আমেরিকায় ভারতীয় কূটনীতিকের হেনস্থার ঘটনাকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতে সংসদে দ্বিমুখী রণকৌশল নিলেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতিরা। এক দিকে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বল নেতৃত্বের অভিযোগ তুলে সরব হলেন তাঁরা। অন্য দিকে, মোদীর মার্কিন ভিসা না পাওয়ার বিষয়টিও ফের খুঁচিয়ে তুললেন।
নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ের হেনস্থা নিয়ে আজ সংসদের শেষ দিনে উভয় কক্ষে সরব হন সব দলের নেতারাই।
কিন্তু বিজেপি বিষয়টিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে মোদীর মতো ‘শক্তিশালী’ নেতৃত্বের প্রয়োজনীতার কথা তুলে ধরে। সেই সঙ্গে মোদীর কৌশল রচনার অন্যতম রূপকার অরুণ জেটলি তাঁদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মার্কিন ভিসা না পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ইউপিএ সরকারকেই
তার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করান।
তাঁর বক্তব্য, এখন ভারতীয় কূটনীতিককে হেনস্থার বিষয়ে গোটা সংসদ এককাট্টা হচ্ছে। কিন্তু যখন এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে মার্কিন ভিসা দেওয়া আটকে গিয়েছে, তখন
কেন্দ্রের সরকার ঘরোয়া রাজনীতিকেই গুরুত্ব দিয়ে আমেরিকার সঙ্গে
আপস করেছে।
চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটে সাফল্যের পর এ বার লোকসভা ভোটের অগ্নিপরীক্ষার মুখে বিজেপি। মোদীর কাঁধেও গুরুদায়িত্ব। বিধানসভায় কংগ্রেস ধরাশায়ী হওয়ার পর মোদীর জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করার ব্যাপারে কোনও সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না তাঁর টিম। আর সে কারণেই মহিলা কূটনীতিকের হেনস্থার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়েও ময়দানে নেমে পড়েছেন মোদী।
রাহুল গাঁধী এবং লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার যেমন আমেরিকার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করতে চাননি, তেমনই মোদীও মার্কিন
দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করার পাশাপাশি টুইটারে সে কথা ফলাও করে জানিয়েছেন।
জেটলির মতে, “ভারতের দুর্বল বিদেশনীতির জন্যই আজ এই খেসারত দিতে হচ্ছে।” লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজও একই সুরে বলেছেন, “ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য আমাদের দেশের আদালত ইতালির নাবিকদের ছেড়ে দেয়, অথচ টোগোর মতো দেশও আমাদের চমকায়। তারা আমাদের দেশের এক নাবিককে মানবিক কারণেও ছাড়তে রাজি নয়। যেখানে তাঁর ১১ মাসের সন্তান মারা গিয়েছে। এ কোন কূটনীতির পরিচয়?”
আরএসএস সূত্রের খবর, আমেরিকার বিরুদ্ধে খবরদারির অভিযোগ তুলে বিষয়টিকে এ বার প্রচারের অঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করবেন মোদী। সঙ্ঘ গোড়া থেকেই স্বদেশিয়ানায় জোর দিয়ে এসেছে। নতুন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত তুলনায় আধুনিক মনস্ক হলেও আরএসএস এখনও স্বদেশিয়ানার পথ থেকে সরে আসেনি।
যে কারণে মোদীর মতো উন্নয়নমুখী নেতাদের প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করতে হয়েছে বিজেপিকে। সঙ্ঘের এই মত অনুসারেই এখন মোদী বিভিন্ন সভায় বলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি এ দেশের অর্থনীতিকেই আরও পারদর্শী করার চেষ্টা করবেন। তিনি বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নন। কিন্তু যদি সেই সামগ্রী এই দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তা হলে কেন বিদেশি বিনিয়োগ করা হবে? কেন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রচুর অর্থ খরচ করে বিদেশ থেকে কিনতে হবে? ভবিষ্যতে
মোদীর প্রচারে আমেরিকা বিরোধী অবস্থান আরও তীব্র হবে বলেই সঙ্ঘ সূত্রের খবর।
|