স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সায় দিয়েছিল রাজ্যই
রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি এই অভিযোগ তুলে গত সোমবার ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি সংসদে পেশ করতে দেয়নি তৃণমূল। কিন্তু ঘটনা হল, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার ঠিক তিন মাস পরে বিদেশসচিবকে চিঠি লিখে ওই খসড়া চুক্তিতে সায় দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ।
স্থলসীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে রাজ্যের সম্মতি চেয়ে ২০১১ সালের ১৫ অগস্ট চিঠি (ডিও লেটার নম্বর ১৪৩৪০/এফ এস/২০১১) পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই। সেই চিঠির উত্তরে ২০ অগস্ট সমরবাবু লেখেন, ‘খসড়া চুক্তির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সম্মতির কথা আমি আপনাকে জানাচ্ছি’।
তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল সাংসদরা সে দিন রাজ্যসভায় বিলটি পেশে বাধা দিলেন কেন? মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এই চিঠিটি যখন পাঠানো হয়েছিল, তখন সবেমাত্র আমরা সরকারে এসেছি। চিঠির খসড়া তৈরি হয়েছিল আগের সরকারের সময়ই। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেই খসড়া অনুযায়ী চিঠিটি চলে গিয়েছে এবং সেটির বক্তব্যে বাম সরকারের মতামতেরই প্রতিফলন থেকে গিয়েছে।” তাঁর দল চিরকালই রাজ্যের জমি অন্যকে দিয়ে দেওয়ার বিরোধী বলেই জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এই চিঠি প্রকাশ্যে আসায় স্থলসীমান্ত চুক্তি বিতর্কে নতুন ইন্ধন জুগিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠির বক্তব্য থেকে রাজ্য সরকার এ ভাবে সরে আসতে পারে কি না। তা ছাড়া, রাজ্যকে অন্ধকারে রাখার যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে, তা-ও তো ধোপে টিকছে না! রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েনের জবাব, “ওটা আমলাস্তরের একটা চিঠি। এক জন সচিবকে লেখা আর এক সচিবের। যার রাজনৈতিক ছাড়পত্র ছিল না। সময় গড়িয়ে গিয়েছে। এখন রাজনৈতিক অনুমোদন প্রয়োজন।”
যদিও বিষয়টি নিয়ে সর্বদল বৈঠকে তৃণমূল চুক্তির বিরোধিতা করেনি বলেই দাবি সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন বিলটিকে সমর্থন করেছিল, তখন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট ছিল। এখন জোট ভেঙে যাওয়ার পরে তৃণমূল কেন নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছে, সেই উত্তর তাদের দেওয়া উচিত। কিন্তু এই চুক্তি হলে স্থানীয় বাসিন্দা, বিশেষ করে ছিটমহলের মানুষের সুবিধা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য, স্থলসীমান্ত চুক্তি হলে রাজ্যের লাভ নয়, লোকসানই হবে। কারণ, ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১টি, যার মোট এলাকা প্রায় ৭ হাজার একর। আর বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, তার জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার একর। ফলে ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর, কিন্তু দিতে হবে ১৭ হাজার একর।
যার উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে বলা হচ্ছে, খাতায়-কলমে ভারতকে বেশি জমি দিতে হলেও বাস্তবে ওই ১৭ হাজার একর জমিতে কখনওই ভারতের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ভারতীয় ছিটমহলগুলি বাংলাদেশের গভীরে অবস্থিত এবং সেগুলি কার্যত বাংলাদেশেরই দখলে থেকেছে। একই ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। ফলে ছিটমহল বিনিময় একটি পরিস্থিতিকে বৈধতা দেবে, যা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান।
তা ছাড়া, দিল্লি মনে করে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে। ফলে এই সুযোগে ছিটমহল-সহ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা অন্যান্য সমস্যার যদি সমাধান করে ফেলা যায়, তা হলে সেটা জাতীয় স্বার্থের পক্ষেও ভাল হবে। এত দূর এগিয়ে এখন স্থলসীমান্ত চুক্তি করা না-গেলে ভবিষ্যতে যে সেটা করা কঠিন হবে, সেই বার্তাও বারবার দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের কর্তাদের মত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীপথ বদলে যাবে, জনসংখ্যা, ভূগোল সবই বদলে যাবে। মাঝখান থেকে ছিটমহলের মানুষের দুর্দশা ঘুচবে না।
এই অবস্থায় সোমবারই মমতাকে ফোন করে চুক্তির ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। মমতা তাঁকে জানিয়েছেন মুকুল রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেককে নিয়ে গঠিত তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দল বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করবে। খুরশিদের সঙ্গে ডেরেকের কথা হয়েছে। কিন্তু সংসদের চলতি অধিবেশনে বিলটি পেশের ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার সম্ভাবনা যে নেই, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.