নীল-সাদা ঝাড়গ্রামে আজ পুরপ্রধান নির্বাচন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
আজ, বুধবার পুরপ্রধান-নির্বাচন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় নীল-সাদা রঙে সেজে উঠেছে ঝাড়গ্রাম পুরভবন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য শহরের নিমতলায় প্রধান রাস্তায় নির্মীয়মান উড়ালপুলের পাশে নীল-সাদা রঙের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ শহরের ছিমছাম মোড় থেকে সেখানে মিছিল করে যাবেন তৃণমূলের ১৬ জন নির্বাচিত সদস্য এবং নেতা-কর্মীরা। অস্থায়ী মঞ্চে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক এস অরুণপ্রসাদ। এরপর পুরভবনের সভাঘরে পুরপ্রধান হিসাবে প্রস্তাব করা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষিত ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজ পরিবারের উত্তরপুরুষ শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব ওরফে দুর্গেশবাবুর নাম। |
|
নতুন সাজে ঝাড়গ্রাম পুরভবন। |
তবে, উপপুরপ্রধান বা তৃণমূলের দলনেতা কে হবেন, এখনও ঠিক হয়নি। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “উপ-পুরপ্রধানের বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করব না।”
গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে কার্যত ধুয়ে-মুছে যাওয়ার পর অনেকটা দ্বীপের মতোই ঝাড়গ্রাম শহরে বামেরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। টানা ৩১ বছর পুরসভার ক্ষমতায় থাকা বামেরা পুরভোটে অন্তত সাত-আটটি ওয়ার্ড জেতার প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু ২৫ নভেম্বর ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দেখা যায় ১৭টি ওয়ার্ডের (৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট হয়নি) মধ্যে ১৬টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। কেবলমাত্র ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী জল্পনা মিদ্যা বামেদের মুখরক্ষা করেছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তৃণমূলের পথ নিষ্কণ্টক হয়নি। পুরভোটের আগে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে প্রচারসবেতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখা গিয়েছিল। শপথগ্রহণের আগে ফের শহর তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে ‘ঠান্ডা লড়াই’ শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়কে উপপুরপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশান্তবাবু ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর প্রশান্তবাবুকে দলনেতা হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি। |
|
ঝাড়গ্রাম পুরপ্রধানের অফিসঘরে ঝাড়পোঁছ। |
দলীয় সূত্রের খবর, প্রশান্ত রায়-শিবির চাইছেন, সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী শিউলি সিংহকে উপপুরপ্রধান করা হোক। কারণ, কাউন্সিলর হিসেবে শিউলিদেবীর পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এ দিকে, উপপুরপ্রধানের দৌড়ে রয়েছেন দুর্গেশবাবুর ঘনিষ্ঠ ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত ঘনশ্যাম সিংহও। বিদায়ী পুরপ্রধান সিপিএমের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী প্রদীপ সরকারকে হারিয়ে দিয়েছেন ঘনশ্যামবাবু। ফলে, দলের অন্দরেই তাঁকে ‘পুরস্কৃত’ করার দাবি উঠেছে। আবার ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রাক্তন শিক্ষিকা কবিতা ঘোষও উপপুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ কবিতাদেবীর নাম প্রস্তাব করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছেন। দলের আদিবাসী নেতা-কর্মীর একাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাউকে উপ-পুরপ্রধান হিসেবে চাইছেন। সেক্ষেত্রে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত লক্ষ্মী সরেনের নাম উঠে আসছে। গত সোমবার ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের উপস্থিতিতে উপ-পুরপ্রধান ও দলনেতার নাম বাছার জন্য এক বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু ওই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, উপপুরপ্রধান পদের জন্য একাধিক নাম নিয়ে দলের অন্দরে দড়ি টানাটানি শুরু হওয়ায় বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে লিখিত ভাবে উপপুরপ্রধান ও দলনেতার নাম ঘোষণা করে পাঠানো হবে। তবে, উপপুরপ্রধানকে মনোনীত করেন স্বয়ং পুরপ্রধান। সেক্ষেত্রে উপপুরপ্রধান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজপুরুষের মতামতকে রাজ্য নেতৃত্ব গুরুত্ব দেবেন বলে মনে করছেন দুর্গেশবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল। |
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
পুরনো খবর: পুরপ্রধান নিয়ে জল্পনা ঝাড়গ্রামে |
|