|
|
|
|
সব মহলের কাছের, টেক্কা ভাবমূর্তিতেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারের ইতিহাস প্রায় চারশো বছরের পুরনো। রাজপরিবারের উত্তরসূরিদের এখনও ‘বিশেষ চোখে’ দেখেন পুরবাসী। অরণ্যশহরে গণতন্ত্রের পরীক্ষায় রাজপুরুষকে ‘সেনাপতি’ করে পুরভোটে লড়েছিল তৃণমূল। শুরু থেকেই বছর ছাপ্পান্নোর প্রৌঢ়টি স্মিত হেসে জানিয়েছিলেন, সব ক’টি আসনই দলনেত্রীকে উপহার দেবেন। কথা রেখেছেন ক্ষত্রিয় কুলোদ্ভব দুর্গেশ মল্লদেব! রাজনীতি যে তাঁর রক্তে। একটি বাদে বাকি ১৬টি আসনেই ঘাসফুল ফুটেছে। এই আবহে মাত্র আড়াই বছর আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া দুর্গেশবাবুর উপরই আস্থা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরে পুরপ্রধান হিসেবে দুর্গেশবাবুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যাশিত ভাবে বুধবার দুর্গেশবাবুই সর্বসম্মতিক্রমে ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।
কেন দুর্গেশবাবু?
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে বটে, কিন্তু ঝাড়গ্রামে রাজ আনুগত্য আজও অমলিন! ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ দুর্গেশবাবুকে তাই পুরপ্রধান করা হয়েছে। বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলে যোগ দেন দুর্গেশবাবু। কিন্তু গত আড়াই বছরে কখনও তিনি কোনও বিশেষ শিবিরের লোক হয়ে ওঠেননি। মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। রাজনীতির আকচাআকচির মধ্যে কোনও দিনই হাঁটেননি তিনি। দুর্গেশবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, সেই কারণে তিনি সব মহলেরই কাছের লোক। রাজার নীতির মতোই তাঁর রাজনীতি। মমতাও ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারকে সুনজরে দেখেন। ফলে এই সমাপতন অনিবার্যই ছিল।
ঝাড়গ্রামের শেষ রাজা নরসিংহ মল্ল-উগাল-ষণ্ডদেবের পৌত্র (নাতি) দুর্গেশবাবুর পোষাকি নাম শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব। দুর্গেশবাবুর রক্তে রাজনীতি রয়েছে। ঠাকুর্দা নরসিংহ ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ। দুর্গেশবাবুর বাবা বীরেন্দ্রবিজয় মল্লদেব তিন দফায় ঝাড়গ্রামের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। সেই সূত্র ধরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বাণিজ্যের স্নাতক দুর্গেশবাবুর হাতেখড়ি হয় ছাত্র-রাজনীতিতে। পরে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম মহকুমা সভাপতি হন। রাজ্যের ক্ষমতার পালাবদলের পরে ২০১১ সালের ৩ জুন তৎকালীন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ ও দুর্গেশবাবু একইসঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন। নির্মলবাবু এখন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি এবং দুর্গেশবাবু এখন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক। পুর রাজনীতিতে দুর্গেশবাবুর পুরনো অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পুরনো ১০ নম্বর (এখন ১৪) ওয়ার্ডে টানা পাঁচ বছর (২০০৩-২০০৮) কাউন্সিলর ছিলেন। ওই সময় পুরসভার বিরোধী দলনেতাও ছিলেন দুর্গেশবাবু। এখন আবার ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িকে ঘিরে জঙ্গলমহলের পর্যটন পরিকাঠামো ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সেপ্টেম্বরে দুর্গেশবাবুদের সঙ্গে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষের মৌ-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “দুর্গেশবাবুর পূর্বপুরুষেরা ঝাড়গ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির মানোন্নয়নে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। দুর্গেশবাবুর নামের সঙ্গে ঝাড়গ্রামবাসীর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।” দুর্গেশবাবু অবশ্য বিনীত ভাবে বলছেন, “দলনেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ। ঝাড়গ্রাম শহরকে আধুনিক ভাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত পুর-পরিষেবা দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|