|
|
|
|
কামাখ্যায় ধূমাবতীর মন্দিরে মানতের বিশেষ পুজো মমতার |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • কামাখ্যা |
খবর চাপা থাকল না। এবং তারপরেই, প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের জন্য মায়ের হাত থেকে ‘দিদি’র কবলে চলে গেল কামাখ্যাধাম।
নিরাপত্তার অতি-কড়াকড়িতে অত্যুৎসাহী দর্শক, অশান্ত পায়রা, অবাধ্য ছাগলের দল কেউই মমতাদেবীর কামাখ্যা দর্শনে কোনও তালভঙ্গ করতে পারেনি। কেবল দুধের বালতিতে চোনা বলতে, একবার “মম্তা দিদি হায় হায়” ধ্বনি উঠেছিল বটে। তবে তাও দ্রুত সামলে নিয়েছে নিরাপত্তারক্ষীরা। আজ বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ কামাখ্যা পৌঁছন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বাংলা, অসম ও গোটা দেশের শান্তির প্রার্থনায় পুজো আর প্রলয়ের দেবী ধূমাবতীর মন্দিরে ‘বিশেষ মানত’ সেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌনে চারটে নাগাদ কামাখ্যা ছাড়েন।
শেষবার যখন কামাখ্যা এসেছিলেন তখন তিনি বিরোধী নেত্রী। মন্দির বন্ধ থাকায় কামাখ্যা দর্শনও হয়নি। এবার তাই আর কোনও ঝুঁকি নেননি। পুজোর দায়িত্বে থাকা পশুপতি পাণ্ডা জানান, মমতাদেবী ও সস্ত্রীক মুকুল রায় দুপুর পার করে এলেও মমতার নামে কামাখ্যা আর ধূমাবতীর কাছে বিশেষ পুজো সকালেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এর আগে দু’দফায় মুকুল রায় এসে পশুপতিবাবুর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। |
|
কামাখ্যা মন্দিরে মমতা। রয়েছেন মুকুল রায়ও। ছবি:উজ্জ্বল দেব। |
দিদি যে আসছেন সেই কথা গোপন রাখা হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন বা কামাখ্যা দেবোত্তর ট্রাস্টও কথা পাঁচকান করেনি। কিন্তু প্রদেশ তৃণমূলই সংবাদমাধ্যমে খবর দেয়। টিভিতে সেই খবর দেখে প্রায় ফাঁকা কামাখ্যাতেও বেলা গড়াতেই মানুষের ঢল নামে। বিমানবন্দরে দিদি নামার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু। যা কামাখ্যায় চরমে পৌঁছল। গুয়াহাটির ভাষ্করনগরের বাসিন্দা মিন্টু দাস দোকান বন্ধ রেখে সকাল এগারটা থেকে দিদি-দর্শনের জন্য দাঁড়িয়ে। দিদির আসার কথা শুনে বাংলা, বিহার, রাজস্থানের তীর্থযাত্রীরাও দিদিকে সামনে থেকে দেখবেন বলে চাঁদিফাটা রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। কামাখ্যার পাথুরে মাটিতে রোদে পা দেয় কার সাধ্যি! দিদি আসবেন তাই মন্দির চত্বরে জল ঢেলে ঠাণ্ডা করা হল। পাতা হল লাল কার্পেট। কামাখ্যার বিখ্যাত ছাগলবাহিনী হঠাতে তখন অসমের পুলিশ হিমসিম খাচ্ছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মানুষ যখন বিরক্তির শেষ সীমায়, তখনই বেগুনি পাড়ের সাদা শাড়ি আর গলায় ফুলাম গামোসার ঝলকটা মূল প্রবেশ পথ থেকে বাঁক নিয়ে কামাখ্যা লজের দিকে চলে গেল। স্লোগান উঠল ‘বাংলার দুর্গা দেবীর জয়’। তারপরের আধঘণ্টা কেবলই মমতার সঙ্গে জনতার চোরপুলিশ খেলা। লজ থেকে প্রথমে সৌভাগ্য কুণ্ডের জল মাথায় দিয়ে গণেশের কাছে প্রার্থনা সেরে দিদি ভিআইপি প্রবেশপথ দিয়ে মূল মন্দিরে ঢোকেন। সঙ্গে ছিলেন মূল পাণ্ডা পশুপতি শর্মা, নাগেশ্বর শর্মা ও অরূপপ্রসাদ শর্মা। ধাক্কাধাক্কিতে বিরক্ত প্রবীণ পুজারির আক্ষেপ, “দেবীকে দেখার চেয়ে মানবীকে দেখতেই বাড়াবাড়ি চলছে। বলিহারি!”
পুজো সেরে ফের সাংবাদিকদের ফাঁকি দিয়ে অন্য দরজা দিয়ে বের হলেন তিনি। চললেন কামাখ্যা দেবোত্তর ট্রাস্টের অফিসে। সেখানে সৌজন্য সাক্ষাতের পরে মমতাদেবী, সস্ত্রীক মুকুল রায়, অসমে তৃণমূলের একমাত্র বিধায়ক দীপেন পাঠক, প্রদেশ তৃণমূলের প্রচার সম্পাদক কৈলাশ শর্মারা চললেন ধূমাবতী মন্দিরের দিকে। কামাখ্যাকে ডান দিকে রেখে নীচে নামতে হয় অনেকটা। ভিআইপি দরজার পাশেই গনেশ মূর্তির সামনে তাল কাটল। এতক্ষণের জয়ধ্বনি, মুগ্ধতার স্থানে হঠাৎ নারীকণ্ঠে স্লোগান ‘মম্তা দিদি হায় হায়’। দেখা যায় অনেক উঁচুতে, পাথরের উপরে দাঁড়ানো এক মহিলা, বললেন, “হাম বিহার সে আয়ি হে। মম্তা দিদিকো বহত কুছ বোলনা হ্যায়।” মমতা পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলেন। পুলিশ দ্রুত মহিলাকে সরিয়ে দিল। সপ্তম মহাবিদ্যা ধূমাবতীর উদ্দেশে মমতাদেবীর বিশেষ মানতের পুজো ছিল। পাণ্ডারা জানালেন, দিদি প্রথমে বাংলার নামে, পরে অসম এবং গোটা দেশের নামেই পুজো মানত করতে বলেছেন। অবশ্য প্রলয় ও অশান্তির দেবীকে তুষ্ট করার জন্য বিশেষ পুজোর মানত কী ছিল তা প্রকাশ করেননি পাণ্ডারা।
এরপরে লজে খানিকটা বিশ্রাম নিয়েই ফেরার পথ ধরলেন মমতা। কামাখ্যায় দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভাঙা অসমীয়ায় মমতা বলেন, “অসমত আহি মোয় বহোত খুশি হোইসু। আবার আসব। আগেরবার মন্দির বন্ধ থাকায় ফিরে গেছিলাম। এবার সাধ মিটল।” কৈলাশ শর্মা বলেন, “দিদি পুজোর আগে-পরে ফের অসমে আসবেন বলেছেন। লোকসভা ভোটের জন্য দলীয় কর্মীদের তৈরি থাকতেও বলেছেন।” |
|
|
|
|
|