রাজ্যসভায় পেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি, প্রতিবাদ মমতার
খানিকটা চমক দিয়েই বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশনের শেষ দিনে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি পেশ করে দিল মনমোহন সরকার। দিল্লির এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ সরকার সন্তোষ প্রকাশ করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া সমালোচনা করেন। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “রাজ্যের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।”
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তিটি চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কংগ্রেস। তবে আজ সকাল পর্যন্ত রাজ্যসভার কর্মসূচিতে স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে কোনও উল্লেখ ছিল না। বেলা আড়াইটে নাগাদ অতিরিক্ত কর্মসূচিতে ওই বিলটি অন্তর্ভুক্ত করে তা বিতরণ করা হয় সদস্যদের মধ্যে। তৎক্ষণাৎ তার বিরোধিতায় সরব হন তৃণমূল, অগপ-সহ বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে ও এডিএমকে সদস্যরাও। তৃণমূল ও অগপ বিলটির রূপরেখা নিয়েই আপত্তি তোলে। অন্য দলগুলির বক্তব্য ছিল, সংসদে আলোচনা ছাড়া এই ধরনের সংবিধান সংশোধনী বিল সরকার পেশ করতে পারে না।
আলোচনা ছাড়া এই ভাবে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পেশ করাকে সরকারের ‘নির্লজ্জ কার্যকলাপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতা করে মমতা বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ১৭ হাজার একর জমি ছেড়ে দিয়ে ৭ হাজার একর জমি পাওয়াটা কোনও যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না। আজ ফেসবুকেও তিনি বলেন, “এই চুক্তি আমরা মানছি না, মানছি না, মানছি না।”
আজ বিকাল চারটেয় রাজ্যসভায় প্রথম বার বিলটি পেশ করার চেষ্টা করেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। বাধা দিতে ওয়েলে নেমে আসেন তৃণমূল ও অগপ সাংসদেরা। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। পনেরো মিনিটের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয় রাজ্যসভা। ওই সময়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন কুরিয়েন। ঢাকাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও সরকারের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সদস্যদের জানান তিনি। তার পরেও অবশ্য নিজেদের মত বদলাননি ডেরেক ও’ব্রায়ান, অরুণ জেটলিরা। কিন্তু অধিবেশন ফের শুরু হওয়া মাত্র তুমুল হইচইয়ের মধ্যেই বিলটি পেশ করে দেন খুরশিদ। ডেরেক তখন বলেন, “এ ভাবে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চাইছে। সিপিএম ও কংগ্রেস বাদে প্রায় সব দল ওই বিলের বিরুদ্ধে। যা দেখে মনে হচ্ছে ওই দু’দল বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।”
স্বভাবতই স্থলসীমান্ত বিল সংসদে পেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “এই বিল পেশ করাটা দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা একটি সমস্যার ইতিবাচক পদক্ষেপ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনে সহযোগিতা করেছিল ভারত। সেই সম্পর্ককে প্রসারিত করতে এই পদক্ষেপ মাইল-ফলক হয়ে থাকবে।” তবে বাংলাদেশ সরকারের অন্য একটি অংশের মতে ভারতের পদক্ষেপ অবশ্যই স্বাগত, কিন্তু তাঁদের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে বিলটি পাশ হলে ভাল হত। তবে মনমোহন সরকারের বক্তব্য, সময়ে ভোট হলে মাস ছয়েকের মধ্যেই পঞ্চদশ লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই আজ বিলটি রাজ্যসভায় পেশ হওয়ায় সেটি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা অন্তত রইল না।
এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ছিটমহলগুলিতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার খবর। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মৌলবাদীদের তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরাকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়তি বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে। বেড়েছে টহলদারিও। ভারতীয় ও বাংলাদেশি ছিটমহলগুলিতে সে অর্থে কোনও নিরাপত্তা পরিকাঠামো নেই। বিস্তীর্ণ ছিটমহলগুলিতে স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল তো দূরের কথা, থানা-পুলিশটুকুও নেই। এর আগেও বাংলাদেশে জঙ্গি-বিরোধী অভিযান শুরু হলেই দুষ্কৃতীরা মাথা গোঁজার জন্য ছিটমহলগুলিকে বেছে নিয়েছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই সাতক্ষীরা ও ফেনিতে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশের যৌথ বাহিনী। রংপুর ও সুনামগঞ্জেও জামাত-শিবিরের জঙ্গিদের ধরতে বড়সড় পুলিশি অভিযান হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেনা মোতায়েনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে প্রতি রাতেই বেশ কিছু দুষ্কৃতী ছিটমহলগুলিতে ঢুকছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে খবর এসেছে। ‘ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটি’-র সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, পাঁচ-ছ’টি ছিটমহলে ডাকাতি-ছিনতাই হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। অনুপ্রবেশকারী দুষ্কৃতীদেরই এ জন্য দায়ী করছেন বাসিন্দারা। কোথাও কোথাও এখানকার জামাত-সমর্থক পরিবারগুলি মোটা অর্থের বিনিময়ে দুষ্কৃতীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে বলেও খবর।
রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া একতরফা ভাবে বিলটি পেশ করার অর্থ জোর করে একটি বিষয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অসম, ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উপরেও চাপিয়ে দেওয়া। আমরা এটা মানছি না, মানছি না, মানছি না। আমাদের রাজ্যের এক ইঞ্চি জমিও দেওয়া হবে না।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.