|
|
|
|
কে নেবে লোকপালের কৃতিত্ব, টানাটানি দুই দলে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৬ ডিসেম্বর |
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হতে মাত্র চার দিন বাকি। ও দিকে লোকপাল বিল পাশের দাবিতে সাত দিনের অনশনের পর অণ্ণা হজারের ওজনও কমেছে প্রায় চার কেজি। এই অবস্থায় ‘যা হোক তা হোক’ করে কালই রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করাতে এখন রাজি কংগ্রেস-বিজেপি উভয়েই। মুলায়ম সিংহ যাদব এখনও বেসুরো গাইলেও তাঁকে শান্ত করা নিয়ে প্রত্যয়ী কংগ্রেস।
কিন্তু খবরটা তা নয়! নতুন বিষয় হল, ছ’দশকের বাহানার পর ভারতবর্ষে লোকপাল নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির সম্ভাবনা ঝিলিক দিতেই কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস-বিজেপিতে।
সংসদে বিলটি পাশের সম্ভাবনা দেখে আগাম কৃতিত্ব নিতে শনিবারই সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন রাহুল গাঁধী। বিজেপি পিছিয়ে পড়ছে দেখে, গত কাল রাহুলকে তীব্র কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “এ সব লোক দেখানো নাটক। এতই যদি সদিচ্ছা থাকে তা হলে উত্তরাখণ্ডে লোকায়ুক্ত গঠনে অনুমতি কেন দিচ্ছে না কেন্দ্র।” আজ আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন,“ দশ বছর ধরে যিনি গুজরাতে লোকায়ুক্তই নিয়োগ হতে দেননি তিনি কোন মুখে এ কথা বলছেন!” কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, গুজরাতে লোকায়ুক্ত নিয়োগে বাধা দিতে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ে ৪৫ কোটি টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়েছে মোদী সরকার। মাত্র ক’দিন হল ঠ্যালায় পড়ে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেছেন মোদী।
অনেকের মতে, কৃতিত্বের ভাগ নিয়ে দুই জাতীয় দলের এই কাড়াকাড়ির কারণটা এখন খুবই স্পষ্ট। প্রশাসনিক দুর্নীতি সম্পর্কে মানুষের অসন্তোষ কতটা তা দিল্লি ভোটে আম আদমি পার্টির (আপ) উত্থানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর পর লোকপাল বিল নিয়ে বাহানা দূরের কথা কংগ্রেস-বিজেপি যে সক্রিয়তা যে দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক। এখন লোকপাল বিল পাশের কৃতিত্ব নিয়ে আম আদমি-র কাছে বার্তা পাঠাতে এই দু’দলই মরিয়া। কংগ্রেস বলছে, শুধু লোকপাল কেন, দুর্নীতিকে ঘিরে ধরে খতম করতে সাতটি বিল তৈরি করেছে সরকার। আর বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির বক্তব্য, “গত তিন বছর ধরে লোকপাল নিয়ে মানুষের আবেগকে পাত্তা দেয়নি কংগ্রেস। ভোটে হেরে এখন গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে।”
সন্দেহ নেই প্রাক্তন সহযোগী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মন কষাকষির কারণে, অণ্ণা এখন যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে কংগ্রেস-বিজেপি উভয়েরই সুবিধে হয়েছে। এক সময়ে লোকপালের দাবিতে অণ্ণার পাশে দাঁড়িয়েই আন্দোলন করেছিলেন আপ নেতা কেজরিওয়াল। কিন্তু এখন লোকপালের চেহারা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট। সরকারের বিলটিতে সায় দিয়েছেন অণ্ণা। কিন্তু আপের মতে, এই বিল গ্রহণযোগ্য নয়। সিবিআইয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে থাকলে বিলের বাকি সব বিষয়ই অর্থহীন। এ নিয়ে অণ্ণা শিবির ও কেজরিওয়ালদের মধ্যে চাপান উতোরও কম হয়নি।
এই অবস্থায় অণ্ণার সম্মতি নিয়ে দ্রুত বিলটি পাশ করাতে চায় কংগ্রেস ও বিজেপি। আজই রাজ্যসভায় লোকপাল বিল পেশের কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী সিসরাম ওলার মৃত্যুর কারণে আজ সংসদের দুই সভাই মুলতবি হয়ে যায়। তাই রাজ্যসভায় লোকপাল নিয়ে আলোচনা হবে কাল।
আলোচনা যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয় সে জন্য আজ সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি। কিন্তু লোকপাল বিলে আপত্তি জানিয়ে তাতে সামিল হয়নি সমাজবাদী পার্টি। আজ ফের মুলায়মের সঙ্গে কথা বলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ। অন্য দিকে বৈঠকে অরুণ জেটলি জানিয়ে দেন, কাল যদি সভায় হইচইও হয়, তা হলেও তার মধ্যেই যেন পাশ করিয়ে দেওয়া হয় লোকপাল বিল। পথের কাঁটা হবে না বলে জানিয়েছে তৃণমূল ও সিপিএমও। |
পুরনো খবর: আপ-এর চাপে লোকপালে একসুর দু’পক্ষই |
|
|
|
|
|