার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে প্রশান্তবাবুকে সভাপতি করা হয়। পুরপ্রধান হিসেবে দুর্গেশবাবুর নাম প্রস্তাব করেন কল্লোল তপাদার। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন কবিতা ঘোষ ও সিদ্ধার্থ দুবে। সর্বসম্মতিক্রমে দুর্গেশবাবু পুরপ্রধান নির্বাচিত হন। ওই সভায় বিরোধী কাউন্সিলর সিপিআইয়ের জল্পনা মিদ্যাও ছিলেন। পুরপ্রধান হিসেবে দুর্গেশবাবুকে মন্ত্রগুপ্তি পাঠ করান মহকুমাশাসক। তবে এ দিন কাউকে উপপুরপ্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়নি।
পুরপ্রধান নির্বাচনের পরে পুরসভার বাইরে প্রকাশ্য মঞ্চে ফের আসেন দুর্গেশবাবু-সহ দলীয় ১৬ জন কাউন্সিলর। মঞ্চে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় তৃণমূলের দলনেতা ও সহকারী দলনেতার নাম ঘোষণা করেন। দীনেনবাবু জানান, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা হলেন আন্দমোহন পণ্ডা ও সহকারি দলনেতা হলেন কল্লোল তপাদার। নতুন পুরপ্রধান দুর্গেশবাবু বললেন, “টানা ৩১ বছর ক্ষমতায় থেকে বামেরা এই অরণ্যশহরকে বস্তিতে পরিণত করেছে। ঝাড়গ্রামবাসীর প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। সর্বাগ্রে পানীয় জলের মাস্টার প্ল্যান রূপায়নের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”
এ দিন সভা চলাকালীন মঞ্চে একেবারে পিছনের সারিতে বসেছিলেন প্রশান্তবাবু। তাঁকে কিছু বলতে অনরোধ করেন দীনেনবাবু। প্রশান্তবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে রাজ পরিবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সেই রাজপরিবারের উত্তরসূরি দুর্গেশবাবুর হাতে শহরের ভার অর্পিত হয়েছে। অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা, জবরদখল মুক্ত উপযুক্ত চলার পথ, বস্তি এলাকার আধুনিকীকরণের কাজ করতে হবে। চাই দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন। আজ থেকেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেল।”
রাজনৈতিক মহলের মতে,
দুর্গেশ-শিবির বনাম প্রশান্ত-শিবিরের ঠান্ডা লড়াইয়ের কাউন্টডাউনও শুরু হয়ে গেল এ দিন থেকেই। বামেদের কটাক্ষ, “ওরা যদি নিজেদের মধ্যে লড়াই করেন, তা হলে শহরের ভোলবদল করবেন কী ভাবে?”
|
পুরনো খবর: নীল-সাদা ঝাড়গ্রামে আজ পুরপ্রধান নির্বাচন |
|
|
|
|
|