আম আদমিকে রুখতে লোকপালে একজোট
ত কাল রাজ্যসভার পরে আজ লোকসভাতেও পাশ হয়ে গেল লোকপাল বিল। কংগ্রেস থেকে বিজেপি, তৃণমূল থেকে বিএসপি সকলেই সমর্থন করল সেই বিল। রাজ্যসভায় ওয়াকআউট করলেও লোকসভায় হাজির থেকেই নামমাত্র বিরোধিতা করল মুলায়মের দল।
আর দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে লোকপাল বিল পাশ করানোর কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়ে গেল দলগুলির মধ্যে।
তবে কৃতিত্বের ভাগীদারি নিয়ে দড়ি টানাটানির আড়ালে লোকপাল নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির ঐকমত্য অনেকেরই নজর এড়াচ্ছে না। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে তাঁরা বলছেন, কোনও রাজনৈতিক দলই চায় না যে, একটা অরাজনৈতিক শক্তি তাদের পরিসর দখল করে নিক। অথচ দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির উত্থান সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। লোকপাল বিলকে ঘিরে নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই কেজরিওয়ালের উত্থান। তাঁর পালের হাওয়া কেড়ে নিতেই এখন সব দল এক মঞ্চে এসেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এই অংশের মত।
বস্তুত লোকপাল বিল পাশ করাতে এই তৎপরতার নজির খুব বেশি নেই। বিজেপি-র লাগাতার বিরোধিতার জেরে সংসদ গত সপ্তাহেই মুলতুবি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকপাল প্রসঙ্গ সামনে এসে যাওয়ায় শুধু এই বিলটি পাশ করাতে রাজি হয়ে যায় তারা। আজ বিল পাশের পরেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি হয়ে গিয়েছে সংসদ। নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই।
লোকপাল বিল পাশের পরে কংগ্রেসের তরফে দাবি করা শুরু হয়েছে যে, এই কৃতিত্ব তাদের। আসরে অবতীর্ণ হয়েছেন খোদ রাহুল গাঁধী। অন্য দিকে, বিজেপি-র বক্তব্য, তারাও তো বিলটি সমর্থন করেছে। ফলে কৃতিত্বের ভাগীদার তারাও।
লোকপাল বিল পাশের পর রালেগণ সিদ্ধীতে।
অণ্ণাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কিরণ বেদী। ছবি: পিটিআই।
কিন্তু এর অন্তরালে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই দক্ষতার সঙ্গে যে কাজটি করেছে সেটি হল, অরাজনৈতিক শিবিরে ভাঙন ধরানো। লোকপাল নিয়ে মূল আন্দোলনকারী অণ্ণা হজারেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা। কেজরিওয়াল এই লোকপাল বিলে সায় দেননি। কটাক্ষ করেছেন ‘জোকপাল’ বলে। অণ্ণা কিন্তু বিল পাশের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজই তুলে নিয়েছেন তাঁর অনশন।
চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই লোকপাল নিয়ে অণ্ণার নতুন আন্দোলনকে পরোক্ষে সমর্থন করে আসছিল বিজেপি। কিরণ বেদীর মাধ্যমে নিরন্তর অণ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু লোকপাল নিয়ে রাহুলের সাংবাদিক সম্মেলনের পর থেকে দেখা গেল, কংগ্রেসের সুরে কথা বলছেন অণ্ণা। ধন্যবাদ জানিয়ে অণ্ণা চিঠিও লিখেছেন রাহুলকে।
বিজেপি-র পাশ থেকে অণ্ণাকে কংগ্রেসের দিকে টেনে আনাকে রাহুলের বড় কৃতিত্ব হিসেবে দাবি করছে কংগ্রেস। দলের নেতারা বলছেন, দুর্নীতি দমনের বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের গ্লানি ঝেড়ে ফেলতে চান রাহুল। কিন্তু তার পরেও তাঁরা স্বীকার করছেন যে, বিজেপি-কে হারাতে পারার থেকেও বড় কাজ অণ্ণা এবং কেজরিওয়ালের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারা।
আসলে অণ্ণা শিবিরের সঙ্গে কেজরিওয়ালদের দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। সেটাকেই কাজে লাগিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। এ বার রালেগণ সিদ্ধীতে অণ্ণার অনশন মঞ্চে আম আদমি পার্টির নেতাদের প্রতি বিষোদ্গার করা হয়েছে। তাতে সায় দিয়েছেন অণ্ণা। প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের সঙ্গে বাদানুবাদের জেরে আম আদমি পার্টির নেতাকে অনশনস্থল ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাব-যাব করেও শেষ পর্যন্ত অনশন মঞ্চে কেজরিওয়ালের না-যাওয়া দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ইন্ধন জুগিয়েছে।
যার ফলস্বরূপ লোকপাল আন্দোলনের মূল হোতা অণ্ণা হজারেকে পাশে নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো একটি সদ্য গজিয়ে ওঠা শক্তির উত্থান ঠেকাতে আজ সব দল এককাট্টা।
কারণ, কেজরিওয়ালের শক্তি ক্ষয় হলে আখেরে লাভ সব দলেরই। কংগ্রেস মনে করছে, যে হেতু তারা ক্ষমতায়, তাই কেজরিওয়ালের আন্দোলন মূলত তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিতেই ক্ষয় ধরাচ্ছে। ফলে আম আদমি পার্টির শক্তি কমলে লাভ তাদের।
অন্য দিকে বিজেপি নেতাদের মতে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যে হাওয়া উঠেছে, তাতে লোকসভা ভোটের আগে তাদের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন। অতএব লোকসভার সঙ্গে দিল্লিতে ফের বিধানসভার ভোট হলে বিজেপি-র মূল প্রতিপক্ষ হবেন কেজরিওয়ালই। সেই দিকে তাকিয়ে এখন থেকে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা ভাল।
একক ভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েও বিজেপি যে ভাবে দিল্লিতে সরকার গড়তে অস্বীকার করেছে, কংগ্রেস যে ভাবে আম আদমি পার্টির প্রতি আগাম সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার পিছনে কেজরিওয়ালকে কোণঠাসা করার চেষ্টা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস-বিজেপি দুই শিবিরের নেতাদেরই মতে, বিরোধী আন্দোলন করা এক জিনিস, আর সরকার চালানো অন্য জিনিস। কুর্সিতে বসলেই কেজরিওয়ালকে কাজ করে দেখাতে হবে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ তখন যাচাই হবে রাজনীতির কষ্ঠিপাথরে। সেটা বুঝতে পেরেই কেজরিওয়াল সরকার গড়া থেকে পিছিয়ে আসছেন বলে কংগ্রেস-বিজেপি নেতাদের অভিযোগ।
আম আদমি পার্টি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কেজরিওয়াল নিজে বলেছেন, তাঁর দল যে অন্য ধারার সেটা কাজের মধ্যে দিয়েই প্রমাণ করবেন তাঁরা। তাঁর কথায়, “আম আদমিই যাবতীয় কঠিন কাজ করে। সরকার চালানোও তাদের পক্ষে কঠিন হবে না।” আর অণ্ণার সঙ্গে বিভাজন প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালের অভিযোগ, এর পিছনে বড়সড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। ব্যয় হয়েছে প্রচুর অর্থও।
আম আদমির সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের টানাপোড়েনের জল কোন দিকে গড়ায়, তা সময়ই বলবে। তবে রাজনীতিকদের প্রতি জেহাদ ঘোষণা করা অণ্ণাকে বাগে আনতে পেরে, এক সময়ের মূল সেনাপতি কেজরিওয়ালের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি করতে পেরে আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই।
আট দফা
• লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রী। বাদ যাবেন না অন্য সরকারি কর্মীরাও।
• লোকপালে এক জন চেয়ারপার্সন-সহ ৯ সদস্য। সদস্যরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
• কেন্দ্রে লোকপালের মতো রাজ্যে লোকায়ুক্ত। বিল পাশের এক বছরের মধ্যে তা গঠন করতে হবে।
• লোকপালের সদস্যদের নিয়োগ করবে একটি কমিটি। তাতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও।
• সিবিআই-সহ যে কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়োগ করবে লোকপাল। তখন তারা লোকপালের অধীনে।
• নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে লোকপালের বিচার। সাজা হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ বছর।
• সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের ভিত্তিতে লোকপালের সদস্যকে সাসপেন্ড করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
• ১০০ সাংসদের সই পেলে লোকপাল সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.