|
|
|
|
ভোটে অস্ত্র হবে সাফল্যই, দাবি মনমোহনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৮ ডিসেম্বর |
বিরোধীরা দুর্বল নেতৃত্বের অভিযোগ তোলেন তাঁর বিরুদ্ধে। তবু যখন-তখন যে কোনও বিতর্কে মুখ খোলা তাঁর অভ্যাসের বাইরে। এ জন্য দশ বছর ধরে বিরোধীদের কম আক্রমণ ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। সম্প্রতি আবার তার রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ মুখ খুললেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে। দলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সরকারের সাফল্যকে পুঁজি করেই লোকসভা ভোটে যাওয়া উচিত হবে কংগ্রেসের পক্ষে। সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুললেন নরেন্দ্র মোদীর নীতি নিয়ে। বিঁধলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও।
ইউপিএ দ্বিতীয় দফার সরকার এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ১৭ জানুয়ারি দলের সম্মেলন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুল গাঁধীর নাম ঘোষণা হতে চলেছে বলে চলছে জোর জল্পনা। এমন একটা পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত এক দশকের লাভক্ষতির হিসেব তুলে ধরলেন মনমোহন। জানালেন, সরকারের সাফল্যের খতিয়ানে কম কিছু জমা হয়নি এই এক দশকে। আগামী নির্বাচনে সেই সব সাফল্যকেই পুঁজি করতে হবে সরকারকে। আর ভুলভ্রান্তি, কাজের খামতি নিয়ে যে সব অভিযোগ উঠছে, দলকেই তার মোকাবিলা করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, অভিযোগ তোলা সহজ। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কোনও কাজ করতে হয়েছে বা করা যায়নি, সে কথা মানুষের কাছে তুলে
ধরার দায়িত্ব নিতে হবে দলকেই। আগামী দিনে দলের মুখ হিসেব রাহুলকে তুলে ধরার এই পর্বে মনমোহন যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সুফলের উপর ভরসা করেই আগামী দিনে এগোতে হবে দলকে। রাহুলকেও।
একই সঙ্গে বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণেরও জবাব দিয়েছেন মনমোহন। নরেন্দ্র মোদী সুযোগ পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্বল নীতি নিয়ে অভিযোগ তুলে থাকেন। এ দিন তাঁর নাম না করেই মনমোহন পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন, সরকারে এলে মোদী কী নীতি নিয়ে চলবেন? প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “কেবল দৃঢ় নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার কথা বললে হবে? নীতি নিয়ে কোনও আলোচনা ছাড়া নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার কী অর্থ? ওই নেতৃত্ব কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে তা-ও তো জানাতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিতে চেয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালদেরও। তাঁর কথায়, “অন্য কিছু রাজনৈতিক দলের মতো কংগ্রেস এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেবে না যা বাস্তবে রূপায়ণ করাই সম্ভব নয়।”
অনেকেই বলছেন, যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আম আদমি পার্টি ভোটে জিতেছে, তা বাস্তবে করে দেখানো সম্ভব নয়। সে জন্যই অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা এখন সরকার গড়তে চাইছেন না। মনমোহনও আজ সেই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে বক্তৃতা দেন দলনেত্রী সনিয়া গাঁধীও। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের দিনই সনিয়া বলেছিলেন, হারের কারণ খতিয়ে দেখতে গভীর সমীক্ষা প্রয়োজন। হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সনিয়া বলেন, “দিল্লি ও রাজস্থানে সরকারের কাজ নিয়ে কিছু মানুষ হয়তো খুশি ছিলেন না। তা ছাড়া দলে শৃঙ্খলা ও ঐক্যেরও অভাব ছিল।”
তবে সনিয়ার তুলনায় মনমোহনের বক্তব্যই আজ রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভোটের মুখে ঘরে-বাইরে যে সব অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠছে, তার জবাব দিতে আজ সচেষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য একশো দিনের কাজ, খাদ্য সুরক্ষা, তথ্যের অধিকার, অরণ্যের অধিকার, পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো সাফল্যের বিষয়গুলি উল্লেখ করেন তিনি। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি এবং দুর্নীতির প্রশ্নে তাঁর সরকার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও খণ্ডন করার চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, মুদ্রাস্ফীতি হল অন্যতম বিষয় যা নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। এটা ঠিক যে, মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে। কিন্তু এ-ও তো ঠিক যে মানুষের আয় তার থেকে বেশি হারে বেড়েছে। এই সরকারের নীতির কারণেই দুর্বল শ্রেণির হাতেও এখন কিছু টাকা আসছে যা দিয়ে তাঁরা খাদ্য দ্রব্য কিনতে পারছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার কথায়, সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার মুখে কংগ্রেসের নেতারা সাফল্যগুলি তুলে ধরার সাহসও দেখাতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী তাই তাঁদের দিশা দেখাতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, “সরকারের সাফল্যের জন্য যে প্রশংসা পাওয়া উচিত তা কেন সরকার পায়নি, তার কারণও বুঝতে হবে।” সেই বিষয়টি অনুধাবন করেই ভোটে যাওয়ার আগে আগামী বিশ বছরের জন্য দ্রুত সার্বিক বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বৃদ্ধির জন্য যে দেশে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ও সহনশীল বাতাবরণ কায়েম রাখা কতটা জরুরি, সে কথাও মানুষকে বোঝাতে বলেন মনমোহন।
|
পুরনো খবর: মোদীকে আমল কেন, দলে প্রশ্ন মনমোহনের মম্তব্যে |
|
|
|
|
|